মানবসেবায় আজিজুর ও তার ‘জনকল্যাণ এন্টারপ্রাইজ’
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ষাটোর্ধ্ব অটোরিক্সা চালক আজিজুর রহমান পরার্থে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এখন নাটোরের মানুষের কাছে। জীবন সায়াহ্নে তিনি মানব সেবার এক ব্রত নিয়েছেন। এলজিইডি’র মাস্টার রোলে রোলার ড্রাইভার হিসেবে শ্রমজীবন শেষ করে তিনি এখন অটোরিক্সা চালান। তবে অটোরিক্সা চালিয়েও তিনি যা করছেন তা রীতিমতো অন্য চালকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও অবাক করেছে। যেখানে অটোরিক্সা চালকরা ভাড়ার জন্য যাত্রীদের সাথে বচসা করেন কখনও কখনও, সেই আচরণের বিপরীতে তিনি সপ্তাহে একদিন বিনা ভাড়ায় চালান অটোরিক্সা। আর অন্য দিনে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ, দরিদ্র ও প্রসূতি মায়েদের কাছ থেকে কোন ভাড়া নেন না। আর নাটোর শহর সহ পাশ্ববর্তী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী পরিবহনের জন্য নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে রেখেছেন হাসপাতালে।
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় কসবা মালঞ্চি এলাকায় বসবাস করেন আজিজুর রহমান। তার স্থায়ী ঠিকানা একইজেলার লালপুর উপজেলায়। বৈবাহিক সূত্রে বাগাতিপাড়ায় আছেন। তার চার সন্তান। বড় মেয়ে হ্যাপীকে এমএ পাশ করিয়ে পাত্রস্থ করেছেন। তার ছোট আইরিনকেও বিএ পাশ করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে বাপ্পী এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং ছোট ছেলে অপি এইচএসসি পরীক্ষার্থী। স্ত্রী ফরিদা পারভীন আর দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি সংসার চালাচ্ছেন অটো চালিয়ে।
রোলার ড্রাইভারের চাকরি শেষে তিনি গচ্ছিত টাকা দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আর অবশিষ্ট টাকা দিয়ে কিনেছেন একটি অটোরিক্সা। তিনি তার অটোরিক্সার নাম দেন ‘জনকল্যাণ এন্টারপ্রাইজ’। অটো চালিয়ে তার সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা আয় হয়। উপার্জিত ওই টাকা দিয়ে সংসার আর ছেলেদের পড়ার খরচ চালান।
অনেকদিন থেকেই মানুষের সেবা করার এক অদ্ভুত নেশা আজিজুর রহমানকে পেয়ে বসে। নিজের স্বল্প আয়ের পেশার মধ্যে খুঁজে পান মানব সেবার সন্ধান। তিনি বেছে নেন সপ্তাহে একদিন বিনা ভাড়ায় যাত্রী বহন করবেন। তারপর থেকেই শুরু করেন এ কাজ। আড়াই বছর ধরে তিনি একাজ করছেন। এখন বাগাতিপাড়া-নাটোর, বাগাতিপাড়া-আব্দুলপুর-লালপুর সড়কের নিয়মিত যাত্রীরা সকলেই জানেন আজিজুরের ফ্রি সার্ভিসের খবর। ফ্রি সার্ভিসের দিনে তিনি ভাড়া নেন না। এজন্য সপ্তাহে নির্দিষ্ট কোন দিন রাখেননি তিনি। তবে শুক্রবার বিশ্রাম নেন। আর অন্য ছয় দিনের একদিন ফ্রি সার্ভিস দেন। ওই দিন সকাল থেকেই অটোর সামনে লিখে রাখেন আজকে ফ্রি সার্ভিস।
তার এ মানবসেবা এখন সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন ছাড়িয়ে গেছে। তবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আর দরিদ্র গর্ভকালীন ও প্রসূতি মায়েদের ফ্রি সেবা দেন যে কোন দিন। সময় পেলেই স্কুল গেটে অপেক্ষা করেন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিনা ভাড়ায় বাড়ি পৌঁছে দিতে। আর নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে রেখেছেন হাসপাতালে। কল পেলেই ছুটে যান সেখানে। স্থানান্তরিত জরুরি রোগী পৌঁছে দেন শহরের অন্য হাসপাতালে। ফ্রি সেবা পাওয়া মানুষগুলোর দোয়া তার যেন বড় পাওয়া। তবে কিছুদিন থেকে শরীর তাকে সমর্থন করছে না। মাঝে মাঝে অসুস্থ থাকছেন এই ব্যতিক্রমী মানুষটি। তাই সেবা কার্যক্রমও মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে পড়ছে।
ষাটোর্ধ্ব আজিজুর রহমান বলেন, ‘মানুষের সেবা করার ইচ্ছা থাকলে যে কোন কাজের মাধ্যমেই তা করা যায়। সে ছোট-বড় যাই হোক। আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমি মানুষকে এই সেবা দেব।’
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন বাগাতিপাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মাসুম বলেন, একজন শ্রমজীবী হয়েও বৃদ্ধ আজিজুর রহমান প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ, দরিদ্র, ও প্রসূতি মায়েদের যেভাবে ফ্রি সেবা দেন তার নজিরবিহীন ঘটনা। এটি প্রকৃতপক্ষে পরার্থে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ারই দৃষ্টান্ত। সমস্যাসংকুল জীবনে একটু অন্যের কথা ভাবা এই আজিজুর রহমান সকলের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবেন।
বিডি২৪লাইভ/টিএএফ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: