পরকীয়ার জেরে স্বামীকে খুন করল স্ত্রী! এরপর...

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০১৯, ০৯:৩৯ এএম

স্বামীকে নিজ হাতে খুন করেছে স্ত্রী। স্বামীকে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পরও স্ত্রীর চোখে-মুখে কোনো অনুশোচনার ছাপ ছিল না। তদন্তকারীদের জেরায় খুনের কথা অকপটে স্বীকারও করে নেন তিনি। সে সময় বেশ শক্ত অবস্থানেও ছিলেন অভিযুক্ত স্ত্রী।।    

আর এটা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তারাও। পরে নিজের ভুল বুঝতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ওই তরুণী।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বেলুড়ের নিস্কো হাউজিং চত্বরে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

অগ্নিদগ্ধ যুবক আশুতোষ মালির লাশ উদ্ধারের পরে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তার স্ত্রী কুমকুমকে। পাশাপাশি খুনে সাহায্য করার অভিযোগে কুমকুমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুমন কুমার ধরা পড়ে।

পুলিশ জানায়, প্রথম দিকে জেরায় সুমন বার বার কান্নায় ভেঙে পড়লেও কুমকুমের মধ্যে অনুশোচনার লেশমাত্র দেখা যেত না। কিন্তু পরে পুলিশি জেরার মুখে কুমকুম স্বীকার করেছে যে, খুন করাটা তার ভুল হয়েছিল। তখন অবশ্য কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তিনি।

২৭ বছর বয়সী ওই তরুণী তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, সুমনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানতে পারার পর থেকেই আশুতোষ তাকে প্রচণ্ড মারধর করতেন। শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরেই খুনের পরিকল্পনা করেছিল সে।

কুমকুম পুলিশকে বলেছে, স্বামীকে খুন না করে বাচ্চাদের নিয়ে অন্যত্র পালিয়ে গেলেই ভালো হতো বলেও ওই তরুণী দুঃখ প্রকাশ করেন।

চলতি মাসের গত ১৭ মার্চ সকালে আশুতোষের লাশ উদ্ধার হয়েছিল। এরপরের দিন সন্ধ্যায় প্রথমে গ্রেফতার হয়েছিল কুমকুম। পরে হাওড়া স্টেশনের বাইরে থেকে ধরা হয় ভারতের দিল্লির বাসিন্দা সুমনকে।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, প্রথমে বিষ খাইয়ে, তার পরে ছুরি দিয়ে বুকে আঘাত করে আশুতোষকে খুন করেছিল স্ত্রী কুমকুম। আর সেই মরদেহ লুকাতেই সুমন ও তার বন্ধু লালু সাহায্য করেছিল তাকে। মরদেহ বস্তায় ভরে বাড়ি থেকে কয়েকশো মিটার দূরে আবর্জনার স্তূপে নিয়ে ফেলেছিল ওই দুই যুবকই। এরপরে কেরোসিন তেল ঢেলে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল আশুতোষের লাশ।

সুমন পুলিশকে জানিয়েছে, দিল্লিতে তার একটি চাউমিনের দোকান রয়েছে। কুমকুমের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাই ওই তরুণীর কথা সে ফেলতে পারেনি। খুনে সাহায্য করতে চলে এসেছিলেন কলকাতায়। সুমন আরও জানিয়েছেন, কুমকুম তাকে বলেছিলেন, ‘আশুতোষ মরে গেলে আমি বাচ্চাদের নিয়ে থাকব। খুনটা আমিই করব। তুমি শুধু দেহটা গায়েব করতে সাহায্য করো। তার পরে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়ো।’

এর মাস খানেক পরে সুমনের বিয়ের দিনক্ষণ এবং তারিখও ঠিক হয়ে গিয়েছিল।

পুলিশ তদন্তে নেমে নিহত আশুতোষের মরদেহ লোপাট করতে ব্যবহৃত সেই সাইকেলটিও উদ্ধার করেছে, যাতে চাপিয়ে আশুতোষের দেহ ওই আবর্জনার স্তূপ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন সুমন ও লালু। তবে সুমন ধরতে পারলে গেলেও এখনো খোঁজ মেলেনি লালুর। উদ্ধার হয়নি খুনে ব্যবহৃত ছুরি ও আশুতোষের মোবাইলটিও।

এদিকে কুমকুমের দাবি, সেগুলো রয়েছে লালুর কাছেই। তাই ছুরি ও মোবাইলের সঙ্গে লালুরও খোঁজ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ জানায়, বেলুড়ের ওই দগ্ধ লাশ নিয়ে তৈরি হয়েছিল জটিলতাও। আর একটি পরিবার দাবি করেছিল, ওই লাশ তাদের নিখোঁজ ছেলের। দাবি ওঠে ডিএনএ পরীক্ষারও। তবে আশুতোষের খুনিরা যেখানে খুনের কথা স্বীকার করে লাশ ফেলার জায়গাও দেখিয়ে দিয়েছে, সেখানে লাশটি যে তারই, সে বিষয়ে পুলিশ মোটামুটি নিঃসংশয় ছিল।

তবে পুলিশ জানায়, পোড়া লাশটি ভালোভাবে দেখার পরে ওই পরিবার অবশ্য জানিয়েছে, সেটি তাদের ছেলের নয়। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) আশুতোষের বাবার হাতে লাশটি তুলে দিয়েছে পুলিশ।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: