যমুনায় ভুট্টা চাষে কৃষকরা সফল

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০২:০৪ পিএম

যমুনার নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা। দু'চোখ যে দিকে যায় চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ প্রাকৃতির এমন দৃশ্যে মন জুড়িয়ে আসে। নদীর বুকে জেগে ওঠা প্রতিটি চরে ভুট্রা চাষ। সব মিলিয়ে যমুনায় এ বছর ভুট্রার বাম্পার ফলন হয়েছে বলছে ভুট্রা চাষি কৃষকরা। তবে বড় দু'চিন্তা করছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে। কেননা দুর্যোগের কারণে ভুট্রার ছড়া ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিবারের মত এবারো যমুনা নদীর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে অংশে চরঞ্চলে গত বারের লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে অর্থবছর ২০১৮-১৯ সালে ১হাজার ২শ ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্রা চাষ করা হয়েছে।

এছাড়াও উপজেলার চরঞ্চলের গাবসারা ও অর্জুনা ইউনিয়ন বাদেও ৪ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌর সভায় আংশিক কিছু এলাকায় ভুট্রার চাষাবাদ করা হয়েছে। এতেও ভালো ফলন হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যমুনা নদীর অংশে উপজেলার চরঞ্চলে জেগে ওঠা চরের প্রতিটি জমিটে ভুট্রা লাগানো হয়েছে। বাতালে দোল খাচ্ছে ভুট্রার পাতাগুলো। মৌ-মাছিরা করছে ভুট্রা ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ। যা চোখে পড়ার মত ছিল। মনের আনন্দে ভুট্রা কৃষকরা ভুট্রা গাড়ের গোড়ায় কৃষকরা নিয়মিত কীটনাশক প্রয়োগ, পানি সেচ, আগাছা পরিস্কার করছে।

গাবসার ইউনিয়নের গোবিন্দপুরের ভুট্রা চাষি মো. আবুতালেব বিডি২৪লাইভকে বলেন- গতবারের ভুট্রা চাষে অনেকেই লাভবান হয়েছে। তাই তাদের দেখে ও পরামর্শে প্রথমবারের মত ১ বিঘা জমিতে ভূটা চাষ করেছি। তার কাছে খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন- অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্রা চাষে খুবই খরচ কম হয়েছে। সার, জমি চাষ, পানি সেচ, শ্রমিক খরচ ও ভূটার বীজ কেনা বাবদ এ পর্যন্ত ৫হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। যা ধান চাষের তুলনায় প্রায় অর্ধেক খরচ। ১ বিঘা জমিতে তার লক্ষ্যমাত্রা ৩২-৩৬ মণ ভুট্রা হবে বলে আশাবাদি তিনি।

জানা যায়, উপজেলার চরঞ্চলের শুকনো মৌসুমে জেগে ওঠা বালুচরে বর্ষাকালে পলিমাটি পড়ে। যা বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করার জন্য উপযোগি হয়ে পড়ে। কম খরচে ও কম কীটনাশক ব্যবহার করে অধিক ফলন হয়। ভুট্রা, চিনা বাদাম, খেসারি কালাই, মসুরি ডাউল, মিষ্টি কুমড়া, নদীর নিচু জমিতে বোরো ধান চাষ, মিষ্টি আলু, আখ সহ বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছে কৃষকরা।

চন্দুনি গ্রামের চাষি আব্দুল আলিম বিডি২৪লাইভকে বলেন, ভুট্রা চাষ করে কয়েক বছরে অনেক লাভ হয়েছে। আশা করছি গতবারের চেয়ে এবার দেড়গুণ লাভ হবে। আবহাওয়া অনূকলে থাকায় ভুট্রা গাছে ছড়াও বেশী ধরেছে। কৃষি অধিদপ্তর থেকে কোনো ধরণের সহযোগিতা বা পরামর্শ পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষক আলিম বলেন- হ্যাঁ পেয়েছি। উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় কয়েক বিঘা জমিতে ভূটা চাষ করেছি। তারা বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

&dquote;&dquote;

উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, ১ বিঘা জমিতে চরঞ্চলে ধান চাষ করলে ১২ থেকে ১৫ মণ ধান হয় অপর দিকে ১ বিঘা জমিতে ভূট্টা হয় ৩৫ থেকে ৪০ মণ। দামেও তেমন পার্থক্য নেই। ১মণ ধানের দাম ৭ শ থেকে ৯ টাকা। ভূটার দামও ধানের মতই। ভুট্রা চাষে
কীটনাশক ও সারের ব্যবহারও কম লাগে। অন্যান্য রবি শস্যের চেয়েও ভুট্রার ফলন বেশি। তাছাড়া সহজে আবাদযোগ্য এবং অধিক লাভ জনক হওয়ায় ভূট্টা চাষে কৃষকরা বেশি আগ্রহী হয়েছে। তাছাড়া ভূট্টার আখ গোখাদ্য আর ডাটা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় কৃষকরা ভূট্টা আরো বেশি আগ্রহ সহকারে আবাদ করে থাকে।

গাবসারা ইউনিয়নের চন্ডিপুর চরের কৃষক মো. আব্দুল লতিফ জানান, আমি গত বছরের চেয়ে বেশি জমিতে ভূট্টা চাষ করেছি। এবছর যেমন দেখছি তাতে বিঘাতে ফলন ৩৪ মণ ছাড়িয়ে যাবে আশা করছি। অন্য দিকে ভূট্টা চাষের জন্য কৃষি অফিস থেকে সময়মত সার-বীজ ও কীটনাশক পেয়েছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জিয়াউর রহমান বিডি২৪লাইভ কে বলেন- উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলের লোকেরা অন্য ফসলের চেয়ে ভূট্টাকে এখন একমাত্র ও প্রধান অর্থকড়ি ফসল হিসেবে বেছে নিয়েছে। ভুট্রা চাষ অধিক লাভজনক একটি ফসল। প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র-দরিদ্র কৃষকদের কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরণের সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে। আমাদের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা  কৃষকেদের সাথে নিরলসভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। সবসময় কৃষদের কে সব ধরণের সহযোগিতা চলমান থাকবে।

বিডি২৪লাইভ/এএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: