প্রার্থী বাছাই ও আসন বণ্টন: বিরোধী মতিগতি দেখে আ’লীগের সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ১১:১৮ এএম

আবদুল্লাহ আল মামুন: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে বিভিন্নভাবে জরিপ, তৃণমূলের মতামত ইতিমধ্যে দলীয় হাইকমান্ডের হাতে। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা ও পৌর চেয়ারম্যানদের নিরুৎসাহ করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের গতিবিধি দেখে ১৪ দল ও মহাজোটের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন করবে আওয়ামী লীগ। শরিকরা কী চাহিদা বা দাবি নিয়ে দর কষতে পারে তা-ও প্রাথমিকভাবে বিবেচনায় নিয়ে রেখেছে দলটি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী বাছাইয়ে আনুষ্ঠানিকতা ও শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে কাজ শুরু হবে। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ এ প্রক্রিয়া শেষ হতে পারে বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আওয়ামী লীগ শতভাগ প্রস্তুত। শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয়টি কী অবস্থায় আছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারবেন, তিনি শরিক যে দলেরই হোন না কেন মনোনয়ন পাবেন। তফসিল ঘোষণার পর ১৪ দল ও মহাজোটের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী মনোনয়নের কাজে ব্যস্ত সময় অতিক্রম করছি।’

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। বিষয়টি আমলে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচন পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। আগামীকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ এবং দলীয় সংসদ সদস্যদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকার এবং নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে এ সভায় গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, জেলা এবং আসনওয়ারি ফাইল তৈরি করে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাঠ জরিপের রিপোর্ট এখন সমন্বয় করা হচ্ছে। সব রিপোর্ট মিলিয়ে দেখে সম্ভাব্য তিনজন সংসদ সদস্য প্রার্থীর নামের তালিকা চূড়ান্ত করার কাজও চলছে। নির্বাচনী কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বর্তমানে এ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ডকে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এই বোর্ডের প্রধান। পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকেই সংসদ সদস্য প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। ইতিপূর্বে প্রার্থী মনোনয়নে তৃণমূল আওয়ামী লীগের সুপারিশ গ্রহণ করা হলেও এবার এর গুরুত্ব কম থাকছে। বিভিন্ন সংস্থার মাঠের সরেজমিন জরিপের রিপোর্টকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর করা জরিপ রিপোর্টও দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে বিবেচনায় নেওয়া হবে। যাঁদের বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালান ব্যাপক দুর্নীতি, অন্যান্য সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে, তাঁরা দলীয় মনোনয়ন পাবেন না।

তফসিল ঘোষণার পর নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠক ডাকা হতে পারে বলে জানা গেছে। এরপর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হবে। যাঁরা ফরম কিনে জমা দেবেন শুধু তাঁদেরই সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকে। এরপর সব প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেওয়া হবে।

নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিটি কেন্দ্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হলেও তা পুরোপুরি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। প্রায় ৪১ হাজার এ ধরনের কমিটি গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। আগামীকাল অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় এসব বিষয়ে তাগাদা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা জেলায় অর্ধেকের বেশি কমিটি গঠন সম্পন্ন করেছি।’ বাকিগুলো দ্রুত গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।

আসন বণ্টন নিয়ে শরিকদের প্রাথমিক আশ্বাস দিয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে তাদের যাঁরা এমপি রয়েছেন, তাঁরা পুনরায় মনোনয়ন পাবেন। তবে তফসিল ঘোষণার পর সর্বশেষ রাজনৈতিক মেরুকরণ দেখে আসন বণ্টন ও আসন সমঝোতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এর মধ্যেই চাহিদার কথা লিখিতভাবে আওয়ামী লীগকে জানাতে শুরু করেছে ১৪ দল ও মহাজোটের শরিকরা। তবে সব মিলিয়ে তফসিল ঘোষণা এবং বিএনপি জোট কী ধরনের পদক্ষেপ নেয় তা-ও দেখার অপেক্ষায় আছে আওয়ামী লীগ ও তার শরিকরা।

এ ব্যাপারে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের চাহিদা আমরা আওয়ামী লীগকে জানিয়েছি। তবে আসন বণ্টনের বিষয়ে এখনো কোনো বৈঠক হয়নি।’

বর্তমানে আওয়ামী লীগ তাদের আদর্শভিত্তিক জোট ১৪ দলের নেতৃত্বে রয়েছে। এর বাইরে জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচনী মহাজোট করে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। গত ১৮ জুলাই ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে তৃণমূল বিএনপি চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয় জোটের প্রধান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের আলমগীর মজুমদার, সম্মিলিত ইসলামিক জোটের মাওলানা জিয়াউল হাসান, ইসলামিক ফ্রন্টের সৈয়দ বাহাদুর শাহ, কৃষক শ্রমিক পার্টির ফারহানা হক চৌধুরীসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, জাগো দল, একামত আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক জোটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা। তারাও মহাজোটে থাকবে।

এদিকে আওয়ামী লীগ সিপিবির নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। এই জোটে বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ আটটি দল। তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। যদি মহাজোটে নেওয়া না যায় তাহলে তাদের সঙ্গে আসন সমঝোতার চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ। প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোট, মোস্তফা আমীর ফয়সলের জাকের পার্টি, অলি আহমেদের এলডিপিকেও মহাজোটে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি ইস্যুতে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এই সুসম্পর্ক তারা নির্বাচনেও কাজে লাগাতে চায়। সূত্র: কালেরকন্ঠ।

বিডি২৪লাইভ/এমআর

 

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: