প্রবাসীরা বিদেশে বসেই যে পদ্ধতিতে পাবেন এনআইডি কার্ড

প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০১৯, ০১:০৫ এএম
অবশেষে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভবিষ্যতে ভোটার হতে বাংলাদেশে আসতে হবেনা প্রবাসী বাংলাদেশীদের, বিদেশে বসে জাতীয় পরিচয়পত্র পাবেন। এ লক্ষ্যে সিঙ্গপুরে প্রবাসী বাংলাদেদেশীদের ভোটার করে এনআইডি দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করতে চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ইসি সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে সিঙ্গপুরে ভোটার কার্যক্রম শুরু করার পর দ্বিতীয় ধাপে যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটার করবে ইসি। এ মাসের শেষের দিকে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম যুক্তরাজ্যে সফরও করবেন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, দুই প্রক্রিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করে নেওয়া হবে। প্রথম প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একটি আলাদা সার্ভার বসাবে নির্বাচন কমিশন। যে সার্ভারটি ইসির ওয়েব সাইটে আলাদা লিংকের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে। প্রবাসী নাগরিক সংশ্লিষ্ট দেশে বসেই সেই লিংকে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় সব কাগজ/দলিলাদী আপলোড করে এবং ফরম পূরণ করে আবেদন সম্পন্ন করবেন। সেই আবেদনটি পরবর্তীতে আবেদনকারীর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হবে। তদন্তে ইতিবাচক প্রতিবেদন এলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হবে। এরপর দশ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশেই বসানো হবে ইসির নিবন্ধন কেন্দ্র। যেখান থেকেই বিতরণ করা হবে স্মার্টকার্ড বা এনআইডি। আবেদনকারী স্মার্টাকার্ড নেওয়ার সময় আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দেবেন। দ্বিতীয় প্রক্রিয়ায় প্রবাসীদের ভোটার করে নেওয়া বলতে অফলাইনে আবেদনের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে অনলাইনের আবেদন সংগ্রহর পর কোনো দেশে যখন নিবন্ধন কেন্দ্র স্থাপন করে নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে নির্বাচন কমিশন, তখন সংশ্লিষ্ট নাগরিককে ওই কেন্দ্রে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজ/দলিলাদী সরবরাহ করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় গেলে একটু বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। কেননা, অনলাইনে আবেদন সংগ্রহ করার পর নিবন্ধন কেন্দ্রস্থাপন করা হবে। এতেই কিছুটা সময় লেগে যাবে। এছাড়া অফলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার পর সেই আবেদন দেশে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো। তাদের দেওয়ার তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এনআইডি ছাপানো হবে। এরপর আবার সংশ্লিষ্ট দেশে বিতরণ করা হবে। অর্থাৎ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত কমিশন বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) আবদুল বাতেন বলেন, সিঙ্গাপুর প্রবাসীদেরই আমরা অগ্রধিকার দিচ্ছি। দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশি নাগরিকরা চলতি মাসের শেষের দিকেই অনলাইনেই আবেদন করে ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন। আমরা এজন্য আলাদা সার্ভারও করবো। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে অন্যান্য দেশে এ কার্যক্রমটি পরিচালনা করা হবে। জানা যায়, গত ৩ থেকে ৯ মার্চ ইসির একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম সিঙ্গাপুর ঘুরে এসে কার্যক্রম হাতে নেওয়ার জন্য বেশকিছু সুপারিশ করেছে। আর সে ভিত্তিতেই কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম আগামী ২৪ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে সফর করবে। এ সফরে তারা ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার, বাংলাদেশের কমিউনিটি ও যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকের ফলাফল অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে এর আগে তারা ২৫ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ১৮তম ক্যামব্রিজ কনফারেন্স অন ইলেকশন ডেমোক্রেসিতে অংশ নেবেন। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর পর তখনকার নির্বাচন কমিশনের দুই সদস্য প্রবাসীদের ভোটার করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিদেশ সফর করেন। ২০১০ সালে ভোটার তালিকা আইন সংশোধন করা হয়, যাতে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি সুযোগ তৈরী হয়। এরপরে ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়ন হয়নি। কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের এপ্রিলে ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটাধিকার প্রয়োগ’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার করা ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের সুপারিশ আসে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সপ্তদশ সভায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: