প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা, রাস্তার বেহাল দশা

প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৪৫ পিএম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) থেকে কুমিল্লা শহরের দূরত্ব ১১ কিলোমিটারের মত। কিন্তু এই ১১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতেই প্রতিদিন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের। শুধু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ই নয় কোটবাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ-পাশসহ এই অঞ্চলে রয়েছে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এই অঞ্চলের রাস্তার বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়তই ছোট বড় দুর্ঘটনায় পড়তে হয় শিক্ষার্থী, সাধারণ জনগণসহ পর্যটকদের।

শালবন বিহার, ময়নামতি যাদুঘর, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), কুটিলা মুড়া, রুপবান মুড়া, নব শালবন বিহার, ব্লু ওয়াটার পার্ক, ডাইনো পার্ক, মেজিক প্যারাডাইস পার্কসহ বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও বিনোদনের জন্য পার্কসহ দর্শনীয় স্থানগুলোর অনেকগুলোই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশসহ এই অঞ্চলে অবস্থিত। কিন্তু এই স্থানে আসতে হলে দর্শনার্থীদেরও পোহাতে হয় নানাবিধ সমস্যা। রাস্তাটির বেহাল দশার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনসহ দর্শনার্থীদের ও মানুষ চলাচলের যানবাহনগুলো প্রায়শই রাস্তায় আটকে থাকতে দেখা যায়। রাস্তার কিছু কিছু অংশের মেরামতের কাজ করলেও তেমন কোন উপকার হয়নি বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

তাছাড়া কোটবাড়ির আশেপাশেই রয়েছে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে বোর্ড কলেজ, বর্ডার গার্ড স্কুল এণ্ড কলেজ, ল্যাবরেটরি স্কুল, সিসিএন পলিটেকনিক, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চলাচলের রাস্তাটির দিকে তাকালে মনে হয় যেন এই অঞ্চলটিই পরিত্যক্ত। রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করলেও বেশ কিছু স্থানের রাস্তার পিচের কার্পেটিং তুলে ইট সুড়কি দিয়ে আরও বেহাল অবস্থা করে রেখেছে। আবার বৃষ্টি হলে পানি জমে সৃষ্টি হয় নানাবিধ সমস্যা। কোথাও হয়ে পড়ে চলাচলের অনুপযোগী। গাড়ি চলাচলসহ মানুষ পারাপারের অনুপযোগী এমনকি বৃষ্টির সময় রাস্তার অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না অনেক স্থানে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কুমিল্লা শহর পর্যন্ত প্রধান সড়কটি অনেকদিন থেকেই অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে আস্তে আস্তে বৃষ্টির পানি জমে বর্তমানে সেগুলো এখন বড় আকার ধারণা করেছে। কোন কোন স্থানে ইট সুড়কি দিয়ে ভরাট করলেও সেগুলো আরও ভয়ংকর অবস্থা ধারণ করেছে। কোথাও কোথাও পানি জমে রাস্তার অস্তিত্বই বিলীন করে দিযেছে। যার ফলে নিয়মিতই ছোট বড় দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে যানবাহনগুলো। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোটবাড়ি পর্যন্ত সড়কটির এক পাশে ড্রেনের কাজ সম্পন্ন হলেও হয়নি রাস্তার কাজ। ফলে বৃষ্টির পানি রাস্তাতেই জমে থাকে। ড্রেনগুলো আরও যেন ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া রাস্তার ছোট বড় গর্তগুলো এখন বড় বড় মৃত্যুকূপে পরিনত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পরিবহনগুলো প্রায়শই রাস্তা অব্যবস্থাপনার কারণে পথিমধ্যে বিকল হয়ে পড়ে। যাতে সমস্যার সম্মুখীন হয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা।

কোটবাড়ি থেকে কোটবাড়ি বিশ্বরোড পর্যন্ত রাস্তাটিরও মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। কয়েকটি কালভার্টের কাজ শেষে রাস্তার সাথে সংযোগ অংশেও রয়েছে ইট, বালু, সুড়কি এমনকি শুধু মাটি ফেলা। সব থেকে ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছে কোটবাড়ি বিশ্বরোড থেকে দৌলতপুর হয়ে কুমিল্লাা শহরে যেতে রাস্তাটির। এ রাস্তাটির সামান্য অংশ ভালো থাকলেও অধিকাংশ অংশেই রয়েছে ছোট-বড় গর্ত। কিছু কিছু অংশে ইটের সলিং দিয়ে যান চলাচলের জন্য ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। তবে তা বৃষ্টি হলেই আরও বেশি দুর্ভোগের কারণ হয়। এ রাস্তাটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যরাসহ পথচারীরাও বেশ বিপাকে রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে রাস্তা সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একটি রাস্তা থাকা সত্বেও আমরা কোটবাড়ির দিকের রাস্তাটি ব্যবহার করে আসছি। কিন্তু এটিও চলাচলের জন্য পুরোপুরি অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমাদের চলাচলের বাসসহ আমরা যখন এই রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করি আমরা বিভিন্ন ছোট-বড় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও এই রাস্তাটি তত্বাবধানে যারা রয়েছেন তাদের নিকট জোর দাবি থাকবে যাতে আমরা খুব তাড়াতাড়ি এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাই।’

এই রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিনই হাজার হাজার শিক্ষার্থীসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকদের চলাচল করতে হয়। শালবন বিহারে ঘুরতে আসা কয়েকজন বিদেশী পর্যটকসহ দেশী পর্যটকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ‘কোটবাড়ি বিশ্বরোড থেকে শালবন আসতে রাস্তাটির অবস্থা খুবই নাজেহাল। এতো সুন্দর একটি দর্শনীয় স্থানে আসার রাস্তাটির এমন বেহাল দশা কোনভাবেই কাম্য নয়।’

রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হক এন্টারপ্রাইজের মালিক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ এনামুল হক বলেন, ‘আমরা আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে কাজ বন্ধ রেখেছি। আবহাওয়া ভাল থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যেই কাজ শুরু করব।’

রাস্তাটি নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি ভাবছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব রাস্তাটির উন্নয়ন করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তাহের বলেন,‘আমরা প্রতিনিয়ত রাস্তাটি সংস্করণের জন্য এ ওয়ার্ড কমিশনার এবং কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে বলে আসছি। কিন্তু এ কাজের তেমন কোন অগ্রগতি নেই। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব রাস্তা এই মুহূর্তে করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে এটা নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে।’

এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর সাথে কথা বলার জন্য বার বার ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: