মহাজোটে আ’লীগ-জাপা, ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি-গণফোরাম

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০১৮, ০২:১৮ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে হচ্ছেন কোন জোটের প্রার্থী এ নিয়ে ৪টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের জোর লবিং চলছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন অন্যান্য-দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার।

আগামী নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ। এ আসনে ড. রেজা কিবরিয়া প্রার্থীতা ঘোষণা দেবার পর থেকেই হিসাব নিকাশ উল্টে গেছে। কর্ম-কৌশলে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে ওই এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠী যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেন। এ আসন থেকে নির্বাচন করতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

বর্তমান এমপি জাতীয় পাটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছাড়তে নারাজ জাতীয় পার্টি।

জোটগত নির্বাচন হলে পাল্টে যাবে অনেক হিসাব-নিকাশ।

হবিগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি ইতিমধ্যে গণফোরামে যোগদান করেছেন। প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া তনয় ড. রেজা কিবরিয়াকে নিয়ে নবীগঞ্জ-বাহুবল নির্বাচনী এলাকায় আলোচনা শুরু হয়েছে।

দুই জোটের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

হেভিয়েট প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়াকে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন অপর জোটের প্রার্থী নেতাকর্মীরা। বিএনপির প্রভাবশালী নেতা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক শেখ সুজাত মিয়াও মাঠ ছাড়তে নারাজ। তিনি জোর লবিং করছেন নিজের দলের প্রার্থী হিসাবে থাকতে। তাকে অপর জোট থেকে প্রার্থী করার চেষ্টা চলছে এমন গুজব রয়েছে এলাকায়। তাকে বিকল্প ধারায় যোগদান করিয়ে অপরজোটের প্রার্থী করার চেষ্টা করছেন বিশেষ একটি মহল।

এ ছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্য (মহাজোট থেকে নির্বাচিত) জাতীয় পাটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবু এ আসনে দলীয় মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন। তিনি পুনরায় মহাজোট থেকে মনোনয়ন পেতে লড়াই করছেন। কাজেই এ আসনে আওয়ামী লীগ না জাপা মনোনয়ন পাবেন তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

আবার আওয়ামী লীগের পেলেও কে পাবে তাও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।

কেন্দীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বঙ্গবন্ধু সরকারের সাবেক মন্ত্রী তৎকালীন সংসদ সদস্য আলহাজ্ব দেওয়ান ফরিদ গাজী আসনের তিনবার নির্বাচিত এমপি ছিলেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ছিলেন ফরিদ গাজীর বড় ছেলে দেওয়ান শাহনেয়াজ গাজী মিলাদ তিনি মহাজোটের কারণে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে জাপার মুনিম চৌধুরী বাবু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ তাদের পুরানো এ আসনটি ফিরে পেতে অব্যাহত চেষ্টা চালাচ্ছে।

কে হচ্ছেন মহাজোট প্রার্থী এ নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতা চলছে। আওয়ামী লীগ থেকে ফরিদ গাজীর বড় ছেলে দেওয়ান শাহনেয়াজ গাজী মিলাদ ও নারী আসনের সংরক্ষিত এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী তীব্র আলোচনায় রয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী এই দুইজনের মধ্যে একজন হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

মহাজোটের প্রার্থীতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে কে হবেন মহাজোটের প্রার্থী। বিশেষ করে জাপার প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশী। এখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত সাংসদ আব্দুল মুনিম চৌধুরীর পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন চেয়ে চমক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা জাপার সভাপতি আলহাজ আতিকুর রহমান আতিক। হেভিওয়েট প্রার্থীদের নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

দলগত রফাদফায় হবিগঞ্জ জেলায় চারটি নির্বাচনী এলাকা থেকে যে কোনো একটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এক্ষেত্রে জাপার চেয়ারম্যান এরশাদ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আলহাজ আতিকুর রহমান আতিক ও আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবুকে প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত কোন আসনটি পাচ্ছে জাপা তা এখনো নিশ্চিত নয়।

মহাজোট থেকে বিশিষ্ট শিল্পপতি ও জাতীয় পাটির নেতা আলহাজ আতিকের প্রার্থিতা নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা জাপার আহ্বায়ক ডাঃ শাহ আবুল খায়ের বলেন, দল এবং জোটের সিদ্ধান্ত আমাদের মানতে হবে। দেখা যাক কি হয়। আমরা মহাজোটের সমীকরণে আসনটি পাবো আশা করি। দলের স্বার্থে, নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নের স্বার্থে বাবুর বিকল্প নেই।

নবীগঞ্জ পৌর জাপার সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা জাতীয় ছাত্রসমাজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুরাদ আহমদ বলেন, জাতীয় পাটির বর্তমান এমপি মুনিম চৌধুরী বাবু ভিন্ন দলের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করেছেন।

নবীগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন বলেন, এ ছাড়াও এখানে যেকোনো পরিস্থিতিতে বিএনপি জোটের প্রার্থী ড.রেজা কিবরিয়া শক্তিশালী প্রার্থী। আমরা তাকে নিয়ে আবারও বিএনপিকে এআসনটি উপহার দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদেরও জোটের যেকোন প্রার্থী আসলে দলের স্বার্থে তার পক্ষে কাজ করবো।

বাহুবল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল আহমদ কুটি বলেন, জোটগত নির্বাচনের বাতাস যখন বইছে রাজনৈতিক অঙ্গনে তখন নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রমসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি আসন পূর্ণ উদ্ধারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেয়ার দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান শেফু বলেন, বিএনপি নাকি ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী থাকছে এ আসনে এ বিষয়ে এখনো চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ১৯৯১ এর পর থেকে বিএনপিকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আলহাজ্ব শেখ সুজাত মিয়া। এর সুফল হিসেবে ২০১১ সালের উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি প্রার্থী চমক দেখান তিনি তাই আমরা তাকে চাই।

এ আসনে ১৯৭০ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবদুল আজিজ চৌধুরী, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান চৌধুরী ছানু মিয়া, ১৯৭৯ সালে নির্বাচিত হন জাসদ প্রার্থী মাহবুবুর রব সাদী, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইসমত আহমদ চৌধুরী, ১৯৮৮ সালে জাসদের অ্যাডঃ আবদুল মোছাব্বির চৌধুরী, ১৯৯১ সালে জাতীয় পাটির খলিলুর রহমান চৌধুরী রফি, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে টানা ৩ বার জয়ী হন আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী।

২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর দেওয়ান ফরিদ গাজী মৃত্যুবরণ করেন। পরে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপি প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জাপার এম,এ মুনিম চৌধুরী বাবু নির্বাচিত হন।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: