ইশতেহারের খসড়া শেখ হাসিনার হাতে

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০১৮, ০১:৪৯ পিএম

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে থাকছে নানান চমক। বড় শহরগুলো ছাড়াও পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোকে এগিয়ে নিতে বড় চমকের ঘোষণা থাকবে ইশতেহারে। থাকবে মাদ্রাসায় কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা। কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলাও থাকবে নির্বাচনী অঙ্গীকার নামায়।

নতুন কর্মসংস্থান, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন, নারীদের স্বাস্থ্যসেবা, গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতির উন্নয়ন, চরাঞ্চলের মানুষ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি, প্রান্তিক জনগণের আধুনিক টেকনোলজির সব সুযোগ সুবিধা ও ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্র সম্পদ নির্ভর অর্থনীতির বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহারে প্রাধান্য পেতে পারে বলে জানিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।

চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইশতেহারের খসড়া তৈরি করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া বিষয়গুলো হলো– ডেল্টা প্ল্যান, ব্লু ইকোনোমি, তরুণদের ক্ষমতায়ন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সূত্র বলছে, এই ইশতেহার হবে মূলত উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের রোডম্যাপ।

আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্যরা বলছেন, আগামী বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) এই ইশতেহার চূড়ান্ত হবে। ওই দিন ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির বৈঠকে দলীয় সভাপতির পরামর্শে ইশতেহারে শেষ মুহূর্তের কিছু সংযোজন ও বিয়োজন করা হবে। নির্বাচনের ১০ থেকে ১৫ দিন আগে চূড়ান্ত ইশতেহার জনগণের সামনে তুলে ধরবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জানান, ইশতেহারের কয়েকটি খসড়া কাভার এবং শ্লোগান প্রস্তুত রয়েছে। তবে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ইশতেহারের শ্লোগান,কাভার এবং অন্যান্য সুনির্দিষ্ট তথ্য দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখার আগে কেউ বাইরে প্রকাশ করতে পারবে না। ইশতেহারের খসড়াটি চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি সেটি চূড়ান্ত করবেন। এরপর তা প্রিন্ট করা হবে।

সূত্র জানায়, ব্লু ইকোনমিতেও আছে একটি লক্ষ্য। সমুদ্রসীমা জয়ের পর সেখানকার সম্পদ কিভাবে ব্যবহার করা হবে,কিভাবে সমুদ্র সুরক্ষা করা হবে, এসবের দিক নির্দেশনাও থাকছে এবারের ইশতেহারে। প্রকৃতি ও পরিবেশ ঠিক রেখে সমুদ্র সম্পদকে কিভাবে কাজে লাগানো যাবে, তার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

তরুণদের কর্মসংস্থান প্রশ্নে তাদেরকে দুই ক্যাটাগরিতে ভাগ করে পরিকল্পনা পেশ করা হবে। দুই ক্যাটাগরির একটি হচ্ছে শিক্ষিত ও বেকার তরুণ। অন্যটি হলো, অল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত তরুণরা। যার জন্য যেমন প্রশিক্ষণ ও কর্মসূচি প্রযোজ্য, তার জন্য তেমনই প্রশিক্ষণ ও কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে থাকবে কঠোর ঘোষণা। দুর্নীতি প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেগুলোর উল্লেখ থাকবে ইশতেহারে।

সূত্র জানায়, এবারের ইশতেহারে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষিত বিষয়গুলোর অগ্রগতি তুলে ধরে আগামীর পরিকল্পনা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন জনসভায় আগামী প্রজন্মের জন্য উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে যেসব প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার করেছেন, সেগুলোও ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, প্রতিটি গ্রামকে নগর উন্নয়নের ছোঁয়ায় শহরে উন্নীত করার পরিকল্পনা।

এছাড়া, এবারের ইশতেহারে নতুন একটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পাশাপাশি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদকমুক্ত দেশ গড়া এবং উন্নয়ন-গণতন্ত্র-সুশাসনের ওপর আলোকপাত করা হবে। এবারও গত দুই ইশতেহারের মতো থাকবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ওপর বিশেষ গুরুত্ব।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড় কোটি নতুন ভোটার হয়েছে। আমরা এই বিষয়টির ওপর জোর দিচ্ছি। তারুণ্য ও নারী ভোটারদের জন্য ইশতেহারে থাকবে উদ্যোক্তা তৈরির পরিকল্পনা। এছাড়া সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি, কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা, মাদ্রাসাগুলোতে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করার দিকেও। পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যও দিকনির্দেশনা থাকবে।

এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা এবং নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা, ভারি শিল্প কারখানা নির্মাণ ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সাশ্রয়ী ব্যবস্থাপনা, দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, নারী উদ্যোক্তা তৈরি, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন, পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোর উন্নয়ন, মাদ্রাসায় কর্মমুখী শিক্ষা সংযোজন করা, সমুদ্র অর্থনীতির বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ও দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাবে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, প্রায় ৬০ পৃষ্ঠার খসড়ায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, কৃষি ও শিক্ষায় উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে অগ্রগতি, কর্মসংস্থান, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, একশটি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন, নারী উন্নয়ন ও নারী নীতি বাস্তবায়নের বিষয়গুলোসহ গত ১০ বছরে সরকার ও রাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো তুলে ধরা হবে। এর বিপরীতে, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখ করা যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি বা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, সেগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করে তুলে ধরা হবে ইশতেহারে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের যে চাহিদা সে চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে দলের আগামী নির্বাচনী ইশতেহারের খসড়া চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রায় ২ কোটি ভোটার রয়েছে। আধুনিক বাংলাদেশ গঠনে তাদের যে চাহিদা, তাদের সে বিষয় গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, আমার মনে হয় আগামী নির্বচনী ইশতেহারে নতুন প্রজন্মের কর্মসংস্থানের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের স্লোগান ছিল দিন বদলের সনদ, ২০১৪ তে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাছাড়া নতুন ভোটার বা তরুণদের জন্য থাকবে চমক। তাদের নানান বিষয় এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে থাকবে। নির্বাচনী ইশতেহার তৈরীর প্রক্রিয়া চলছে। এখনই সব কথা বলা সময় নয়। তবে অনেক চমক থাকবে।

আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর বলেন, গ্রাম-গঞ্জের মানুষের সাথে কথা বলে তাদের কাঙ্খিত চাহিদা অনুযায়ী ইশতিহার করা হচ্ছে। আশা করা যায়, আগামী ইশতেহারেও বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু চমকই থাকবে। যা সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার মান উন্নয়ন হবে। উন্নয়নের বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রধানমন্ত্রী একটি কথা বলেছেন গ্রামকে শহরে মত অধুনিকায়ন করতে হবে। বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগণ আধুনিক টেকনোলজির সব সুযোগ সুবিধা পাবে। ইশতেহার নিয়ে দলের মধ্যে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০০ বছরের একটি পরিকল্পনা করেছেন, যেটা ‘ডেল্টা ২১০০’ নামে পরিচিত।

বিডি২৪লাইভ/এসআই/এসএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: