ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের পরিবারের দৈন্যদশা!

প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:২০ এএম

স্বাধীনতা তোমার জন্য, ভাষা আন্দোলনের রক্তিম ইতিহাস। মহান একুশের বিভির্ষিকাময় ঘটনা। সালাম, বরকত, জব্বার, রফিক, শফিকের তাঁজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মোর বাংলা ভাষা। যা (২১ ফেব্রুয়ারি) বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশী হিসেবে এটা আমাদের গর্বের বিষয় বলে জানান শহীদ জব্বাররে ছেলে মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাদল। ভাষা আন্দোলনের সূর্য সৈনিক শহীদ আব্দুল জব্বার। তার পুত্র আজ রাজধানীর বুকে দৈন্যদশায় জীবিকা নির্বাহ করছে। যে (ভাষা আন্দোলন) পটভূমি স্বাধীনাতা আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। তাদের পরিবারকে কী জাতি ভুলতে বসেছে? না রাষ্ট্র যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না এমন প্রশ্ন সবার মাঝে।

ভাষা শহীদ জব্বারের পরিবার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে, চোখের কোনে জল এসে যায় বলে জানান একুশে পদক প্রাপ্ত প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট অধ্যাপক যতীন সরকার। তিনি বলেন, যাদের আত্মত্যাগের জন্য আমাদের এই বাংলা ভাষা তাদের পরিবারের সদস্যদের এমন করুণ দিনানিপাত করছে শুনে আমি স্তম্ভিত। কিছু বলার নেই। আমি শুধু সরকাররে কাছে তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানাব। কেন না একটি রাষ্ট্রে সকলেই সমান ভাবে বেড়ে উঠে না। যেহেতু তার পিতা এই রাষ্ট্রের ভাষার অধিকারের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে। অতএব রাষ্ট্রকে তার জন্য আরও বেশি কিছু করতে হবে। এ দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না বলে জানান অধ্যাপক যতীন সরকার।

৫২’ ভাষা আন্দোলনে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁ উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে শহীদ আবদুল জব্বারের জন্ম। শহীদ আব্দুল জব্বারের পৈতৃক বাড়িতে পুত্রের কোনো জায়গা জমি নেই। সরজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর তেজগাঁওে সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া সাড়ে পাঁচ শতাংশ জমিতে টিনশেড ঘরে শহীদ জব্বারের একমাত্র ছেলে মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম বাদল তার পরিবার পরিজন নিয়ে দিনানিপাত করছে। বরাদ্দ পাওয়া জমিতে অর্থঅভাবে কোনো ভবন নির্মাণ করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন তিনি। নূরুল ইসলাম বাদল বলেন, ভবন নির্মাণের জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে সরকারের কাছে বহু আবেদন করেছি কিন্তু দুর্ভাগ্য এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাইনি।

৫২’ শহীদ হওয়ার পর জব্বারের স্ত্রী আমেনা বেগম ছেলে নূরুল ইসলাম বাদলকে নিয়ে চলে যান ভারতের সীমান্ত ঘেষা উপজেলা হালুয়াঘাটের শিমুলকুচি গ্রামে। সেখানে দ্বিতীয় বিয়ে করার পর নানা অভাব অনটনের মধ্যে কেটেছে তাদের সংসার।

শহীদ আবদুল জব্বারের একমাত্র সন্তান মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম বাদল জানান, সেনাবাহিনীতে চাকরি শেষে পেনশনের টাকা দিয়ে বরাদ্দকৃত জমিতে একটি টিনসেড ঘর নির্মাণ করেছি। বর্তমানে স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে ও পুত্রবধূকে নিয়ে রাজধানীর এই জরাজীর্ণ বাড়িতে এখন বসবাস করে আসছি। আর শহীদ আবদুল জব্বারের ছেলে হিসেবে প্রতি মাসে ১০ হাজার করে সরকারি টাকা ভাতা পাচ্ছি। যা দিয়ে চলছে কোনরকম। সংসারের টানাপোড়েন লেগেই থাকে। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জব্বারের ছেলের আবেদন, আমাকে আর একটি বার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দিন।

অন্যদিকে শহীদ আব্দুল জব্বারের গ্রামের বাড়ি গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া (জব্বার নগরে) একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপন করার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। দীর্ঘ দিনের এই দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করেন জব্বার পুত্র মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাদল।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের পাঁচুয়া গ্রামে (জব্বার নগরে) শহীদ জব্বারের নিজ গ্রামের বাড়ির সামনে ২০০৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এডিপির অর্থায়নে নির্মিত শহীদ জব্বার স্মৃতি গ্রন্থাগার ও জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এ অঞ্চলের দীর্ঘ প্রত্যাশিত ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটি আজও পূর্ণাঙ্গতা পায়নি। গেজেটে অন্তর্ভূক্তি হয়নি জব্বার নগরের নাম। জাদুঘরটিতে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে দৈনিক পত্রিকা সরববাহ বন্ধ রয়েছে। ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগারে ৪ হাজার ১৩০টি বই রয়েছে। উপজেলা সদর থেকে পৌনে ৫ কিলোমিটার দূরে এবং অধিকাংশ রাস্তার বেহাল দশা থাকায় একেবারেই কমে গেছে পাঠকের সংখ্যা।

গ্রন্থাগারে একটি কম্পিউটার সরবরাহ থাকলেও ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার কারণে কক্ষটি তালাবদ্ধ থাকে। ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভাষা শহীদদের স্মৃতি চিহৃযুক্ত সব বই এখনও জাদুঘরে নেই। শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি গ্রন্থাগারটি নামে জাদুঘর হলেও শহীদ জব্বারের ছবি ছাড়া ব্যবহৃত কোন বস্ত্র বা জিনিসপত্র এখানে নেই।

৫২ ভাষা আন্দোলনের শহীদ আব্দুল জব্বার ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের পাঁচুয়া গ্রামে ১৯১৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাসেন আলী শেখ। মাতার নাম সাফাতুন নেছা। আবদুর জব্বার ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার সমাবেশে যোগ দেন। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবদুল জব্বার গুরুতর আহত হন। পরে ওই রাতেই (২১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। পরে আজিমপুর কবরাস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

বিডি২৪লাইভ/এসবি/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: