মসজিদে হামলার ঘটনায় মুসলমানদেরই দুষলেন অস্ট্রেলিয়ান সিনেটর?

প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০১৯, ১০:৩৪ পিএম

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টার্চে আল নূর মসজিদ ও লিনউড মসজিদে খ্রিস্টান বন্দুকধারীদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের নিহতের তথ্য দিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে রয়েছেন তিন বাংলাদেশিও।

তাছাড়া আহত হয়েছেন আরও অর্ধশত লোক। যার মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছেন অন্তত আটজন। বর্বর এই হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। পাশাপাশি হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন তারা।

ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলাকারী ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। হামলাকারীর পরিচয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, হামলাকারী কট্টর ডানপন্থী। তাঁর নাম ব্রেন্টন টেরেন্ট (২৮)।

নিজেকে ব্রেনটন ট্যারেন্ট বলে পরিচয় দেয়া এক হামলাকারী নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানিয়ে একটি ম্যানিফেস্টোতে এ তথ্য প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি ওই হামলা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন।

তবে, এ ঘটনার কারণ হিসেবে নিউজিল্যান্ডের ইমিগ্রেন্টকে দায়ী করেছে অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ফ্রেসার আনিং।

তিনি এ হামলাকে সন্ত্রাসী ঘটনার পরিবর্তে এটিকে ‘সহিংস সতর্কতা’ বলেছেন। হামলা নিয়ে আনিং এক বিবৃতিটি বলেছেন, মুসলিমদের উপস্থিতি বাড়ার ফলে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড উভয় সম্প্রদায়ের ভয়কে বাড়িয়ে তুলছে।

ডানপন্থী সন্ত্রাসবাদ, বন্দুক আইন বা ক্রমবর্ধমান বর্ণবাদকে ননসেন্স বলে উল্লেখ করেন। তিনি এ রক্তপাতের কারণ হিসেবে বলেন, নিউজিল্যান্ডের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা মুসলিম ধর্মান্ধদের অনুমোদন দিয়েছে।

এদিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এ ঘটনার নিন্দা জানাননি। তবে এটিকে তিনি ন্যক্কারজনক উল্লেখ করেছেন।

ফ্রেসার আনিং হত্যার কারণ হিসেবে যা বলেছিলেন- তার প্রতিবাদ জানিয়ে মরিসন টুইটারে বলেন, তার এ ধরনের বক্তব্য ন্যক্কারজনক। তিনি বলেন, এ ধরনের মতামত অস্ট্রেলিয়াতে কোনো স্থান নেই। এটা অস্ট্রেলীয় সংসদ।

মরিসন আগে বলেছিলেন, মারাত্মক দুই হামলাকারীর মধ্যে একজন সন্দেহভাজন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক।

শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের আল নূর ও লিনউড মসজিদে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

এদিকে নিউজিল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য জরুরি যোগাযোগের নম্বর দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ করা যাবে অনারারি কনসাল শফিকুর রহমান +৬৪২১০২৪৬৫৮১৯, ক্যানবেরায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার তারেক আহমেদ +৬১৪৫০৬৫৭০৪৬।

এছাড়া জরুরি যোগাযোগের আরও দুটি নম্বর দেওয়া হয়েছে। নম্বরগুলো হলো, +৬১৪২৪৪৭২৫৪৪ ও +৬১৪৫০১৭৩০৩৫।

প্রসঙ্গত, হামলা চালানোর সময় সামাজিক মাধ্যমে লাইভে ছিলেন ওই হামলাকারী। ১৭ মিনিট ধরে ওই হামলার লাইভ ভিডিও প্রচারিত হয়। ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান-বংশোদ্ভূত ওই হামলাকারী নিজেকে সাধারণ শ্বেতাঙ্গ নাগরিক বলে উল্লেখ করেছেন।

সেই লাইভ ভিডিয়ো থেকে দেখা যায়, তার বন্দুকে লেখা আছে আলেসান্দ্রে বিসনেত্তা এবং লুকা ত্রাইনির নাম। ২০১৭ সালে কানাডাতে একটি মসজিদে হামলা চালিয়ে ছয় নিরপরাধকে হত্যা করেছিল আলেসান্দ্রে বিসনেত্তা। ২০১৮ সালে ইতালিতে আসা শরণার্থী আফ্রিকানদের উপর গুলি চালিয়েছিল লুকা ত্রাইনি। এর থেকেই স্পষ্ট, কৃষ্ণাঙ্গ এবং মুসলিম বিদ্বেষই ছিল এই শ্বেতাঙ্গ বন্দুকবাজের মতাদর্শের মূল কথা।

&dquote;&dquote;কৃষ্ণাঙ্গ এবং মুসলিম বিরোধী ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হলেও কোনও দলের সাথে সে যুক্ত নয়, এমনটাই জানানো হয়েছে তার ইস্তেহারে। এমনকি নিজের কাজের জন্য তার কোনও অনুশোচনা থাকবে না বলেও জানিয়েছে এই বন্দুকধারী।

হামলা চালানোর সময় লাইভে ওই হামলাকারী বলেন, এই হামলা চালানো হয়েছে তাদের এটা দেখানোর জন্য যে, আমাদের দেশ কখনওই তাদের হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত একজন শ্বেতাঙ্গও বেঁচে আছেন ততক্ষণ আমাদের দেশ আমাদেরই। তারা কখনোই আমাদের ভূমি দখল করতে পারবে না। তারা কখনোই আমাদের লোকজনের জায়গা দখল করতে পারবে না।

দু’বছর ধরেই হামলা চালানোর পরিকল্পনা করে আসছেন বলে জানিয়েছেন ব্রেনটন। তিনমাস আগেই ক্রাইস্টচার্চে হামলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে নিউজিল্যান্ডই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তার ওই বক্তব্যে তিনি ইসলামপন্থি জঙ্গি ও অভিবাসীদের `হামলাকারী` উল্লেখ বলেন, নিউজিল্যান্ডে হামলার মাধ্যমে তিনি সবার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: