বাংলাদেশের শ্রমিকরা কি অধিকার আদায় করতে পারছে?

প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ০১:০৩ এএম

বেতন কিংবা শ্রম অধিকার প্রশ্নে এখনও বঞ্চিত বাংলাদেশের শ্রমিকরা। নিশ্চিত হচ্ছে না তাদের ন্যূনতম জীবনমান। কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খাত পরিবহন এবং নির্মাণ শিল্প। গেল ১০ বছরে এ দুই খাতে নিহত হয়েছে তিন হাজার ১৮৭ জন শ্রমিক। এদিকে ২০১৮ সালে সব খাত মিলিয়ে দেশে শ্রমিক আন্দোলন হয় ৩৩৪টি।

সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয় গার্মেন্টস খাত। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) ‘বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি, শ্রমিক আন্দোলন, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, শোভন কাজ ও শ্রমবাজার সংক্রান্ত’ এক জরিপের প্রতিবেদনে উঠে আসে এমন তথ্য। জরিপ প্রতিবেদন বলছে, শ্রম মান নিশ্চিত করতে হলে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।

কর্মক্ষেত্রে বেড়েছে মৃত্যু: বিলস পরিচালিত জরিপের তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পরিবহন খাতে নিহত হয়েছে ২১৮৬ জন শ্রমিক। এর মধ্যে ২০০৯ সালে সর্বনিম্ন ২৬ জন শ্রমিক নিহত হয় আর ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ৪২৪ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে। এ ছাড়া ২০১০ সালে ২১৭ জন, ২০১১ সালে ২৫৬ জন, ২০১২, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে সমান ২৪৯ জন করে শ্রমিক নিহত হয়েছে।

অন্যদিকে পরিবহন খাতের মতো নির্মাণ খাতেও প্রতি বছর শ্রমিক নিহতের সংখ্যা বেড়েছে। এখানেও গেল ১০ বছরে নিহত হয়েছে ১০০১ জন শ্রমিক। এর মধ্যে ২০০৯ সালে সর্বনিম্ন ৫৬ জন এবং ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ১৬১ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণ খাতে ২০১০ সালে ৭৩ জন, ২০১১ সালে ১১১ জন, ২০১২ সালে ১১৩ জন, ২০১৩ সালে ৯৫ জন, ২০১৪ সালে ১০২ জন, ২০১৫ সালে ৬১ জন, ২০১৬ সালে ৮৫ জন এবং ২০১৭ সালে ১৩৪ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে।

তৈরি পোশাক খাতে গেল ১০ বছরে ১৪২৩ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত হয় ২৫ জন, ২০১২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৫। ২০১৩ সালে এ খাতে সর্বোচ্চ ১১৯৪ জন নিহত হয়। ২০১৪ সালে তা কমে ৪৬ জনে নেমে আসে। আর ২০১৮ সালে এ খাতে তিনজন শ্রমিক নিহত হয়।

মূলত অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্সসহ অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।

বেড়েছে নিখোঁজ শ্রমিকের সংখ্যা: নিখোঁজ শ্রমিকের সংখ্যা ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে বেড়েছে। ২০১৮ সালে ৭৯ জন শ্রমিক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে যেখানে ২০১৭ সালে ছিল মাত্র ৬ জন। মৎস্য খাতে এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ৬৪ জন, যা ২০১৭ সালে ছিল মাত্র ২ জন।

যে খাতে দুর্ঘটনা বেশি: কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা দায়ী। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, বিস্ফোরণ এবং ভবন ধসের ঘটনা বেশি ঘটেছে। ২০১৮ সালে মোট ১১৯০টি দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ৬৫০টি, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ১৩৪টি, বজ্রপাতের ঘটনা ১২৪টি, উপর থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে ৭৯টি, বিল্ডিং ধস ৪৮টি, পানিতে নিমজ্জিত হওয়া ২৬টি, অগ্নিকাণ্ড ২৩টি এবং বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে ২২টি।

শ্রমমান নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শ্রম মান এবং শ্রমিকদের সুরক্ষায় সচেতনতা বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় সংকটের সমাধান হচ্ছে না। গুটি কয়েক খাত নিয়ে নীতি-নির্ধারকদের কর্মপরিকল্পনা বেশি। এক্ষেত্রে সব খাতের দিকে নজর দেওয়া দরকার।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: