পাক-ভারতে যুদ্ধের হুংকার, কে কত বেশি শক্তিশালি?

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:২১ পিএম

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হওয়ার পর থেকেই বেশ কয়েকটি বিষয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান ছিল। কাশ্মীর সমস্যা দেশ দু'টির মধ্যে বিরাজমান প্রধান সমস্যা হলেও অন্যান্য বিষয়েও দেশ দু'টির মধ্যে অনেক বেশি উত্তেজনা সৃষ্টি করে। মুলত এই কাশ্মীর অঞ্চলের মালিকানা নিয়ে দু’দেশের তেলে আগুনে সম্পর্ক। ১৯৬৫ তে অন্য এক যুদ্ধে খাতায়-কলমে হেরে গিয়েছিল ভারত। কিন্তু তারপর যুদ্ধক্ষেত্রে যা হয়েছিল তাতে ভারতের শক্তি সম্পর্কে অবহিত হয়েছিল পাকিস্তান।

সেই যুদ্ধের নাম ছিল ‘আসল উত্তর’। তখন যুদ্ধ পরিস্থিতি চরমে। অমৃতসর দখল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন পাক জেনারেল আয়ুব খান, যাতে জম্মু ও কাশ্মীরের সেনাবাহিনী কোনও জিনিসপত্র না পায়। পাকিস্তানের বিশেষ বাহিনীকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। যতটা সম্ভব ক্ষতি করে ভারকে হারানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে পাকিস্তান। আমেরিকার সৌজন্যে পাকিস্তানের হাতে তখন ছিল অত্যাধুনিক প্যাটন ট্যাংক। আর ভারত ১৯৬২-তে চিনের সঙ্গে যুদ্ধের ক্ষত সারাতে পারেনি তখনও। আর সেনাবাহিনীতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ তখনও সম্পূর্ণ হয়নি।

১৯৬৫-র ৮ সেপ্টেম্বর পঞ্জাবের খেম-করন এলাকায় ভয়াবহ হামলা চালানোর চেষ্টা করে পাকিস্তান। একসঙ্গে ২২০টি ট্যাংক পাঠিয়ে দেয় ওই এলাকায়। সামনে যা আসবে সব ধ্বংস করে দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। ভারতে এই বীভৎস আক্রমণের মুখোমুখি হওয়ার মহড়াও শুরু হয়ে গিয়েছিল।

সেসময় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন লেফট্যানেন্ট জেনারেল হরবক্স সিং। কিন্তু ভারত সংখ্যায় পিছিয়ে থাকায় পাকিস্তানকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ ছিলেন সিং। নতুন কায়দায় ফাঁদে ফেলার জন্য প্রস্তুত করলেন সেনাবাহিনীকে। চারপাশ থেকে ঘোড়ার নালের আকারে সাজালেন বাহিনীকে। তিনদিক থেকে ট্যাংকগুলোকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করলেন সবাইকে।

অন্যদিকে, ভারত সেনা সরিয়ে নিয়েছে এই ভেবে ওই এলাকায় ঢুকে পড়ল পাকিস্তানি ট্যাংক। এলাকার আখের খেতে ইতিমধ্যেই জল ঢুকিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। যাতে কাদায় ডুবে যায় ওই ট্যাংক, সেটাই ছিল মূল লক্ষ্য। আর লম্বা আখ গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিল ভারতীয় বাহিনী। দেখা না গেলেও খুব কাছেই ছিল তারা। পরপর উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ১৭০টি ট্যাংক। আর ধরে ফেলা হয়েছিল ১১টিকে।

এদিকে ভারতের মাত্র ৩২টি ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কাতারে কাতারে শুধুই পড়েছিল পাকিস্তানি ট্যাংকের মৃতদেহ। এলাকার নামই দেওয়া হয়েছিল প্যাটন নগর। লেফট্যানেন্ট জেনারেল হরবক্স সিং-এর এই মারাত্মক পরিকল্পনার কথা আজও বলা হয় বিশ্বের প্রত্যেকটা সেনা স্কুলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই ছিল ইতিহাসের সবথেকে বড় ট্যাংক যুদ্ধ।

সম্প্রতি ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীর পুলওয়ামা এলাকায় ভারতের বিশেষায়িত বাহিনী (সিআরডিএফ) এর ৪৪ জন জওয়ান নিহতের ঘটনায় আবার ফুঁসে উঠেছে ভারত। তাদের ধারণা পুলওয়ামা হামলায় হাত রয়েছে প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তানের। এদিকে এ হামলার ক্ষত বুকে নিয়ে সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনে পাল্টা পদক্ষেপের বার্তাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

ওদিকে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন তারা যুদ্ধের জন্য সদা প্রস্তুত। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে দু’দেশের মধ্যে যদি হয় যুদ্ধ তবে কার হাতে কী সমরাস্ত্র মজুত রয়েছে সেটাই দেখার মুখ্য বিষয়...

সেনা বাজেট: উন্নয়নশীল দুই রাষ্টের ব্যয় বরাদ্দের বেশ কিছুটা চলে যায় সামরিক খাতে। দেশের মোট আয়ের নীরিখে শতাংশের বিচারে সামরিক খাতে ব্যয়ের দিকে তাকালে বলতেই হয় এক্ষেত্রে অবশ্য এগিয়ে পাকিস্তান।

২০১৮-১৯-এর বাজেট অনুযায়ী ভারত তার মোট আয়ের ২.১ শতাংশ ভারতীয় ট্রুপের জন্য খরচ করেছে যা অঙ্কের হিসাবে দাঁড়ায় প্রায় চার ট্রিলিয়ান টাকা (৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)৷ অন্যদিকে পাকিস্তান তাদের জাতীয় আয়ের ২.১ শতাংশ খরচ করেছে ৬,৫৩,৮০০ জন ট্রুপের জন্য। অঙ্কের হিসাবে যার পরিমান ১.২৬ ট্রিলিয়ন পাকিস্তানি টাকা। এছাড়া ইমরানের দেশ সামরিক খাতে পেয়েছে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিদেশী সাহায্য। ইন্টারন্যাশানাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটিজিক স্টাডিজ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে স্টলহম ইন্টারন্যাশানাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের তথ্যনুযাই, ১৯৯৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের মোট ব্যয় বরাদ্দের ২০ শতাংশ করা হত সামরিক খাতে। সেখানে এই সময়কালে ভারতের মোট ব্যয়ের ১২ শতাংশ ব্যয় করা হত শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর জন্য।

পরমাণু শক্তি: ভারত-পাকিস্তান, দক্ষিণ এশিয়ার এ দু’দেশই সবচেয়ে বেশি পরমাণু শক্তিধর। তাদের হাতে রয়েছে ব্যালেস্টিক মিসাইল। ভারতদের রয়েছে নয় ধরণের মিসাইল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্নি-৩, যার নিক্ষেপ দূরত্ব ৩০০০ হাজার থেকে ৫০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশানাল স্টাডিস ওয়াশিংটনের তথ্যনুযাই এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে৷

পাকিস্তানের বন্ধু চিনের সহায়তায় পাকিস্তানের হাতেও রয়েছে পরমাণু কার্যক্রম। তাদের হাতে থাকা ছোট ও মাঝারি অস্ক্র দিয়ে ভারতের যেকোনো অঞ্চলে মূহুর্তে আঘাত হানা সম্ভব। পাক পরমাণু অস্ত্রের মধ্যে সাহিন-২ সর্বোচ্চ দূরত্ব ২০০০ কিমি অতিক্রম করতে পারে।

তথ্যে প্রকাশ, পাকিস্তান যেখানে ১৪০-৫০টি ওয়ারহেডস রয়েছে, সেখানে ভারতের রয়েছে ১৩০-৪০টি ওয়ারহেডস।

সেনা: পাকিস্তানের সেনাবহিনী ভারতের তুলনায় অনেক কম। পাকিস্তানের ৫ লক্ষ ৬০ হাজার সৈন্য নিয়ে গঠিত বাহিনী। রয়েছে ২,৪৯৬টি ট্যাঙ্ক, ১,৬০৫ পার্সোনাল আর্মড ক্যারিয়ার, ৪,৪৭২টি আর্টিলারি বন্দুক দেশিয় প্রযুক্তিতে তৈরি ৩৭৫টি হুইৎজার।

অন্যদিকে, ভারতের হাতে রয়েছে ১.২ মিলিয়ন শক্তিশালী সেনা, যা ৩,৩৫৬ ব্যাটেল ট্যাংক, ৩,১০০ পদাতিক সৈন্যবাহিনীর গাড়ি দ্বারা সাজানো। রয়েছে আর্মড কর্মী বাহকও।

ইন্টারন্যাশানাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটিজিক স্টাডিজের তথ্যনুযাই, তুলনায় বড় সমরাস্ত্র হওয়া সত্ত্বেও ভারতের সেনাবহিনী ও অস্ত্রভাণ্ডার অনেকটাই পুরনো দিনের। যন্ত্রাংশ পেতেও তাই মাঝে মধ্যেই অসুবিধের মধ্যে পড়তে হতে পারে।

বিমান বাহিনী: ১, ২৭, ২২০ জন সুসজ্জিত ভারতীয় বিমান বাহিনী। এর মধ্যে রয়েছে ৮১৪টি কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট। সেখানে পাকিস্তানের হাতে রয়েছে মাত্র ৪২৫টি যুদ্ধ বিমান। সেদেশের বিমান বাহিনী অনেকটাই চিন ও আমেরিকার সাহায্যপুষ্ট। পাকিস্তানের রয়েছে চিনের এফ-৭পিজি ও আমেরিকার এফ-১৬ ফেলকন জেট বিমান।

তবে ভারতের প্রয়োজন, ৪২টি জেট স্কোয়ারডন, ৭৫০ এয়ারক্রাফ্ট্যের৷ রাশিয়ান মিগ-২১ যুদ্ধ বিমান অবসরের মুখে। ফলে রাফায়েলের মতো বিমানের অতি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পাকিস্তানের তুলনায় ভারদতের বায়ু সেনা শক্তিশালী হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে ভারতকে সামলাতে হবে চিনের আক্রমণও। সেক্ষেত্রে আধুনিক যুদ্ধ বিমানের আরও প্রয়োজন।

তথ্যনুয়াই পাকিস্তান আগের চেয়ে আকাশ পথে অনেক শক্তিধর হচ্ছে। তাদের হাতে রয়েছে চিন ও আমেরিকার দেওয়া যুদ্ধ বিমানও।

নৌ-সেনা: ভারতীয় নৌ-সেনার রয়েছে ১৬টি সাবমেরিন, ১৪টি ধংস্বাত্মক যুদ্ধ জাহাজ, ১৩ ফাইটার প্লেন, ১০৬টি পেট্রল ও কোস্টাল কমব্যাট ভেইকেল ৭৫ কেপেবেল এয়ারক্র্যাফ্ট। নৌ-বাহিনীতে কাজ করেন ৬৭, ৭০০ জন কর্মী।

তুলনায় অনেক কম, পাকিস্তানের সমুদ্র উপকূল। তাদের হাতে রয়েছে ৯ ফাইটার যুদ্ধ জাহাজ, ৯ ফাইটার, ৮টি সাবমেরিন ১৭ পেট্রল ও কোস্টাল ভেইকেল।

সমরাস্ত্রে পরিসংখ্যানের বিচারের এগিয়ে ভারত। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে তাদের পুরনো সরঞ্জাম নিয়ে। যদিও ভারতের হাতে 
যা অস্ত্র মজুত রয়েছে তা পাকিস্তানের তুলনায় ৫ গুণ বেশি।

বিডি২৪লাইভ/এসএ/এসএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: