‘আমরা ইউএনও স্যারের বদলি চাই না’

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ০২:৪৬ পিএম

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. শহিদুল ইসলামকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বদলির জন্য আদেশ জারি হয়। গত সোমবার সন্ধ্যায়। এই আদেশ জারির পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জনমনে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ। ইউএনও এর বদলি আদেশ প্রত্যাহার করে পুনরায় দীঘিনালায় বহালের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্যার চলে গেলে এই উপজেলার কি হবে? স্যার এই উপজেলার অনেক উন্নয়ন করেছেন, গরীব লোকদেরও নিয়মিত খোঁজ খবর রেখেছেন। স্যার অনেক ভাল মানুষ। এখান থেকে আমরা স্যারকে যেতে দেবনা।’ আবেগজনিত কন্ঠে উপরোক্ত কথা গুলো বলছিলেন দীঘিনালা উপজেলার বাসিন্দা মো. আক্তার হোসেন।

দীঘিনালার রেডক্রিসেন্ট কর্মী মো. আল আমিন বলেন, ‘বন্যা দুর্গতদের বাঁচাতে পাকা সড়ক পাড় করে নৌকা নিতে এবং নিজ হাতে ঝাড়ু নিয়ে রাস্তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পালন করে, যে ইউএনও এভাবে শ্রম দেন, তাঁর বদলির আদেশ আমরা কিভাবে মেনে নেই’।

দীঘিনালা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইউএনও স্যার আমাদের কলেজের বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ড গুলো বাস্তবায়ন করতে সর্বদা উৎসাহিত করতেন। তিনি আমাদের কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়নে আমাদের স্যারদেরকে সবসময় পরামর্শ দিতেন। আমাদের কলেজের সুন্দর্য্যমন্ডিত গেট নির্মাণেও ইউএনও স্যারের অনেক অবদান রয়েছে। সার্বিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আমরা ইউএনও স্যারকে আমাদের উপজেলায় আবারও রাখতে চাই’।

দীঘিনালা উপজেলা সনাতন ছাত্র যুব পরিষদের সাবেক সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক জীবন চৌধুরী উজ্জ্বল জানান, ‘শেখ শহিদুল ইসলাম স্যারে নেতৃত্বে এলাকায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। ইউএনও স্যার উপজেলার সকল নাগরিকের সুখ দুঃখে ছুটে গেছেন। বর্তমানে ইউএনও স্যার উপজেলায় প্রথমবারে মত গণপাঠাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ইউএনও বদলি হয়ে গেলে অনেক কাজই অসমাপ্ত থেকে যাবে। অনেক স্বপ্নই অবাস্তবায়িত রয়ে যাব’।

‘দীঘিনালা সরকারি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক মো. দুলাল হোসেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ই্উএনও) শেখ শহিদুল ইসলাম অল্প সময়ে উপজেলাবাসীর প্রিয় মানুষে পরিনত হয়েছে। সোমবার সকালেও স্যারের সাথে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করলাম আর বিকেলে স্যার বদলি! দীঘিনালার উন্নয়নে স্যারের ব্যাপক পরিকল্পনা ছিল ভাবছি রাস্তার দুই পাশে ফুলের বাগান সৃজন করবে ? স্বপ্নযাত্রায় লাইব্রেরি ? জনসাধারণের সাথে মিলেমিশে রাস্তাঘাট পরিদর্শন ? এলাকার যুব সমাজকে নিয়ে বিকেলে ফুটবল খেলা রাতে ব্যাডমিন্টন ? অসংখ্য ভালো কাজের সাথে জড়িত ছিলেন মো. শেখ শহিদুল ইসালাম স্যার। অনুরোধ করি কর্তৃপক্ষকে আরো কিছু দিন ইউএনও স্যারকে স্বপদে দীঘিনালায় রাখা হোক’।

সোমবার সন্ধ্যায় বদলির আদেশ আসার পর থেকে এভাবেই একের পর এক মন্তব্য ফেসবুক স্ট্যাটাসে ইউএনও বদলির বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে জনতা। দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ শহিদুল ইসলামের বদলীর আদেশ বাতিলের দাবিতে আজ মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ১০টায় ‘দীঘিনালা উপজেলা সাধারণ জনগণ’ এর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালিত হয়।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নিবার্হী কমকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে জনবান্ধব উদ্যোগে বদলে যায় দুর্গম দীঘিনালা উপজেলার চিত্র। প্রায় দেড় বছরে দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পাহাড়ি বন্যা মোকাবেলায় ব্যাপক কর্মদক্ষতায় পরিচয় দেন তিনি । ইউএনওর বুদ্ধিমত্তায় বন্যায় আটকে পড়াদের দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ইউএনও শেখ শহীদুল ইসলামের এমন উদ্যোগ প্রশংসার পাশাপাশি মানুষের ভালোবাসা কুড়িয়েছে।

দুর্গম পাহাড়ি উপজেলা হিসেবে দীঘিনালার চারটি বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালু করেন তিনি। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জরাজীর্ণ পরিত্যাক্ত জায়গায় ‘স্বপ্নযাত্রা’ নামে নান্দনিক রেস্তোরাঁয় চালু হবার পর পুুরো উপজেলা চত্বর দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠে। দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে প্রশাসনিক কাজে গতি আসে। ইউএনওর উদ্যোগ ও সরকারের সহযোগিতায় উপজেলাজুড়ে সড়কে সৌর বিদ্যুতের বাতি স্থাপিত হয়।

উপজেলার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত দীঘিনালা সরকারি ডিগ্রী কলেজ মোড়ে স্থাপিত হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’। কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয় উপজেলার খেলাধুলার বিকাশে আন্তরিক ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন তিনি। উপজেলার ছাত্র-যুবদের খেলাধুলায় আগ্রহী করে তুলতে নিজেই প্রতিদিন বিকেলে ফুটবল খেলায় অংশ নেন। রাতে সকলকে নিয়ে খেলেছেন ব্যাডমিন্টনও।

বিডি২৪লাইভ/এমকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: