প্রথম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক জাদুঘর রাবি‘র শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা
নুর আলম,রাবি:
স্বাধীনতা যুদ্ধে শিক্ষক, ছাত্র, কর্মচারীদের স্মৃতি চিহ্ন নিয়ে মতিহারের সবুজ চত্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক জাদুঘর “শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা”। বাঙালীর সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতার সাথে জড়িয়ে থাকা অমূল্য সব সম্ভার নিয়ে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে ভবনটি। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি নিয়ে গড়ে উঠেছে এই জাদুঘর। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে এই সংগ্রহশালাটি ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মতিহার ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার কমপ্লে¬ক্্র এলাকায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের উত্তর-পূর্ব এবং শহীদ মিনারের পাশে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত এই ভবনটির নাম শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা।
কিন্তু এই দুর্লভ সংগ্রহশালাটি অপ্রতুল বাজেট, জনবল স্বল্পতা, স্পেস সমস্যা সর্বোপরি কর্তৃপক্ষের সতর্ক নজরদারির অভাবে দর্শনার্থীদের মন জয় করতে পারছে না ।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,ছাত্র, কর্মচারী-কর্মকর্তাসহ অনেকে শহীদ হন। তাদের আত্মত্যাগ, যুদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন আর ঐতিহাসিক দলিলপত্র স্মরণীয় ও সংরক্ষন করার প্রয়াসে ১৯৭৬ সালে এটি নির্মানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর সৈয়দ আলী আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় ১৯৭৬ সালের ২ জানুয়ারী এটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। একই বছরের ৬ মার্চ তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা আবুল ফজল সংগ্রহশালাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
জানা গেছে, শহীদ মিনার কমপে¬ক্্র এলাকায় ২ লাখ ৯ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এখানে চমৎকার স্থাপত্য নৈপুণ্যে সমৃদ্ধ মোট ৬ হাজার ৬শ বর্গফুট আয়তনের তিনটি গ্যালারি নিয়ে গড়ে উঠেছে শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালাটি। খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে সংগ্রহশালাটি যাত্রা শুরু করলেও পর্যায়ক্রমে এটি সংগ্রহের দিক থেকে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধের একটি পূণাঙ্গ সংগ্রহশালায় পরিণত হয়েছে। এতে স্থান পেয়েছে ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন চিত্রকর্ম, দলিল দস্তাবেজ, আলোকচিত্র, শহীদের ব্যবহৃত জামা, জুব্বা, কোট, ঘড়ি, পোশাক, টুপি, কলমসহ বিভিন্ন দূর্লভ জিনিস।
সংগ্রহশালায় উলে¬খযোগ্য দলিলাদির মধ্যে রয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশিদুল হাসান, সিরাজউদ্দিন হোসেন প্রমূখের রোজনামচা। শিল্পী কামরুল হাসানের অঙ্কিত মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন পোষ্টার। রয়েছে রাবি গণকবর থেকে প্রাপ্ত নাম না জানা শহীদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র। ঢাকার জগন্নাথ হলের হত্যাকান্ড, রায়ের বাজার বধ্যভূমি, রাবির গুলিবদ্ধ শিক্ষক ড.জোহার আলোকচিত্র। এখানে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষকদের জন্য এটি প্রধান সহায়ক। এখানে তিন হাজারেরও বেশি বই ও বিভিন্ন পত্র পত্রিকার বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। প্রতি বছর এখানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই সংযোজন করা হয়। এই সংগ্রহশালাটির স্থায়ী গ্যালারী দর্শকদের জন্য ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্র“য়ারী উন্মুক্ত করে দেন শহীদ শিক্ষক পতিœ ওয়াহিদা রহমান, বেগম মাস্তরা খানম ও চম্পা।
সংগ্রহশালাটির আশেপাশে রয়েছে ১২ ফুট উচু ছয়কোণা প¬াটফর্মের উপর ৫৬ ফুট লম্বা চারটি স্তম্ভ নিয়ে মিনার, উন্মুক্ত মঞ্চ, রাকসু ভবন, ক্যাফেটরিয়া, চমৎকার দৃষ্টিনন্দিত বাগান ও ১৮ হাজার বর্গফুটের এক বিশাল সবুজ চত্বর। দর্শক মাত্রাই বাহিরের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখলেই সংগ্রহশালায় ঢুকে পড়েন। দর্শক সংগ্রহশালার ভিতরে গিয়ে নিষ্ঠুর সত্যের সামনে দাড়িয়ে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় ভাষা থেকে স্বাধীনতার জন্য কি রক্তমূল্য দিতে হয়েছে তাদের পূর্ব পুরষকে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রথম শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালাটি দর্শন করতে প্রতিদিন প্রায় তিন শত দর্শনার্থী এখানে আসে। রাজশাহীতে আগন্তুক মাত্রই এই সংগ্রহশালায় কিছুক্ষনের জন্য হলেও প্রবেশ করেন। গত বছর ২০০৯ সালে এখনে প্রায় ২ লক্ষ ১০ হাজার দর্শনার্থী এটি দর্শন করেছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আমেরিকা , জাপান, ভারত, সুইডেন, অষ্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশের দর্শনার্থী এখানে ঘুরে গেছেন। সংগ্রহশালাটি প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এই অমূল্য সংগ্রহশালাটি রক্ষনাবেক্ষন করার জন্য ১ জন কিউরেটর, ৩ জন কর্মকর্তা, ২৫ জন সাধারণ কর্মচারী, ৩ জন বহিরাগত প্রহরী রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য। এখানে প্রতি বছর যে বাজেট প্রদান করা হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। প্রতি বছর এখানে বেতন ভাতা বাদে ৯৪-৯৫ হাজার টাকার মত বাজেট দেয়া হয়। যা দিয়ে সংগ্রহশালার সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
অপরদিকে দর্শনার্থীদের অভিযোগ, সংগ্রহশালায় আলোকচিত্র ও দলিল দস্তাবেজের উপর আবর্জনার স্তর জমে গেছে। তিনটি গ্যালারিতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন দলিল দস্তাবেশ উইপোকা কেটে ফেলেছে। বেশ কিছু জিনিস চুরি হয়ে গেছে। মিউজিয়ামটির চারপাশে কোন দেয়ালের ব্যবস্থা নেই। ফলে মিউজিয়াম চত্বরে আড্ডা, হৈহুলে¬ারের আসর বসে নিয়মিত। মধ্যরাত অবধি সংগ্রহশালার প্রবেশ মুখে বহিরাগত ও একশ্রেনীর বখাটে ছাত্র নেশার আসর বসায়। তবলা ঢোল আর অশি¬ল গানে দূষিত করে ফেলে সংগ্রহশালার চারপাশের পরিবেশ। সংশি¬ষ্ট কতৃপক্ষ তখন নিরব ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। গাইড ও দায়িত্ব প্রাপ্তদের দেখা না পেয়ে দর্শনার্থীরা অনেক সময় নিরুৎসাহীত হয়। বিষয়গুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য দর্শনার্থীরা সংশি¬ষ্ট কর্তপক্ষকে অনুরোধ করেছেন।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: