নতুনদের কেন কোম্পানি চাকরি দিতে চায় না?
সব দোষ কি শুধুই কোম্পানির, নাকি শিক্ষা ব্যবস্থার, নাকি আমাদের শিখার ইচ্ছার অভাব! প্রথমত আমি বলব আমাদের নিজেদের শিখার ইচ্ছার অভাব। অনেকেই বলে থাকে মামা-চাচা না থাকলে চাকরি হয়না, এ কথার সাথে আমি মোটেও একমত নই। আমি যতগুলো নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে ছিলাম কখনোই এই ধরণের কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি, আমি সঠিক ব্যাক্তিকেই নিয়োগ দিতে পেরেছি। এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজারের বেশী সিভি দেখেছি এবং ২০০ এর বেশি ইন্টার্ভিউ নিয়েছি। সেই বাস্তবতা থেকেই কিছু পয়েন্ট বের করেছি যেগুলোর কারনে প্রথমেই অনেকে বাদ পরে যায়, সেগুলো হচ্ছে-
১. সিভি নিজে না করে অন্য কারও মাধ্যমে তৈরি করানো। যার ফলে ইন্টারভিউ বোর্ডে সিভি থেকে কিছু প্রশ্ন করলে তেমন কিছু বলতে পারে না। সিভি বেশি হলে ২ পেইজের বেশি করা্ যাবে না। যা লিখবেন মনে রাখবেন সেখান থেকেই আপনাকে বেশি প্রশ্ন করা হবে। সুতরাং অন্যের মাধ্যমে সিভি করানো থেকে বিরত থাকুন।
২. অনেকেই ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে বললে এক-দুই লাইন বলার পর আর তেমন কিছু বলতে পারে না। সুতরাং ইন্টারভিউ বোর্ডে যাওয়ার আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে ফেলবেন।
৩. প্রশ্ন কি নিয়ে করবে। যেহেতু আপনার অভিজ্ঞতা নেই সুতরাং আপনাকে বই থেকেই প্রশ্ন করবে। কিন্তু প্রশ্ন করলেই বলবেন অনেক বছর আগে পড়েছি মনে নেই। তাই সময় থাকতেই ভাল করে পড়াশুনা করুন। আপনি যে বিষয়ে লেখা পড়া করেছেন সেখান থেকেই প্রশ্ন করার সম্ভবনাই বেশি।
৪. পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শর্ট কোর্স করুন। সবাই তো একই পড়া পড়ছেন, অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে কিছু শর্ট কোর্স করে ফেলুন। পাশাপাশি নিয়মিত সেমিনারে অংশগ্রহণ করুন।
৫. কম্পিউটার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখত হবে। বিশেষ করে- এমএস ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট, ইন্টারনেট ব্রাওজিং সম্পর্কে খুব ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। এগুলো ছাড়া চাকরি পেলেও টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে ভবিষ্যতে।
৬. অভিজ্ঞতা না থাকলে, টাকার দিকে না তাকিয়ে আপাতত ঢুকে যান। মনে রাখবেন আপনার মত আরও অনেকেই ওই পোস্টের জন্য অ্যাপ্লাই করেছে। আর অভিজ্ঞতা থাকলে বুঝে শুনে আগান।
৭. আপনাকে কেন নিবে, কখনো ভেবেছেন? মার্কেটে হাজারও মানুষ চাকরি খুঁজছে। ভাবেন, আপনার ভালো দক্ষতা কি? সেইখানে আরও জোর দিন।
৮. চাকরি পাওয়ার ৭ দিন পরেই হয়তো বলবেন আপনার কাজটা ভালো লাগছেনা অথবা অন্য কোন সমস্যা। এই সমস্যা কারনেই কোন কোম্পানীগুলো ঝুঁকি নতুনদের নিয়োগ দিতে চায়না। যত কষ্টই হক ২ বছরের আগে বের হবেন না। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, এসব কারনেই কোম্পানিগুলো ভয় পায় নতুনদের নিতে। মনে রাখতে হবে চাকরি করলে কষ্ট করতেই হবে, সেটা যেখানেই হোক।
৯. অন্য কে কি করছে বা কি পাচ্ছে সেটা না দেখে যেটা পাচ্ছেন, সেটাতেই খুশি থাকুন, দেখবেন মনটা অনেক হালকা লাগছে।
১০. সব সময় এক কপি সিভি নিজের সাথে রাখবেন। ই-মেইলে সিভি পাঠালে অবশ্যই পিডিএফ করে দিবেন এবং ই-মেইলের বডিতে বিস্তারিত লিখবেন। অবশ্যই সাবজেক্ট লিখতে ভুলবেন না।
১১. ইন্টারভিউতে অবশ্যই মোবাইল বন্ধ করে ঢুকবেন, মার্জিত পোশাক পরবেন। মনে রাখবেন সব প্রশ্নের উত্তর আপনি জানবেন না বা জানার কথাও না, বিনিতভাবে দুখিঃত বলবেন, না জানা থাকলে।
১২. সিভিতে চেষ্টা করবেন একটি মোবাইল নম্বার লিখতে এবং সবসময় খোলা রাখবেন। নিজের নাম দিয়ে ই-মেইল অবশ্যই খুলবেন এবং আ্যপ্লাই করার পর প্রতিদিন একবার হলেও চেক করবেন। যেখানে অ্যাপ্লাই করছেন সেগুলার একটা তালিকাও রেখে দিবেন যাতে পরে মিলিয়ে দেখতে পারেন।
১৩. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের নাম দিয়েই প্রোফাইল খুলবেন। এখন সিভির পাশাপাশি আপনার সামাজিক যোগাযোগের প্রোফাইলও দেখা হতে পারে।
১৪. প্রতিনিয়ত চেষ্টা করুন নেটওয়ার্ক বড় করার। প্রয়োজন না থাকলেও বড় ভাইদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করুন। যা পরবর্তীতে কোন না কোন ভাবে কাজে লাগবে।
১৫. ইন্টারভিউ দেয়ার আগে অবশ্যই কোম্পানির সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে যাবেন এবং অন্যান্য (ওই কোম্পানি সম্পর্কিত) কোম্পানি সম্পর্কেও ভালো ভাবে জেনে নিবেন। এ ক্ষেত্রে গুগল আপনাকে সহয়তা করবে।
১৬. ইন্টারভিউ থেকে ডাকলে অবশ্যই যাবেন। মনে রাখবেন যত ইন্টারভিউ দিবেন তত অভিজ্ঞতা বাড়বে।
১৭. ইংলিশ ছাড়া গতি নেই। যত তারাতারি সম্ভব শিখে ফেলুন।
১৮. চাকরি নাই, চাকরি নাই করছেন? কিন্তু এ পর্যন্ত কতোগুলো কোম্পানিতে আ্যপ্লাই করেছেন? আ্যপ্লাই করতে থাকুন এবং যেখানে করছেন চেষ্টা করুন খুঁজে বের করতে, পরিচিত কেউ ওই কোম্পানিতে কাজ করছে কিনা, থাকলে তার নিকটও সিভি পাঠিয়ে দিন। শুধু পাঠালেই চলবেনা তার সাথে যোগাযোগও রাখতে হবে।
১৯. শুধু চাকরির পোর্টালে আ্যপ্লাই করলেই চলবে না। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলাতেও খেয়াল রাখতে হবে। বিভিন্ন গ্রুপে থাকতে হবে এবং কথা বার্তা বলতে হবে যাতে অন্যরাও আপনার সম্পর্কে জানতে উৎসাহি হয়।
২০. কোম্পানি যদি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক পেয়ে যায় তাহলে আপনাকে না নেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই বলে মন খারাপ করে বসে থাকলে চলবে না, চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
মনে রাখতে হবে যুগে যুগে কিছু পরিবর্তন আসে, অভিজ্ঞ বা বয়ষ্ক লোকেরা সেটা কিন্তু পারবেনা আপনার চেয়ে ভালো। একটু ভেঙে বলি, এখন ডিজিটাল যুগ সুতরাং আপনাকে ডিজিটালাইজেশন ও ই-কমার্সে অভিজ্ঞ হতে হবে যাতে কোম্পানি শুধু মাত্র ওই অভিজ্ঞতার জন্যই আপনাকে নিতে বাধ্য হয়।
২১. সবশেষে বলি, সব মানুষ যেমন ভালো না তেমনি সব কোম্পানিও ভালো না। এর মাঝেও অনেক কোম্পানির কর্মকর্তারা আছেন যারা ইন্টারভিউতে যোগ্য লোক পেলে তাকে ছাড়তেও চান না। কিছু সময় দরকার হলে নতুন পদও তৈরি করা হয় তার জন্য। চাকরির বাজারে এখনও প্রচুর চাকরির সুযোগ রয়েছে কিন্তু দক্ষ লোকের অভাবে অন্য দেশ থেকে লোক আনতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আমরা এমন এক আজব জাতি হিসেবে তৈরি হচ্ছি প্রতিনিয়ত, না জানি ভালো ভাবে শুদ্ধ বাংলা বলতে আবার না জানি ইংলিশ। বাংলা যেহুতু আমাদের মাতৃভাষা তাই শুদ্ধু ভাবে বাংলা বলাটা বাঞ্ছনীয়। ইন্টাভিয়ার যে ভাষায় কথা বলবেন সেই ভাসাতেই উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবেন সবসময়।
এছাড়াও আরও অনেক কিছুই আছে, যদি কেউ সরাসরি ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলতে চান তবে ব্র্যান্ড মেনিয়া (BrandMania) গ্রুপে লিখুন আমরা যথাযথ চেষ্টা করব সহয়তা করার।
লেখক :
মোহাম্মদ আজমাঈন রহমান (শাওন)
ব্র্যান্ড ম্যানেজার
হালদা ভ্যালী ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড।
বিডি২৪লাইভ/আরআই
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: