বদলে গেছে নাটোর রেল স্টেশনের দৃশ্যপট! 

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:০১ পিএম

নাটোর রেল স্টেশন নিয়ে সবসময়ই যাত্রী সাধারণ ও স্থানীয়দের ছিলো নানা অভিযোগ। যাত্রীরা বারবারই দাবি করে আসছিলেন, সেখানে মেলে না তাদের প্রাপ্য সেবাটুকু। স্থানীয়রাও সোচ্চার ছিলেন স্টেশনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে রমরমা মাদক বাণিজ্য নিয়ে। তবে মাত্র কয়েক বছরেই বদলেছে এসব দৃশ্যপট। 

প্রায় শত বছর পর বর্তমান শেখ হাসিনার সরকারের সময় নাটোর রেলওয়ে স্টেশনের উন্নয়নসহ সংস্কার কাজ করা হয়েছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব হওয়ায় এই সরকারকে অভিনন্দন জানাতে কার্পণ্য করছেন না কেউ। এই সরকারের গত দশ বছরে নাটোরে যে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে নাটোর রেল স্টেশন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। 

নির্মাণ করা হয়েছে দুটি প্লাটফরমের যাত্রী সেড বা  ছাউনি। একই সাথে পুরাতন শেডসহ নতুন শেড উঁচু করা হয়েছে। বর্ধিত করা হয়েছে প্লাটফর্মের দৈর্ঘ্য। প্লাটফর্মে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থাসহ বৈদ্যুতিক পাখা স্থাপন করা হয়েছে। যাত্রীদের রেল লাইন পারাপরের জন্য পুরাতন ঝুঁকিপুর্ণ ওভারব্রিজ সংস্কারের মাধ্যমে নতুন করা হয়েছে। ভবনগুলো সংস্কার করা হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। টাইলস দিয়ে সাজানো ভবনগুলিতে লাগানো হয়েছে আধুনিক দরজা-জানালা। প্লাটফরম সংলগ্ন রেল লাইনে নতুন করে লাগানো হয়েছে কংক্রিটের স্লিপার। রেলস্টেশনের ওয়াকওয়েও বর্ধিত করা হয়েছে। 

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে প্রকৌশলী বিভাগ সূত্রে বলছে, প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে নাটোর রেল স্টেশন সংস্কারসহ উন্নয় কাজ করা হয়েছে। স্টেশনের ১ নম্বর প্লাটফরম দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ শ ফিট  এবং ২ নম্বর প্লাটফরমের দৈর্ঘ্য ২শ’ ফিট বাড়ানো হয়েছে। 

এছাড়া স্টেশনের জরাজীর্ণ ভবনগুলি সংস্কার করাসহ টাইলস বসিয়ে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। যাত্রীদের পছন্দ অনুযায়ী টিকিট কাউন্টারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। কাউন্টার চত্বরে টাইলস দিয়ে সৌন্দর্য্যবর্ধন করা হয়েছে। ১ নম্বর প্লাটফর্মের সেড উঁচু করা সহ নতুন রঙ্গিন টিন ও ফ্রেম লাগানো হয়েছে। 

এছাড়া ২ নম্বর প্লাটফরমে নতুন সেড নির্মাণ করা হয়েছে। যাত্রীদের রেল লাইন পারাপারে পূর্বের জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ওভারব্রিজ সংস্কারসহ উন্নয়ন করা হয়েছে। সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ বসার চেয়ার ও বৈদ্যুতিক পাখা লাগানো হয়েছে। স্টেশন এলাকায় পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় আড়াইশ ফুট রেল লাইনের নতুন কংক্রিটের স্লিপার লাগানো হয়েছে। কংক্রিটের বসার আসন করা হয়েছে। 

নাটোর রেল স্টেশনের এই উন্নয়ন ও সংস্কার নিয়ে খুশি রেল যাত্রী সহ এলাকাবাসী। স্থানীয়দের মতে একশ বছরের বেশি সময় আগে বৃটিশ আমলে এই স্টেশন স্থাপনের পর যাত্রী সুবিধার জন্য এবারই প্রথমবারের মত সংস্কার বা উন্নয়ন কাজ করা হলো। 

ঢাকাগামী রেল যাত্রী নাসিম উদ্দিন বলেন, এখন নাটোর স্টেশন প্লাট ফরমে কোন দুর্ভোগ নেই। যাত্রীদের বিশ্রামাগারগুলোও করা হয়েছে মানসম্পন্ন। 

মাসুদুর রহমান নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, নাটোর রেল স্টেশনের সবকিছুই হয়েছে মান সম্পন্ন। এজন্য বর্তমান সরকারসহ স্থানীয় সাংসদ ধন্যবাদের দাবীদার। তবে দুভোর্গ কমলেও প্রত্যাশানুযায়ী আন্তনগর ট্রেনের আসন সংখ্যা বাড়েনি। নাটোরের ভিআইপি যাত্রিদের জন্য এসি আসন বা বাথ বরাদ্দ করা হচ্ছেনা। 

তবে স্থানীয়দের আভিযোগ, সংস্কার বা রক্ষাণাবেক্ষণের অভাবে ইতিমধ্যে রেলের স্টাফ কোয়াটারসহ অনেক ভূ-সম্পত্তি দখল হয়ে গেছে।

নাটোর রেল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার অশোক চক্রবর্তী জানান, দীর্ঘদিন পর হলেও যাত্রীদের দুর্বিসহ দুর্ভোগ লাঘবে এই উন্নয়ন যাত্রীদের প্রত্যাশা পুরণ হয়েছে। তবে আরো কিছু কাজ অসম্পন্ন রয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন হলে যাত্রীদের আর কোন ভোগান্তি থাকবে না। এছাড়া এলাকাবাসীসহ যাত্রীদের প্রত্যাশা রয়েছে ঢাকাগামী বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনের আসন সংখ্যা বাড়ানো সহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আসনের দাবি পূরণের। 

পশ্চিমাঞ্চল রেলের সান্তাহার অফিসের প্রকৌশলী নারায়ন প্রকাশ সরকার জানান, নাটোর রেল স্টেশনের উন্নয়ন কাজ প্রায় সম্পন্ন। যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল অনুরোধ কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় নাটোর রেল স্টেশনের উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। রেলের ভূ-সম্পদ বিভাগ অচিরেই অবৈধ দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করবে।
 
বিডি২৪লাইভ/এমকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: