কেউ কথা রাখেনি!
এক সময় যার সুখের সংসার ছিল। কখনও কারো কাছে হাত পাততে হয়নি আজ তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে নিজের সংসার চালান। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন ৭৭ বছর বয়সী পুটি বালা। এখন আর ঠিকমত চলাফেরাও করতে পারেন না। চেগি দাসী নামের এক কন্যা সন্তান আছে তার। চেগির স্বামী ভাটপাড়া গ্রামের জগেন দাস রাজমিস্ত্রীর কাজ করে কোনো মতে তিন সন্তানের সংসার চালায়।
বৃদ্ধা পুটি বালার স্বামী মারা গেছে প্রায় ২৫ বছর আগে তখন থেকেই দেখার মত কেউ নেই তার। ২৫ বছর আগে স্বামী মারা গেলেও তার ভাগ্যে জোটেনি একটি বিধবা ভাতা কার্ড। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১নং সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ছোটভাটপাড়া গ্রামের ছোট ভাই জিতেন দাসের ছোট্ট একটি কুড়ে ঘরে বসবাস করেন পুটি বালা।
চলতি পথে এই বয়স্ক মানুষটি বিডি২৪লাইভ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার একটা বয়স্ক অথবা বিধবা ভাতা কার্ড করে দাও না বাবা, আর কত বয়স হলে আমি বয়স্ক/ বিধবা ভাতা কার্ড পাবো? সবাই শুধু কথা দেয় কিন্তু কেউ কথা রাখেনি।’
বৃদ্ধা পুটি বালার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সরলা দাস বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য কত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে কিন্তু কেউ একটি কার্ডও করে দেয়নি। সাবেক জয়নাল মেম্বার ও রবিউল মেম্বার তাকে একটি বিধবা ভাতা কার্ড করে দেবে বলে অনেক ঘুরিয়েছে কিন্তু কথা রাখেনি। বর্তমান কাদের মেম্বার দু’বার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি নিয়েছে কিস্তু এখনও কার্ড করে দেয়নি। ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি নাকি কাদের মেম্বার হারিয়ে ফেলেছে বলেও জানান সরলা দাস।’
তিনি আরও বলেন, ‘কার্ড করে দেবার কথা বললে টাকা চায় কিন্তু টাকা কোথায় পাবো? কে টাকা চায় জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।’
পুটি বালা বলেন, ‘বয়স্ক ভাতা কার্ড করে দেবার কথা বলে অনেকে কথা দিয়েছে কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। গত কয়েক বছর আগে তার এলাকার এক জনপ্রতিনিধি ৩ হাজার টাকা দাবি করেছিল। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় তাকে কার্ড করে দেয়া হয়নি।’
কিন্তু প্রকৃত বয়স্ক ও বিধবাদের কার্ড দেবার সরকারি নিয়ম থাকলেও পুটি বালা এখনও সেই নিয়মের মধ্যেই পড়েনি বলে মনে হয়। ছোটভাটপাড়া গ্রামের পুটি বালার ৭৭ বছর বয়সেও জোটেনি একটি বয়স্ক বা বিধবা ভাতা কার্ড। নিরুপায় হয়ে আজ তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে বেড়াচ্ছেন।
পুটি বালা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘অনেক দিন না খেয়ে থাকতে হয় তাদের। তার ভাই বাঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের জিনিস বানায় তাতে তার তিন সন্তানের সংসার ঠিক মত চলে না তার উপর আবার তিনি (পুটি বালা) বোঝা হয়ে আছে। কোন উপায় না পেয়ে পুটি বালা এখন ভিক্ষা করে। তার উপর আবার ভাই জিতেনের মাজার হাড় খাওয়া রোগ আছে।’
নাম প্রকাশ না তরার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, আমরা আগের ও বর্তমান চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে পুটি বালার জন্য একটি কার্ড করে দেবার কথা বলেছি। সবাই বলে, করে দিবো। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই বয়স্ক মানুষটাকে কেউ একটা কার্ড করে দিতে পারল না।
এ বিষয়ে ৮নং ওয়ার্ডের ছোটভাটপাড়া গ্রামের কাদের মেম্বার বিডি২৪লাইভকে জানান, আমি তাদের ১০ টাকা কেজি চাউলের আওতায় এনে দিয়েছি। পরবর্তীতে পুটি বালার বয়স্ক অথবা বিধবা ভাতা যে কোনো একটি কার্ড করে দিবো।
এ ব্যাপারে ১নং সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াস রহমান মিঠু বিডি২৪লাইভকে জানান, এবার যখন বয়স্ক/ বিধবা ভাতা কার্ড বণ্টন করা হয় তখন আমি রাজনৈতিক মামলায় জেলে ছিলাম প্যানেল চেয়ারম্যান এই কার্ড গুলি বণ্টন করেছে। তবে আমি আগামিতে পুটি বালাকে বয়স্ক অথবা বিধবা ভাতা যে কোনো একটি কার্ড করে দিবো।
বিডি২৪লাইভ/টিএএফ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: