কাজ করছেন ইউএনও, জানেন না ডিসি

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:১৪ পিএম

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প নামে কোন সরকারি কাজ শুরু হয়েছে কিনা জানা নেই জেলা প্রশাসকের। অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব উর রহমান দাবি করেন সরকারের নির্দেশেই প্রকল্পের কাজ হচ্ছে।

&dquote;&dquote;এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, গৃহহীনদের জন্য কোন আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হলে আমার জানার কথা। কিন্তু গফরগাঁওয়ে প্রকল্পের বিষয়টি আমার জানা নেই। মানুষের জমি বেদখল করে আশ্রয়ণ প্রকল্প হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

&dquote;&dquote;উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব উর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কয়েকটি স্পেশাল প্রকল্পের মধ্যে গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প হচ্ছে অন্যতম। এ নিয়ে কারও কোন কথা বলার সুযোগ নেই। আমরা টাংগাব গ্রামে ১নম্বর খাস খতিয়ানে প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেছি। এখানে কারও যদি কোন ব্যক্তি মালিকানা জমি থাকে তাহলে কাগজ পত্র নিয়ে আদালতে গেলে তার সমাধান পাবে।

&dquote;&dquote;গফরগাঁও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল আলীম বলেন, প্রায় ২৯ একর খাস জমিতে প্রয়াত সাংসদ আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ আশ্রয়ণ প্রকল্প ৪, ৫ এবং ৬ এর মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। পরে সেনাবাহিনী ঘর তৈরির কাজ করবে। এখানে কোন ব্যক্তি মালিকানা জমি নেই। এর আগে ২০১৪ সালে ওই খানে প্রয়াত সাংসদ আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ আশ্রয়ণ প্রকল্প ১ এবং ২ এর কাজ সম্পূর্ণ হয়।

&dquote;&dquote;ময়মনসিংহের গফগাঁওয়ে গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের নামে স্থানীয় প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রায় ৫৭ একর আবাদি জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলার টাংগাব ইউনিয়নের টাংগাব গ্রামে প্রয়াত সাংসদ আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ আশ্রয়ণ প্রকল্প ৪, ৫ এবং ৬ নির্মাণের নামে কৃষকের ফসলি জমি নষ্ট করে মাটি ভরাটের কাজ হচ্ছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব উর রহমানের দাবি সরকারের নির্দেশেই প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি অবগত নয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

টাংগাব গ্রামের কৃষক ওয়াজির হাসান মো. সেলিম অভিযোগ করে বলেন, গত ১৯ অক্টোবর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন সাগর এবং তার লোকজন পুলিশকে সাথে নিয়ে এলাকাবাসীকে কিছু না বলেই ভেটো দিয়ে ফসলি জমিতে মাটি কাটার কাজ শুরু করেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা মাটি কাটার কারণ জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন- প্রশাসনের নির্দেশেই প্রয়াত সাংসদ আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ আশ্রয়ণ প্রকল্প ৪, ৫ এবং ০৬ নির্মাণের লক্ষেই মাটি কাটা হচ্ছে। কেউ বাধা দিলে হামলা মামলার হুমকিও দেন চেয়ারম্যান।

&dquote;&dquote;তিনি বলেন, প্রকল্পের মধ্যে আমার পৈত্তিক ৭ একর জমি রয়েছে। এখান থেকে প্রায় ৩ একর জমি বর্গাও দিয়েছি। এইটুকু জমি প্রকল্পের মধ্যে চলে গেলে আমরা ভাতে মারা যাব।

কৃষক কফিল উদ্দিন বলেন, এখানে আমাদের ৫ ভাইয়ের ৫ একর সাফ কবলা জমি রয়েছে। ৪ বছর আগে আমাদের জমির পাশেই দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্প হয়েছে। সেখানে অনেক ঘর খালি পড়ে আছে। ঘরে উঠার মতো কোন লোকজন নেই। এই এলাকার সব মানুষেরই চলার মতো জায়গা জমি আছে। কিন্তু আমাদের ফসলি জমি নষ্ট করে পূর্ব নির্দেশনা ছাড়াই মাটি কাটা হচ্ছে। আমাদের এই জমিটুকু চলে গেলে আমরা কি করে বাল-বাচ্চা নিয়ে চলব।

&dquote;&dquote;স্থানীয় মৌসুমী ব্যবসায়ী আজিজুল হক বাচ্চু বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন আশ্রয়ণ প্রকল্প ১ এবং ২ এর দক্ষিণ অংশে ৩৫ একর এবং উত্তর অংশে ২২ একরের মত ফসলি জমিতে প্রকল্পের নামে লুটতরাজ চালাচ্ছে। এখানে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে কিছু জমি খাস খতিয়ানের মধ্যে পড়তে পারে; বাকি সব জমিই আমাদের মালিকানা। আমরা বাঁধা দিতে গেলে চেয়ারম্যানের লোকজন আমাদের বাড়ি ছাড়া করবে বলে হুমকী দেয়। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও আমরা কোন সহযোগীতা পাচ্ছিনা।

ইব্রাহিম নামে এক কৃষক বলেন, প্রকল্পের নামে দখল হয়ে যাওয়া জমির মধ্যে টাংগাব গ্রামের দুই শতাধিক কৃষক বারো মাসেই কোন না কোন ফসল উৎপাদন করি। জমিতে ভালো ফসল হওয়ায় জমির মূল্য শতাংশ প্রতি দেড় লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত। সরকার আমাদের জমি নিলে বাজার মূল্য দেওয়ার কথা কিন্তু উল্টো আমরা চেয়ারম্যানের হুমকির মধ্যে আছি।

&dquote;&dquote;বর্গাচাষী নুরুল ইসলাম বলেন, সেলিম ভাইয়ের কাছ থেকে ৭০ শতাংশ জমি ২০ হাজার টাকা দিয়ে বর্গা নিয়ে লাউ ও টমেটো চাষ করেছি। ফলনও ভাল ধরছিল। কিন্তু প্রকল্পের নামে মাটি কাটায় আমার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে প্রকল্প হবে জানলে আমি জমি বর্গা নিতাম না।

আরেক বর্গাচাষী সোহরাব উদ্দিন বলেন, মানুষের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে আমার সংসার চলে। ব্রহ্মপুত্রের চরে ফসল ভাল হওয়ায় এখানে জমিও সহজে বর্গা পাওয়া যায় না। আমি ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ৬০ শতাংশ জমি কফিল উদ্দিনের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে কফি এবং টমেটোর চাষ করি। প্রকল্পের নামে আমার জমিতে মাটি কেটে সব ধ্বংস করে দিয়েছে চেয়ারম্যান। আমরা ভয়ে প্রতিবাদও করতে পারছি না।

&dquote;&dquote;সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, কোন উন্নয়নমূলক প্রকল্প হলে প্রশাসনের লোকজন আগে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বসে পরামর্শ করে তারপর কাজ শুরু করে। কিন্তু এখানে কোন প্রকার সাইনবোর্ড টানানো ছাড়াই তরিঘরি করে ফসলি জমি নষ্ট করে মাটি কাটা হচ্ছে। এখানে সরকারী প্রকল্পের নামে সাধারন মানুষের জমি দখল করা হচ্ছে।

&dquote;&dquote;টাংগাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন সাগর বলেন, ৩টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের শুধু মাটি ভরাটের কাজ পেয়েছি। এখানে কার কি সমস্যা সেটা আমার জানার বিষয় না।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: