উদ্বোধনের অপেক্ষায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের তিন সেতু
উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ গোমতী সেতুসহ তিনটি নতুন সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু তিনটি উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পরই সেতু তিনটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু মহাসড়কের উপরে সেতু তিনটি দুই লেনের। এ কারণে এই তিন সেতুতে যানজট লেগেই থাকে। সর্বোপরী সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। এ তিন সেতুর দুই পাশেই প্রতিদিন গাড়ির দীর্ঘ লাইন তৈরী হয়। চার লেনের সড়ক থেকে হঠাৎ করেই সেতুর মুখে এসে গাড়িগুলোকে এক লেনে চলতে গিয়ে এমন যানজটের সৃষ্টি হয়।
যানজট নিরসণের কারণে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ঠিকাদারি সংস্থার সঙ্গে তিনটি সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪শ’ ৮৬ কোটি ৯৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করে চুক্তি স্বাক্ষর করে সড়ক বিভাগ।
২০১৬ সালে তিন সেতু নির্মাণের দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত কাজের মেয়াদকাল হলেও তিনটি সেতুরই কাজ শেষ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। শুধু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষার পহর গুনছে।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দ্রুত কাজ চলায় ইতোমধ্যে তিনটি সেতুর ৯৮ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে চলছে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। সেতু বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রচন্ড কুয়াশা ও শীতের কারনে সন্ধ্যার পর কাজ করতে সমস্যা হওয়ায় কাজের কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। তারপরেও উদ্বোধনের জন্য শতভাগ প্রস্তুত করতে আর সময় লাগবে না।
অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নতুন তিনটি সেতু হলো দ্বিতীয় মেঘনা, গোমতী ও কাঁচপুর সেতু। নতুন তিনটি সেতু উদ্বোধনের পর পুরাতন সেতুগুলো মেরামত করা হবে। এরপর একযোগে ৩টি সেতু দিয়েই যানবাহন চলাচল করতে পারবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক।
প্রতিদিন পণ্য ও যাত্রীবাহী হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে এই মহাসড়ক দিয়ে। চার লেনের এই মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে অনেকটাই প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় দুই লেনের তিনটি সেতুতে। প্রতিনিয়ত সেতুগুলোতে অসহনীয় যানজটে আটকে পড়ে শত শত যানবাহন। তাতে খরচ ভোগান্তি দুটোই বাড়ে।
বিশেষ করে এই যানজটে গার্মেন্টস ব্যবসায় বিরুপ প্রভাব পড়ে। এজন্য সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটিকে দুই লেন থেকে চারলেনে উন্নীত করে। কিন্তু তাতেও সুফল না মেলায় মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ন মেঘনা, গোমতী ও কাঁচপুর সেতুর পাশাপাশি আরও তিনটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
তিনটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (জাইকা) আর্থিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে। জাইকার অর্থ সেতুগুলোর নির্মাণ, পুনর্বাসন ও পরামর্শ সংক্রান্ত কাজে ব্যয় হচ্ছে। ভ্যাট, ট্যাক্সসহ প্রশাসনিক ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে সরকারি তহবিল থেকে।
সেতু তিনটি যৌথভাবে নির্মাণ করছে জাপানি প্রতিষ্ঠান ওবায়শি করর্পোরেশন, সিমিজু করপোরেশন এবং জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত গতিতে কাজ করার ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই সেতু নির্মাণ শেষ হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্রিষ্ট সূত্র।
সেতু বিভাগ সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে এই তিন সেতু অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী নিজে এই সেতু তিনটি নির্মাণের অগ্রগতির খোঁজ খবর রাখছেন। তাঁরই নির্দেশে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রায়ই ছুটে যান সরেজমিনে কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে।
এই সেতু তিনটির নির্মাণ কাজের মেয়াদকাল ২০১৯ সালের জুন মাসে হলেও দ্রুত নির্মাণ কাজের কারনে সেতু গুলোর নির্মাণ কাজ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ৯৮ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
বর্তমানে চলছে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। তবে বর্তমানে প্রচন্ড কুয়াশা ও শীতের কারনে সন্ধ্যার পর কাজ করতে সমস্যা হওয়ায় উদ্বোধনের কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে সেতু প্রকল্পের প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান জানান।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, মূলত পাঁচটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ‘কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতি দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।
এগুলো হলো, ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে ক্রমবর্ধমান যানবাহনের সংকুলান করা, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করা, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধন করা, প্রকল্প এলাকায় আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড উন্নত করা এবং সকলের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা থেকে বেরিয়েই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সংযোগস্থলে কাঁচপুর সেতু। এর উজানেই নতুন দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর নির্মাণকাজ বেশ কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে।
সেতুটি এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক একটি ফ্লাইওভারের মাধ্যমে সেতুটির সাথে যুক্ত হয়েছে। সেই ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজও শেষ। এখন সংযোগ সড়কের কাজ শেষে সৌন্দর্য বধ্যনের কাজ চলছে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়কপথের যোগাযোগ যুগোপযোগী, সহজ, দ্রুত ও যানজটমুক্ত করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সেতু তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূকিা রাখবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ভুক্তভোগিদের মতে, এ তিনটি সেতু খুলে দিলে ঢাকা-চট্টগ্রামের ভ্রমণ সময় অর্ধেকে নেমে আসবে।
দীর্ঘ সময়ের পরিবর্তে মাত্র ৪ ঘণ্টায় এ পথের দূরত্ব অতিক্রম করা যাবে। এ ছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লাঘবের পাশাপাশি বোগান্তি ও দুর্ঘটনার হারও কমবে।
অন্যদিকে, আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন সহজতর, সাশ্রয়ী হবে বলেও আশা করছেন সংশ্রিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মূলত পাঁচটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ‘কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।
এগুলো হলো, ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে ক্রমবর্ধমান যানবাহনের সংকুলান করা, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করা, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধন করা, প্রকল্প এলাকায় আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড উন্নত করা এবং সকলের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
এ প্রসঙ্গে সেতু বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, তিনটি সেতু এক সাথে খুলে দিলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আর কোনো যানজট থাকবে না। ভোগান্তির সাথে সময় ও খরচ কমবে।
যাতে করে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। যানজটের কারণে এতোদিন যে শত কোটি টাকার ক্ষতি হতো তা আর হবে না। এতে করে অর্থনীতিতে অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সংশ্লিষ্টরা জানা যায়, নতুন ৩টি সেতু চালুর পর পুরোনো তিন সেতু মেরামতের পর নতুন তিনটির সঙ্গে যান চলাচলে যুক্ত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।
কমে যাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময়। বর্তমানে তিন সেতুতে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা সময় বেশি লাগে। সেই সময় অনায়াসে কমে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়া যাবে।
বিডি২৪লাইভ/এজে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: