হত্যা করে স্বামীর লাশের সঙ্গে সারারাত কাটিয়ে সকালে এয়ারপোর্টে!
নিজের শাড়িতে ফাঁস দিয়ে স্বামীকে হত্যা করলেন। তারপর সারারাত ওই লাশের সঙ্গে কাটিয়ে সকালে বাসা থেকে বের হয়ে সোজা চলে গেলেন নিজের বাড়িতে। সেখান থেকে গোসল সেরে চলে গেলেন নিজের কর্মস্থল এয়ারপোর্টে। সারা দিন সেখানে কাজও করলেন। ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পেলেন না যে, কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি নিজের স্বামীকে খুন করে এসেছেন!
ঘটনা ভারতের পাটিনহাটির। ৫২ বছরের প্রতুল চক্রবর্তীর খুনের রহস্যের তদন্তে নেমে তার স্ত্রী সম্পর্কে এমনই তথ্য খুঁজে পেয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রতুলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার মাত্র চারদিন আগেই পানিহাটি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিনগর এলাকায় শ্যামল মজুমদারের বাড়ির দোতলায় ঘর ভাড়া নেন প্রতুল। তিনি নিজেকে গুরুগ্রামের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। সোদপুরে ওই কোম্পানির একটি শাখা অফিস খোলা হবে। তাই তিনি কিছুদিন পানিহাটিতেই থাকবেন।
উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে ৫২ বছরের প্রৌঢ় প্রতুল চক্রবর্তীর খুনের রহস্যের কিনারা করতে গিয়ে এই তথ্য তাজ্জব করে দিয়েছে পুলিশ কর্তাদের।
বাড়ির মালিক শ্যামল মজুমদার শুক্রবার বলেন, ‘একাই থাকতেন ওই ব্যক্তি। হোম ডেলিভারিতে খাবার আসত।’ বৃহস্পতিবার খাবার দিতে এসেছিল ডেলিভারি বয়। বার বার ডাকার পর প্রতুলের কোনও উত্তর না পাওয়ায় তিনি শ্যামলবাবুকে ডাকেন। এর পর তাঁরা ভেজানো দরজা ঠেলে ঢুকে দেখেন, প্রতুলের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে বিছানায়। গলায় শাড়ির ফাঁস। প্রতিবেদনে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরে আনন্দবাজার পত্রিকা।
ওই প্রতিবেদনে আরও তুলে ধরা হয়- তদন্তে নেমে প্রথমেই পুলিশ আটক করে শ্যামলকে। জানা যায় অমিতাভ রায়চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে শ্যামলের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতুলের। কিন্তু প্রথমেই হোঁচট খেতে হয় পুলিশকে। এক তদন্তকারী বলেন, ‘নিহত ব্যক্তির নাম এবং গুরুগ্রাম ছাড়া আমাদের কাছে কোনও তথ্য ছিল না।’ এমন একটা অবস্থায় সামান্য আলোর দেখা পান গোয়েন্দারা।
এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘মৃতের ঘরে তল্লাশি চালাতে গিয়ে আমরা মহিলাদের একটি রুমাল এবং বাগুইআটি এলাকার একটি হোটেলের বিল খুঁজে পাই।’ মহিলার উপস্থিতি জানার পরই খড়দহ থানার আইসি মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলেই পুলিশ বাগুইআটির ওই হোটেলে যায়। সেখানে প্রতুল আধার কার্ডের ফটোকপি দিয়েছিলেন। সেখান থেকে কাশীপুরের একটি ঠিকানা পান তদন্তকারীরা।
সেই ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ জানতে পারেন অদিতি চক্রবর্তীর কথা। জানা যায় প্রতুলের স্ত্রী অদিতি। এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার পদস্থ কর্মী অদিতিকে এর পর জেরা শুরু করে পুলিশ। তদন্তকারীরা অনেকটাই নিশ্চিত ছিলেন যে, খুনের পেছনে কোনও মহিলার ভূমিকা আছে। শেষ পর্যন্ত রাতভর জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেন অদিতি।
পুলিশকে তিনি জানান, বছর দশেক আগে তাঁর সঙ্গে প্রতুলের বিয়ে হয়। প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর প্রতুলকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু, বিয়ের পর থেকে বেশির ভাগ সময়ে প্রতুল গুরুগ্রামেই থাকতেন নিজের কর্মক্ষেত্রে। মাঝে মাঝে কাশীপুরে এসে অদিতির সঙ্গে থাকতেন। অদিতির প্রথম পক্ষের একটি ছেলে রয়েছে। এই পক্ষের রয়েছে একটি মেয়ে।
কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই প্রতুল তাঁর উপর অত্যাচার করতেন বলে অদিতির অভিযোগ। সম্প্রতি তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে বলেও জানান অদিতি। প্রতুলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েই তাঁকে খুন করেছেন বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন তিনি। বাজার থেকে প্রতুল প্রচুর ঋণ করেছিলেন অদিতির নাম করে। এমনকি তাঁর কাশীপুরের ঠিকানাও প্রতুল ব্যবহার করেন বলে অদিতির অভিযোগ।
দিন কয়েক আগে গুরুগ্রাম থেকে এসে বাগুইআটির একটি হোটেলে উঠে অদিতিকে ডেকে পাঠান প্রতুল। সেখানে তাঁদের মধ্যে টাকাপয়সা সংক্রান্ত কিছু কথা হয়। এর পরেই পানিহাটি এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানেও ডেকে পাঠান অদিতিকে। অদিতি সেখানে যান। তার পরেই রাতেই মত্ত প্রতুলকে খুন করেন বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন অদিতি।
শুক্রবার অদিতিকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁকে পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি জোন (২) আনন্দ রায় বলেন, ‘আমরা ওই মহিলাকে জেরা করছি। কেন তিনি খুন করলেন তা আমরা দেখছি।’
বিডি২৪লাইভ/এইচকে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: