ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাটের রানু মারিয়া মণ্ডল এখন সোশাল মিডিয়ার ‘সুরসম্রাজ্ঞী’। স্টেশনে গান গেয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করাই যার পেশা, তার কণ্ঠে আপাতত মাতোয়ারা ইন্টারনেট। ভিডিও ভাইরাল হতেই রাতারাতি তিনি তারকা হয়ে উঠেছেন।
এদিকে শনিবার সকালে মেয়ে স্বাতী রায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয় রানু মারিয়া মণ্ডলের। তার পর থেকে খোশমেজাজে রয়েছেন তিনি। বেগোপাড়ার বাড়িতে বসে রানু বলেন, ‘আমার মেয়ে স্বাতীর সঙ্গে কথা হয়েছে।’
ফের একটু অন্যমনস্ক হয়ে বলেন, ‘কোথায় যেন থাকে বলল। আমার তো মোবাইল ফোন নেই। মেয়ে বলেছে আমায় দেখতে আসবে। এখন দেখি, কবে আসে।’
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মা ও মেয়ের কথা হয়েছে। প্রতিবেশী তপন দাসের ফোন থেকে প্রায় ৮ মিনিটের মত কথা হয় তাদের। কে কেমন আছেন, কী ভাবে রয়েছেন— এই সংক্রান্ত কথা হয় দু’জনের।
ফোন রেখে রানু বলেন, ‘মেয়েকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।’
প্রতিবেশী তপন দাস বলেন, অনেক কষ্ট করে রানুর মেয়ের ফোন নম্বর জোগাড় করতে পেরেছি। সেই নম্বরেই তিনি মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। মেয়েটির কাছ থেকে জানতে পেরেছি, তারা বীরভূমের সাঁইথিয়ায় বসবাস করেন। জামাই সেখানে ইলেকট্রিকের কাজ করেন। রানুর মেয়েও ভাল গান করেন।
তপন আরও বলেন, চার বছরের বেশি সময় ধরে মা-মেয়ের দেখা হয়নি। এর মধ্যে দু-এক বার ফোনে কথা হয়েছে। খুব শীঘ্রই মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসবেন মেয়ে, এমনটাই জানিয়েছেন স্বাতী।
প্রতিবেশীরা জানান, মাত্র কয়েক ঘণ্টায় রানুর মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। দিন দুয়েক আগেও তাকে প্রায়শই বাড়িতে দেখা যেত না। রানাঘাট রেল স্টেশনই ছিল তার অলিখিত ঠিকানা। সেখানে গিয়ে প্ল্যাটফর্মে বসে থাকতেন, গান শোনাতেন যাত্রীদের। অথচ গত চব্বিশ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে, রানু বাড়ি ছেড়ে বাইরে যাননি।
প্রতিবেশীরা আরও জানান, হঠাৎ করে তারকা বনে যাওয়া রানুর সঙ্গে অনেকেই কথা বলতে তার বাড়ি আসছেন। অনেকে আবার রানুর গলায় গাওয়া গান মোবাইলে রেকর্ড করে নিয়ে যাচ্ছেন।
রানুর প্রতিবেশী তপন বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসছে। মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল তাকে ফোন করেছে। দিল্লির একটি সমাজসেবী সংস্থা যোগাযোগ করেছে। কিন্তু রানুর সরকারি পরিচয়পত্র না থাকায় সমস্যা হয়েছে। বিমান বা দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট কাটা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে আগামি সোমবার প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন তারা।
শনিবার রাতে রানাঘাটের এসডিপিও লাল্টু হালদার রানু মারিয়া মণ্ডলের বাড়িতে যান। মহিলার সঙ্গে দেখা করেন। কথা বলেন তার প্রতিবেশীদের সঙ্গেও। লাল্টু বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় তার গান ভাইরাল হয়েছে। কৌতূহল থেকে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
সম্প্রতি রানাঘাট স্টেশনের এই ভিক্ষুক নারী লতা মুঙ্গেশকরের ‘এক পেয়ার কি নাগমা’ গান গেয়ে সোশাল মিডিয়ার ‘সুরসম্রাজ্ঞী’র তকমা পেয়েছেন। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর রানুর গান শুনে ফোন আসছে সুদূর দিল্লি-মুম্বাই থেকেও। ইতোমধ্যেই মুম্বাইয়ের এক টেলিভিশন চ্যানেল ফোন করে আমন্ত্রণ জানিয়েছে রানুকে।
[embed]https://www.youtube.com/watch?v=yfXDuRKEwUA[/embed]
পাঠকের মন্তব্য: