বাসর রাতেই নববধূর সন্তান প্রসব!

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:১০ পিএম

কুমিল্লার লাকসামে বাসর রাতে এক নববধূর সন্তান প্রসবের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে, গত রোববার (১৮ নভেম্বর) উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের আমদুয়ার পূর্বপাড়া গ্রামে জাকির হোসেনের বাড়িতে।

চাঞ্চল্যকর এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক কৌতুহলী নারী-পুরুষের ভিড় জমে যায়। বর্তমানে নববধূ ফারজানা আক্তার নবজাতক কন্যা সন্তানকে বিপাকে পড়েছেন।

বিয়ের আগে পার্শ্ববর্তী বাড়ির পারভেজের সাথে দৈহিক সম্পর্ক, বিয়ের দিন থেকে পলাতক থাকায় কন্যা সন্তান নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে ফারজানা।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার একই ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের উত্তরপাড়ার দুলাল মিয়ার কন্যা ফারজানা আক্তারের (১৮) সাথে আড়াই লাখ টাকা দেনমোহরে আমদুয়ার গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে দেলোয়ার হোসেনের (২০) বিয়ে হয়।

বিয়ের পরদিন ছেলের বাড়িতে বৌভাত অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। এতে কনে পক্ষের শতাধিক অতিথি যোগ দেয়।

বিয়ের দু’দিন পর শনিবার রাতে ফুলশয্যার আয়োজন করে বরের বন্ধুরা। বাসর ঘরেই নববধূর পেট ব্যাথা শুরু হলে তাকে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য স্বামীর বাড়ির লোকজনকে চাপ সৃষ্টি করে নববধূ ফারজানা।

ভোরে ঘরের পাশে টয়লেটে গেলে নববধূ ফারজানা হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে। এ সময় বাড়ির লোকজন ছুটে এলে নবজাতকের কান্নার শব্দ পায়। পরে পরিবারের লোকজন টয়লেট থেকে নববধূ ও নবজাতককে উদ্ধার করে ঘরে নিয়ে যায়।

সোমবার দুপুরে উপজেলার আমদুয়ার গ্রামে বরের বাড়িতে গেলে নববধূর শাশুড়ি জাহারা খাতুন বলেন, প্রসবের পর নবজাতককে হত্যার চেষ্টা করেছিল ফারজানা। প্রসবের পর টয়লেটের কমোডে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করায় নবজাতকের মাথায় সামান্য আঘাতের চিহ্ন ও ময়লা লেগেছিল। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে নববধূর পিতার বাড়ির লোকজনকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে কৃষ্ণপুর গ্রামের ওয়ার্ড মেম্বার তোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন এসে নবজাতক ও নববধূ ফারজানাকে পিত্রালয়ে নিয়ে যায়।

জাহারা খাতুন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের সামাজিক মর্যাদাহানি হয়েছে। বিয়েতে আমাদের অনেক টাকা-পয়সা নষ্ট হয়েছে। যারা আমাদের এ ক্ষতি করেছে তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।’

তিনি আরও জানান এ বিয়েতে ঘটকালি করেছে পার্শ্ববর্তী লোলাই গ্রামের শামীমসহ আরও দু’জন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কনে পক্ষের লোকজন নববধূ ও নবজাতককে নিয়ে যাওয়াকালে বিয়ের সময় বরপক্ষের দেয়া গয়নাগুলো ফেরত দিয়ে বিয়ের খরচ বাবদ ৫৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

অপরদিকে, উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকায় কনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নবজাতকের মা ফারজানা বাড়ির ওঠানে একটি বিছানায় শিশু কন্যাটি নিয়ে বসে আছেন।

এ সময় চারদিক থেকে লোকজন এসে ওই নববধূ ফারজানার সন্তানকে দেখার জন্য ভিড় জমায়। 

ফারজানা বিডি২৪লাইভকে জানায়, আমি লেখাপড়া করছিলাম। একে অপরকে ভালোলাগার সূত্র ধরে পার্শ্ববর্তী বাড়ির সৌদি প্রবাসী মাহবুবুল আলম দুলালের ছেলে মেহেদী হাসান পারভেজের সাথে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে পারভেজ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দৈহিক সম্পর্ক সৃষ্টি করে।

পরবর্তীতে গর্ভবতী হয়ে পড়লে কাউকে না জানিয়ে পারভেজকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করি। বিয়ের কথা বলে কালক্ষেপণ করতে থাকে সে।

আমার পেটে তার সন্তান রয়েছে জেনে পারভেজ আমার অজান্তেই বিদেশে পাড়ি দেয়ার আয়োজন করে। পরে জানতে পারি প্রথম দফায় ফ্লাইট মিস হলেও গত বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) বিয়ের দিন সে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।

কান্না জড়িত কন্ঠে ফারজানা বলেন, ‘আমি এখন নবজাতক এ কন্যা সন্তান নিয়ে কোথায় যাব? আমি না পেলাম স্ত্রীর মর্যাদা, আর এ কন্যা শিশুটি না পেল তার পিতার অধিকার। আমার বাবা রিকশা চালিয়ে কোনো রকমে পরিবারের মুখে অন্ন জোগাড় করে। টানাপোড়েনের সংসার। আমরা অসহায়। গরিব হওয়ায় লোকজন আমাদেরকে টিটকারি করে। আমি সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে এ প্রতারণার বিচার চাই।’

এলাকাবাসী জানায়, ফারজানাকে বিয়ে করা থেকে রেহাই পেতে পারভেজ গা-ঢাকা দিয়েছে। ছেলের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় চাপে পড়ে ফারজানার পিতা দিনমজুর দুলাল মিয়া মেয়েকে অন্যত্রে বিয়ে দেয়ার আয়োজন করে। মেয়ের সম্মতি না নিয়েই গত বৃহস্পতিবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাও শেষ হয়।

তবে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি মহল তৎপর থাকার অভিযোগ উঠেছে।

ওয়ার্ড মেম্বার তোফাজ্জল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, খবর শুনে ফারজানা ও কন্যা সন্তানটিকে শশুরবাড়ি থেকে সামাজিকভাবে নিয়ে আসি।

এ বিষয়ে আজগরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন জানান, এ ঘটনাটি দুঃখজনক। মেয়ের পরিবার আইনি সহায়তা চাইলে সব রকম সহায়তা করবো।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: