জ্ঞান হারাচ্ছেন ভাই; নির্বাক মা, সুবিচার চাইলেন বাবা (ভিডিও)

প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৩৩ এএম

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় তার মা-বাবা-ভাইসহ পরিবারের সবাই ভেঙে পড়েছে।

নুসরাতের মৃত্যুর খবর শুনে নির্বাক মা শিরিন আক্তার। নিথর হয়ে পড়ে আছেন হাসপাতালের বিছানায়।

বাবা আবু মুসা কিছুক্ষণ পরপর হাউমাউ করে কেঁদে উঠছিলেন। বলছিলেন, ‘আহা! আমার মেয়ে বাঁচতে চেয়েছিল। ওরা আমার মেয়েকে আগুন দিয়ে পুড়ি মারল।’

ছোট ভাই রায়হানের বুকফাটা কান্না। মুখে কোনো কথা নেই তাঁর।

বাবার সঙ্গে চেয়ারে বসে কাঁদছিলেন নুসরাতের বড় ভাই নোমান। কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। জ্ঞান ফেরার পর আবার কাঁদছেন।

এমন দৃশ্য বুধবার (১০ এপ্রিল) রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ(ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।

বুধবার রাত সোয়া ১০টায় আইসিইউর বাইরে তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। তাকে দেখে নুসরাতের বাবা ও ভাই জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকেন।

এ সময় ডা. সামন্ত লাল সেন তাকে বলেন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি তাও আপনার মেয়েকে বাঁচাতে পারলাম না।

কান্না ভেজা চোখে নুসরাতের বাবা বলেন, আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন, আমি নিজে দেখেছি। আপনাদের কোনো ত্রুটি ছিল না। আপনারা আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন। যেন আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করেন। আপনারা আমাদের দেখে রাখবেন।

এসময় নুসরাতের খালাতো বোন ফরিদা বলছিলেন, আর কোনো মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা নুসরাতের ভাই রায়হান হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। ছেলের কান্না দেখে বাবা মুসাও কাঁদতে থাকেন। আর বলছিলেন, ‘আমি বিচার চাই। ন্যায় বিচার চাই।’ মুসা তখন বার্ন ইউনিটের লিফট দিয়ে নিচে নামছিলেন।

লিফটের ভেতরে মেয়ের নাম বলে কেঁদে ওঠেন। বলেন, ‘আমি সুবিচার চাই। আইনে যে শাস্তি আছে, সেই শাস্তি চাই।’ তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নুসরাতের খালাতো বোন ফরিদা বলে ওঠেন, ‘চাওয়া পাওয়া একটাই, সিরাজ উদ দৌলার ফাঁসি চাই। আর কিছু চাই না।’

রাত সাড়ে ১১টার পর গাড়িতে করে মুসা ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল চত্বর ছেড়ে যান।

যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা করেন নুসরাতের মা। ছাত্রীর স্বজনদের অভিযোগ, মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় অধ্যক্ষের পক্ষের লোকজন নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

নুসরাতের পরিবারের অভিযোগ, পরীক্ষা দিতে সকালে কেন্দ্রে প্রবেশের আগে নুসরাতকে কয়েকজন মুখোশ পরা মেয়ে ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। তারা নুসরাতকে বলে তার এক বান্ধবীকে ছাদে পেটানো হচ্ছে।

পরিবারের পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ করা হয়, নুসরাতকে মিথ্যা বলে, পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসানের অভিযোগ, কয়েক দিন আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা করেছিল নুসরাত। সেই কারণে অধ্যক্ষের পক্ষের শিক্ষার্থীরা তার বোনকে পুড়িয়ে মেরেছে।

জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা নুসরাতকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ ঘটনায় পুলিশের কাছে মামলা করে নুসরাতের পরিবার। পরে পুলিশ ওই মামলার জেরে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।

নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসানের আরও জানায়, আগুন লাগার পর নুসরাত আমাকে জানিয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ওই মামলা তুলে নিতে নুসরাতকে চাপ দেয় অধ্যক্ষের পক্ষের কিছু শিক্ষার্থী। নুসরাত মামলা তুলে নেবে না জানালে তারা তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন সকালে আমার বোনের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা ছিল। আমি ওকে পরীক্ষার হলে দিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোহাম্মদ মোস্তাক আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেয় নাই।

নুসরাতকে প্রথমে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পাঠানো হয় ২৫০ শয্যার ফেনী সদর হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সবশেষ চিকিৎসাধীন অবস্থা মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আবু তাহের জানান, নুসরাতের শরীরের ৭০-৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিলো।

এদিকে মৃত্যুর আগে পুলিশের জবানবন্দিতে নুসরাত জানিয়েছে, পরীক্ষার কেন্দ্রের বাইরে তাকে কয়েকটি মুখোশপরা মেয়ে ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় তারা তাকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলাটি তুলে নিতে বলে। নুসরাত তাতে অস্বীকৃতি জানালে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে মুখোশপরা মেয়েদের পরিচয় জানাতে পারেনি নুসরাত।

সোনাগাজি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় তদন্তকাজ অব্যাহত রয়েছে। ঘটনার সম্ভাব্য সব কারণ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। তদন্তে অভিযুক্ত কেউ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন...

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: