আ’লীগের বিদ্রোহীদের দেয়া আল্টিমেটাম শেষ, এবার ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৩১ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ১২ দিন। এখনও ক্ষমতাসীন দলে ১৯ জনের বেশি বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের ১৭ ডিসেম্বর (সোমবার) আজকের মধ্যে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিতে হবে, নয়তো চিরজীবনের জন্য বহিষ্কার। এমন আলটিমেটামের শেষ দিন আজ। 

এদিকে সর্বশেষ ১৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বিদ্রোহীদের ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মহজোটের প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন জানিয়ে সরে না দাড়লে চূড়ান্ত ভাবে দল থেকে চিরজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮৯ জন প্রার্থী দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। এখনও ১৯ জনের উপরে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। এদিকে বিদ্রোহীরাও যেকোন মূল্যে নির্বাচনে অশংগ্রহণের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত নিজেদের অবস্থানে অবিচল রয়েছে।

এদিকে ১৭ ডিসেম্বর আজ রাত ১২টার মধ্যে এই বিদ্রোহীরা তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের শান্ত করতে খোলা চিঠি দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, আপনার কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে আপনার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে মহাজোট প্রার্থীকে বিজয় করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন। আপনার ত্যাগ, শ্রম ও আন্তরিকা সব কিছু আমার বিবেচনায় আছে। আমি নিশ্চিত আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আমাদের বিজয় রথ থামাতে পারবে না ইনশাল্লাহ। নৌকাকে পরাজিত করার সাংগঠনিক শক্তি কারও নেই। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খোলা চিঠিতে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে বিদ্রোহীদের কাজ করারও আহ্বান জানান।

দলীয় সুত্রে জানা গেছে, সারাদেশে এখনও আওয়ামী লীগের অন্তত ১৮ থেকে ২০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদের মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে দল অথবা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত কয়েকজন এমপিও রয়েছেন। ফলে ওইসব আসন নিয়েই বেশি উদ্বেগ রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী বিডি২৪লাইভের এ প্রতিবেদককে বলেন, দল যদি মনে করে তাদের চাপে আমরা প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিব। তবে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী নিশ্চিত পরাজয় বরণ করবে। দলের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছি, বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছি অথচ দলে বহু দুর্নীতিবাজ এমপি ও অনেক অথিতি পাখিকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। অথচ সারাজীবন দলের জন্য কাজ করেও মনোনয়ন পাইনি। আমি কী দলের জন্য কিছুই করিনি? অযোগ্য হলে একটা কথা ছিল। আমি মনোনয়ন প্রত্যাহার করছি না বরং আমি বিদ্রোহী হলেও বিজয়ী হব। তাই আমি নির্বাচন করব।

ফরিদপুর-৪ (সদরপুর-ভাঙ্গা-চরভদ্রাসন) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। তিনি গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাজী জাফরউল্লাহর বিরুদ্ধে জিতেছিলেন। এবারের নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

নৌকার প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহর বিরুদ্ধে নিক্সন চৌধুরী লড়ছেন সিংহ প্রতীক নিয়ে। দলের কোনো পদে না থাকায় আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিষয়টি ততটা আমলে নিচ্ছেন বলে তার সমর্থকরা জানান। তিনি শেষ পর্যন্ত লড়াই করবেন বলেও জানা গেছে।

ময়মনসিংহ-৯ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ারুল আবেদিন খানের বিপক্ষে নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ২০০৮ সালে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম কুড়াল প্রতীকে নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও এই আসনের বর্তমান এমপি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য এ টি এম পিয়ারুল ইসলাম। এরইমধ্যে তিনি কোনোভাবেই নির্বাচন থেকে সরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করলেও সেখানে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আল আমিন মোল্লা সিংহ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসের প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের ছেলে পৌর মেয়র ফয়সাল বিপ্লবের স্ত্রী চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একতারা প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে আছেন।

নরসিংদী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন জহিরুল হক ভূঞা মোহন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়ী হন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। এবারও দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে সিংহ প্রতীকে লড়ছেন।

মানিকগঞ্জ-১ আসনে বর্তমান এমপি এ এম নাঈমুর রহমান দূর্জয় আবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ প্রকৌশলী এ বি এম আনোয়ারুল হক সিংহ প্রতীকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।

যশোর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক কায়সার হাসান বারী। ঢাক প্রতীকে নির্বাচন করছেন তিনি। স্বপন ভট্টাচার্য্য ২০১৪ সালে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী জোট প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এখানে মোটর প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইমদাদুল হক। মোটর প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।

এ ছাড়া মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া ২৯ আসনের মধ্যে পাঁচটিতে রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

রংপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে এবারও মহাজোটের প্রার্থী করা হলেও ওই আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আসাদুজ্জামান বাবলু। এর আগে তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবার উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় সংসদের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। 

পিরোজপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী মহাজোটের মনোনয়ন পেলেও ওই আসনে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফুর রহমান মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে আপেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। 

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সার, গাইবান্ধা-১ আসনে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামীম হায়দার পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা বারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এমদাদুল হক এবং লক্ষ্মীপুর-২ আসনে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমানের বিরুদ্ধে কুয়েত আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বিদ্রোহী হিসেবে এখনও নির্বাচনি প্রচারণার মাঠে রয়েছেন।

আজ নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে গণমাধ্যমে বলেছেন, আজকের মধ্যে যারা মহাজোটে মহজোট প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন করবেন তাদের দলীয় বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আওয়ামী লীগ থেকে চিরজীবনের জন্য বিহষ্কার করা হবে। আর কখনও দলে ফিরিয়ে আনা হবে।

বিডি২৪লাইভ/এসবি/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: