বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:২৭ এএম

আনোয়ার আলদীন: সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয় ও তিক্ত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচনে যাবে না। ভোটের পর বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম স্থায়ী কমিটিসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাদের একাধিক বৈঠকে পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করে দলের নীতি নির্ধারকরা বলছেন, বিএনপিসহ নির্বাচনে অংশ গ্রহনকারী বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আচরন পরিবর্তনের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই।

সুতরাং শুধু শুধু নির্বাচনে গিয়ে তৃণমূল বিএনপি নেতাদের মামলা, হয়রানি, জেল-জুলুম, সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করার কোনো মানে নেই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন ভোটরদের সমস্ত আস্থা-বিশ্বাস সম্পূর্ণ নষ্ট করেছে। তাই এই সরকারের অধীনে আগামীতে কোন নির্বাচনেই যাবে না বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর তারা দলের শরিক জোট ঐক্যফ্রন্টের সাথেও বৈঠক করেছে। সেখানেও সিদ্ধান্ত হয়েছে সব নির্বাচন বয়কটের। শুধু তাই নয়,দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে কেউ কোথাও প্রার্থী হলে তাকে বহিষ্কার করা হবে। দলের কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে সেটা তার ব্যক্তিগত এবং তাকে দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে। দলের পদে থেকে নির্বাচন করা যাবে না।

গতকাল সোমবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার ও সিইসির অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না ঐক্যফ্রন্ট।এ নির্বাচনে জনগণের প্রতিনিধিত্ব হয়নি। ’রাতের ভোটে’ জনগণের ভোটাধিকার ডাকাতি করা হয়েছে। এ কারণে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এ নির্বাচন বয়কট করেছে। আমাদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেয়া না নেয়ার কিছু নেই। ফখরুল বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এ কারণে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এই আওয়ামীলীগের সিইসির অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না ঐক্যফ্রন্ট।’

গতকাল লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের খলাইঘাট এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত বিএনপি নেতার কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, কলঙ্কিত এ নির্বাচনের ফলাফল দেশের জনগণের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হচ্ছে-জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। জনগণের ভোট ডাকাতি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর দেশের মানুষ ভোটের সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোট ডাকাতি করেছে। আমরা আগেই বলেছি, এ ভোট বাতিল করে পুনরায় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন,আমরা বিগত নির্বাচনের ফলাফল ও পরিবেশ বিশ্লেষন করেছি। দেশ-বিদেশের মানুষের সামনে প্রমান হয়ে গেছে যে,এই সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিন্দু মাত্র সুস্টু নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। বিএনপির তৃনমুল নেতাদের মতামত নিয়েছি-তারাও বলেছেন,এই সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনের বিপক্ষে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধূরী বলেন, আমরা বিগত সময়ে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গিয়েছি। কিন্তু দেশের মানুষ দেখেছে প্রতিটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে। কারচুপি জালিয়াতি করে আওয়ামীলীগ তাদের প্রার্থীদের জিতিয়ে নিয়ে গেছে। সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগের দিন রাতে মহাডাকাতি হয়েছে। সুতরাং কেন আমরা এই সরকার এবং এই আওয়ামী দলীয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে আবারো নির্বাচনে যাবো?

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন,এই সরকারের আমলে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সারাদেশে ভোটারদের ভোটাধিকার-মানবাধিকার-নাগরিক অধিকার সব হরন করা হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে পুলিশ প্রহরায় ভোট কেন্দ্রে বসে আওয়ামী লীগের লোকজন ভোটের বাক্স ভরেছে। বিশ্বের ইতিহাসে নিশুতি রাতের এই ভোট ডাকাতিতে সহযোগিতা করতে যাবে না বিএনপি।

আগামী মার্চে পাঁচ ধাপে উপজেলায় নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে হবে নির্বাচনের তফসিল। একই সময়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (উত্তর)নির্বাচনও হবে। সূত্র: ইত্তেফাক।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: