ধান ক্ষেতে ইটভাটা, হুমকির মুখে ফসলি জমি

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০১৯, ০৫:৩৮ পিএম

আইন ও নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নীলফামারী সদর, ডোমার, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর ও জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ধান ক্ষেতে ইটভাটা গড়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসন কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের চোখের সামনে ইটভাটা মালিকরা অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মান করছেন এমন অভিযোগ করছেন কৃষকেরা।

ইটভাটার মালিকরা নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা করছে না, এতে হুমকীতে পড়েছে ফসলি জমি পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫, পরিবেশ বিধিমালা- ১৯৯৭, ইটপোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০১ এবং শব্দ দূষণ বিধিমালা-২০০৬ আইন থাকলেও অবৈধ ইটভাটার মালিকরা তা মানছে না।

নীলফামারী সদরের অধিকাংশ ইটভাটাগুলি ও ডোমারের এম আই ব্রিকস জলঢাকার এইচএন্ডএস সহ জেলার অধিকাংশ ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তর, কৃষি অফিসের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ছাড়া ঝিকঝ্যাঁক, ড্রাম চিমনী (ব্যারেল) ও কাচা ইট পোড়ানোর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনীর ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে।

জ্বালানী হিসেবে অনেক ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহারের জন্য গ্রাম থেকে বিভিন্ন জাতের গাছ কেটে এনে ভাটায় পোড়াচ্ছে। এত পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক হুমকির আশংকা করেছে পরিবেশ বাদীরা। কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মান করায় ফসল নষ্ট হচ্ছে। দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি।

২০১৪ সালের ১লা জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন সংশোধিত আইনের ৮(১) অনুযায়ী লোকালয়, আবাসিক ও পৌরসভা এলাকায় এবং কৃষি জমিতে ইট ভাটা স্থাপন ও ইট পোড়ানো আইনগত নিষিদ্ধ। একই আইনের ৫ ধারায় ইট প্রস্তুত কাজে কৃষি জমির উপরিভাগ এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ব্যতিত পুকুর, খাল, বিল, দিঘী, ধাঁড়ি ও নদী থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার করাও দন্ডনীয় অপরাধ।

এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা ইউনিয়ন বা গ্রামীন সড়ক ও এলজিইডি রাস্তা থেকে কমপক্ষে ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। প্রায়ই ইটভাটা গুলি রাস্তা সংলগ্ন স্থাপন করেছেন। আইন অনুযায়ী আবাদি জমিতে বা ভাটার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ৫০টি গাছ বা বাগান থাকলে ভাটা স্থাপনের কোন নিয়ম নেই।

লোকালয় থেকে তিন কিলোমিটার দুরে যেখানে জনবসতি নেই এমন জায়গায় ইট ভাটা নির্মাণ করতে হবে কিন্তু নীলফামারীতে কৃষি জমি দখল করেই প্রতি বছর গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন নতুন ইটভাটা। একই সাথে ইটভাটার জন্য সর্বোচ্চ দুই একর জমি ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ইটভাটায় এ নিয়ম মানা হচ্ছে না।

জেলা কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তর সূএে জানা যায়, কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মানের জন্য আমরা কোন ছাড়পত্র দেইনী। যদি কেউ করে থাকে তাহলে অবৈধ ভাবে করেছে। কৃষি জমিতে ইটভাটা করলে ফসলি জমি নষ্ট হয়ে থাকে এবং ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। ইটভাটাগুলি প্রত্যায়ন ছাড়াই তৈরী হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়ার সহকারী পরিচালক বলেন, ইটভাটা নির্মান করতে হলে পরিবেশের ছাড়পএ লাগবে। পরিবেশের ছাড়পএ ছাড়া ইটভাটা নির্মান করতে পারবেনা। কিন্তু অনেক ইটভাটা মালিকেরা আইন অমান্য করে অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মান করেছে। যা পরিবেশ মারাত্মক হুমকীর মুখে পড়ছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ইটভাটা গুলিতে পরিবেশের ছাড়পত্র ও কৃষি প্রত্যয়ন না থাকলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিডি২৪লাইভ/আরআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: