ভোট হারানোর আশঙ্কা!

প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:২০ পিএম

সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও চাকুরি প্রত্যাশীরা দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন করে আসছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার সময় তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে নির্বাচনী ইশতেহারে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করলেও তা বাস্তবায়ন করেনি। 

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই আওয়ামী লীগের নিজস্ব ওয়েবে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও আদৌ বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৯১ সালের আগে দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ বছর। ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে সেটা বাড়িয়ে করা হয় ৩০ বছর। এরপর ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সরকারি চাকরিতে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়স দুই বছর বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়স এক বছর অবসরের বয়স বাড়ানোর কারণে সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের সংখ্যা কমে যায়। ফলে চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি পাওয়ার পথ সংকুচিত হয়। পাশাপাশি একদিকে চাকরিতে তীব্র প্রতিযোগিতা, নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা, আরেক দিকে শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরি পেতেও অনেকের দীর্ঘ সময় লেগে যায়। 

এ জন্য অবসরের বয়স বাড়ানোর পর থেকেই জোরালোভাবে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন একযোগে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থী ও চাকুরি প্র্রত্যাশীরা। তাঁরা মানববন্ধন, অনশন, প্রতীকী ফাঁসি, বয়স শিকলে বাঁধা, কফিন, গ্রাজুয়েট পোষাকে বয়সকে শিকলে বাঁধা, মশাল মিছিল, মোমবাতি প্রজ্বলন, বিক্ষোভ কর্মসূচি, বয়সকে কারাগারে বন্দী, অবস্থানসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছেন। মহান জাতীয় সংসদেও বিষয়টি নিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে বহুবার আলোচনা হয়। 

মাননীয় বিরোধী দলের নেত্রীসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য  জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য একটি বেসরকারি বিল উত্থাপন করেন যশোর-৪ আসনের এমপি মনিরুল ইসলাম। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ করা হোক এই প্রস্তাবের সাথে ৯ জন সদস্য অবিলম্বে বাস্তবায়নের কথা যোগ করতে বলেছেন এবং একজন বাস্তবায়ন ও কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন।  

বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও স্পিকার তা স্থগিত করে রাখেন। গত জুনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৯ তম সভায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার সুপারিশ করা হয়। এর আগে কমিটির ২১ তম সভায় ৩২ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছিল। সরকারের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

গত ২০ আগস্ট মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর এ বিষয়ে খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আলোচনা হচ্ছে, প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি, খুব তাড়াতাড়ি হবে। খুব তাড়াতাড়িই জানতে পারবেন। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হলেও অবসরের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা নেই” বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, “এন্ট্রিটা বাড়তে পারে আশা করছি”। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “স্থায়ী কমিটি সুপারিশের ভিত্তিতেই প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছে”। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচনা শেষ করেছেন, এখন আমরা প্রস্তাব তৈরির কাজে হাত দেব”। এরই পরিপ্রেক্ষিতে  মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব গত ২৮ আগস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। এদিকে গত ১০ সেপ্টেম্বর পুনরায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার সুপারিশ করা হয়।  

কমিটি সূত্র জানায়, কমিটির একাধিক বৈঠকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ নির্ধারণ ও অবসরের বয়স বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। অগ্রগতি জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ইতোমধ্যে কমিটির সুপারিশ প্রস্তাব আকারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাবের কথাও উল্লেখ করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়াতে সম্মত আছেন বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অদ্যবধি এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সবোর্চ্চ গুরুত্ব সহকারে দ্রুততম সময়ে ফাইলের নিষ্পত্তি হয় সেখানে প্রায় দুই মাস অতিক্রম করলেও বয়স বৃদ্ধির ফাইলে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। 

বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সংসদীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত বৈঠক হয়নি।  সরকারে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরাও এ মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি গত ১৩/০৯/১৮ ইং তারিখ রাত ১০ টায় কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক সঞ্জয় দাস, যুগ্ম-আহবায়ক হারুন-অর-রশিদ,শফিকুর রহমান, ইমতিয়াজ, এম.এ. আলী, সোনিয়া ও লিউনা হক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সুযোগ্য সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারন সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সহযোগিতায় বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আবদুল হামিদ এর সাথে বঙ্গভবনে সাক্ষাত করেন। 

এই সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক গোলাম রাব্বানী মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে সাধারণ ছাত্রপরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটিকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং ৩৫ এর বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং গোলাম রাব্বানী মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বলেন বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে চলমান আন্দোলনের বিষয়টি অবহিত করেন ও চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ বছর করার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। এই সময় মহামান্য রাষ্ট্রপতি কথা গুলো শুনে খুব খুশি হোন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে ৩৫ করা হলে ছাত্র সমাজ অনেক উপকৃত হবে”। 

মহামান্য রাষ্ট্রপতি আরও বলেন “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি আবারও ৩৫ করার জন্যই বলবো তবে আমি যতটুকু জানতে পেরেছি প্রবেশের বয়সসীমা অবশ্যই বাড়বে তোমরা হতাশ ও ধৈর্য্যহারা হয়োনা”। প্রধানমন্ত্রীর উপর ভরসা রাখো। আশা করছি চলতি মাসের মধ্যে তোমরা ফলাফল পাবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মত হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় চরম ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করছে আন্দোলনকারীরা।  

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক হারুন-অর রশিদ বলেন, রাষ্ট্রপতির সুপারিশের পরও দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া সত্যিই হতাশাজনক। তাই তাঁরা দাবি আদায়ে আবারও রাস্তায় নেমে এসেছে । বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের সংগঠক এম.এ. আলী বলেন গত ১৮ অক্টোবর থেকে তারা শাহবাগে বিক্ষোভসহ প্রেসক্লাবে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। 

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি  উদ্যেক্তা ইমতিয়াজ বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে বয়সবৃদ্ধির বিষয়টি এবার মেনে নেবেন না। সরকারের বর্তমান মেয়াদের নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পূর্বেই তা বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচনের ঠিক পূর্ব মুর্হূতে যে তরুন ভোটারদের ভোটে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল সেই তরুনদের দাবি পূরণ না হলে ভোট ব্যাংকে প্রায় দুই কোটি তরুনের ভোট হারানোর আশংকায় থাকবে। 

বর্তমানে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ট সময়কাল অতিক্রম করছে বিধায় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করে ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে উন্নত দেশ গড়ে তুলতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের রূপকার জননেত্রী শেখ হাসিনা কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট সকলের দাবি অতি শীঘ্রই দাবি বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে চলমান ৪০তম বিসিএসে আবেদনের সুযোগ করে দিয়ে তরুনদের মন জয় করে নিবেন।

লেখক: মো: সাইফুল ইসলাম

খোলা কলামে প্রকাশিত লেখা লেখকের একান্ত মতামত। এর সঙ্গে বিডি২৪লাইভের কোন সম্পর্ক নেই।

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: