১৫ বিয়ে করা নুরুর হাত থেকে বাঁচতে চান সাবিনা

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০৭:০৮ পিএম

স্বামী শত অত্যাচার সয়েও একটি পুত্র সন্তানের আশায় একে একে তিনটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন সাবিনা আক্তার (৩৪)। কিন্তু শত চেষ্টা করেও তিনি তার সংসার টিকিয়ে রাখতে পারেন নি। সবশেষ কোন উপায় না পেয়ে তিন মাস আগে স্বামীকে তালাক দেন সাবিনা।

কিন্তু তালাকের পরেও স্বামীর অত্যাচার থেকে রক্ষা পাননি সাবিনা। তার দাবি তাকে বিয়ে করার পরেও বিভিন্ন এলাকায় আরও ১৫টি বিয়ে করেছেন তার তালাকপ্রাপ্ত স্বামী ট্রাকচালক নুরু (৫৫)।

সাবিনার অভিযোগ নুরু প্রতিদিন তাকে মারপিট করেন এবং হত্যার হুমকি দেন। নির্যাতনের হাত থেকে সাবিনাকে বাঁচাতে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে তাদেরও হত্যার হুমকি দেন নুরু। ফলে তিন মাস ধরে তিন কন্যা সন্তান নিয়ে গৃহবন্দি রয়েছেন সাবিনা।

এ ঘটনা ঘটেছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের কহুরুহাট এলাকার। এসব ঘটনায় মামলা করেন সাবিনা। ওই মামলায় নুরুকে জেলহাজতে পাঠিয়েছিল পুলিশ। পরে জামিনে বেরিয়ে সাবিনার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন নুরু। এ অবস্থায় সাবিনা আক্তার নিজের নিরাপত্তা চেয়েছেন পুলিশের কাছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

বর্তমানে সাবিনার বড় মেয়ে নুরী ইসলাম সাথী এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। মেজো মেয়ে নুরিয়া ইসলাম বিথি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে নুসরাত জাহান ইতির বয়স দুই বছর। সাবিনা এখন তার বাবার বাড়িতে রয়েছেন তিন মেয়েকে সাথে নিয়ে।

নির্যাতিত সাবিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৯ বছর আগে কহুরুহাট এলাকার দরিদ্র সলেমান আলীর মেয়ে সাবিনা আক্তারকে বিয়ে করেন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বল্লারচর এলাকার দুধু মিয়ার ছেলে নুরুল ইসলাম নুরু। পেশায় তিনি ট্রাকচালক। বিয়ের পর সাবিনাকে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও পাবনাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে রাখেন। বিয়ের পর থেকে বিভিন্নভাবে সাবিনার ওপর নির্যাতন শুরু করেন মাদকাসক্ত স্বামী নুরু।

সাবিনার মা রাবেয়া খাতুন জানান, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নুরুকে তালাক দিয়েছে সাবিনা। কিন্তু তারপরও অত্যাচার থেমে নেই। প্রতি রাতে বাড়িতে হামলা করে, আমরা ঘুমাতে পারি না। আমরা নুরুর অত্যাচার থেকে মুক্তি চাই।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম ওরফে নুরু ড্রাইভার বলেন, ১৯ বছর সংসার করার পর কার বুদ্ধিতে সাবিনা আমাকে তালাক দিলো বুঝতে পারছি না। অন্য কারও প্ররোচনায় আমাকে তালাক দেয়। আমি তার গায়ে হাত তুলিনি। আমার টাকায় বাড়িটি করা হয়েছিল। তালাক দেয়ার পরও সে আমার বাড়িতে কিভাবে থাকে? বাড়িতে গেলে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। আমাকে ফাঁসানোর জন্য মামলা করেছে। সালিসের মাধ্যমে পাশের ছয় শতক জমিতে মাটি ভরাট করছি, সেখানে বাড়ি করব। আমি একাধিক বিয়ে করিনি। এসব মিথ্যা।

সাবিনার অভিযোগ, গভীর রাতে বাড়িতে মাদকাসক্ত বন্ধুদের নিয়ে মদ ও জুয়ার আসর বসায় নুরু। আর নির্যাতন থেকে বাঁচতেই তিনি নুরুকে তালাক দেন। কিন্তু তারপরেও পিছু ছাড়েনি নুরু।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাকলাহাট ইউপির চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন বলেন, স্ত্রীকে নির্যাতনের জন্য আমি গ্রাম পুলিশ দিয়ে নুরুকে ধরে এনেছিলাম। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেই। মামলাও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে আসে। গভীর রাতে এলাকায় এসে অত্যাচার করে নুরু। বিষয়টি সালিসযোগ্য নয়, তাই সাবিনাকে পুলিশ এবং আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায় বলেন, এ বিষয়ে ওই নারী একটি মামলা করেছিলেন। মামলার প্রেক্ষিতে আমরা নুরুকে গ্রেফতার করে হাজতে পাঠাই। বর্তমান সে জামিনে। জামিনে বেরিয়ে আবারও নির্যাতন করছে- এমন অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। শুনেছি বাড়ির জমি নিয়ে তালাকপ্রাপ্ত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ রয়েছে। স্থানীয়ভাবে জমি ভাগাভাগির মাধ্যমে সালিসের কথাও শুনেছি। এরপরও নুরু ড্রাইভারের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: