জীবন দিয়েও সেই শিশুটিকে বাঁচাতে পারল না দুই সহোদর
হঠাৎ অগ্নিকাণ্ড শুরু। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। বাঁচার তাগিতে এদিক-ওদিক ছুটছে মানুষ। তবে ভাই ভাইকে রেখে, বাবা সন্তান রেখে কিভাবে পালাবে? তাই অবশেষে সন্তানকে বাঁচাতে প্রাণ দিল দুই ভাই। তবুও বেঁচে নেই সেই অবুঝ শিশু। বাবা-চাচার মাঝখানেই পুড়ে ছাই হয়ে গেল ছোট্ট শিশুটির তুলতুলে নরম শরীর। গত রাতে রাজধানীর চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাই জন্ম দিয়েছে এমন হৃদয় বিদারক ঘটনার। যা ইতিহাসে নজির হয়ে থাকবে যুগ যুগ ধরে।
ভাইয়ের খোঁজে আসা ছোট ভাই ইদ্রিস হাসপাতালের মর্গে কান্নার রোল শুরু করে, রক্তের ডাকে কেঁপে উঠে হাসপাতালের আকাশ, বাতাস, ভারী হয়ে উঠে হাসপাতালের পরিবেশ। স্বজন হারানো আরও বহু মানুষের আহাজারি, থামবে কি এ কানা? মৃত্যুর মিছিল আর কত লম্বা হলে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে খোদা? স্বজনদের এমন আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের মর্গ। কে আমায় শাসন করবে? আমি কাদঁতে চাই খোদা, আমারে একটু কাদঁতে দাও বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ইদ্রিস।
রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারে কাজ শেষে তিন ভাই অপু, আলী ও ইদ্রিস দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ছোট ভাই ইদ্রিস তার এক বন্ধুর ফোন পেয়ে দোকানের চাবি বড় ভাইদের বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায়। পাশেই খেলা করছিল বড় ভাই অপুর (৩২) তিন বছরের ছেলে আরাফাত। এমন সময় ঘটে বিস্ফোরণ, ছড়িয়ে পড়ে আগুন। মারা যায় এই পরিবারের তিন সদস্য।
বুধবার দিবাগত রাত ৩ টার ধ্বংসস্তুপ থেকে লাশ উদ্ধার করতে গিয়ে নিহত দুই ভাই অপু ও আলীর মরদেহ আলাদা করতে পারেননি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধারকারী সদস্যরা। তারা দুজন একে অপরকে জড়িয়ে ছিলেন। এ অবস্থায়ই একটি বডি ব্যাগে (মরদেহ যে সাদা ব্যাগে করে বহন করা হয়) করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে পাঠানোর পর দেখা যায়, দুই ভাইয়ের লাশের মাঝে রয়েছে শিশু আরাফাতের লাশ।
আগুনের লেলিহান থেকে বাঁচানোর জন্যই হয়তো দুই ভাই আরফাতকে মাঝে রেখে একে অপরকে জড়িয়ে রেখেছিলেন বলে ধারণা করছেন ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক ও উদ্ধারকারী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
একই পরিবারের এই তিন সদস্যের লাশ শনাক্ত করেছেন আর এক রক্ত ছোট ভাই ইদ্রিস। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসে মরদেহগুলো শনাক্ত করেন তিনি। স্বজন হারানোর শোকে ঢামেক মর্গে ঢুকরে কাঁদছিলেন ইদ্রিস। বলছিলেন, ‘এখন আমাকে শাসন করবে কে?’ আজ আমার শরীরে সব রক্তকে হারিয়ে নিঃস্ব হতে চলছি। কাদঁতেও পারছি না। কি করে কাদঁবো বলেন?
ইদ্রিস জানান, ওয়াহিদ মঞ্জিলে তাদের কেমিক্যালের দোকান ছিল। সেখানেই পুড়ে মারা গেছেন তার বড় ও মেঝ ভাই। সঙ্গে মারা গেছে তার বড় ভাইয়ের ছেলে আরাফাত।
বুধবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার থানার চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের সামনের কয়েকটি ভবনে আগুন লেগে একই পরিবারের তিন সদস্যসহ ৭০ জন দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন উদ্ধাকারী দলের সদস্যরা।
বিডি২৪লাইভ/এসবি/এমআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: