খালেদা জিয়ার মুক্তি: প্যারোলের চেষ্টায় পরিবার

প্রকাশিত: ০৯ মার্চ ২০২০, ০৪:৫৬ পিএম
হাবিবুর রহমান খান ও আলমগীর হোসেন: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। উচ্চ আদালতে দ্বিতীয়বারের মতো জামিন আবেদন খারিজ হওয়ার পর মুক্তির পথ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন তৎপরতা। শেষ পর্যন্ত প্যারোলে মুক্ত হয়েই উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া বিদেশ যাচ্ছেন এমনও গুঞ্জনও রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। উচ্চ আদালতে দ্বিতীয়বারের মতো জামিন আবেদন খারিজ হওয়ার পর মুক্তির পথ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন তৎপরতা। শেষ পর্যন্ত প্যারোলে মুক্ত হয়েই উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া বিদেশ যাচ্ছেন এমনও গুঞ্জনও রয়েছে। সম্প্রতি পরিবারের পক্ষ থেকে তার সাময়িক মুক্তি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করায় এ গুঞ্জন আরও ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। পরিবার ও দলের নেতাকর্মীরা চাচ্ছেন যে কোনো মূল্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসা। এ ক্ষেত্রে প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারেও পরিবারের আপত্তি নেই। দলের একটি অংশও পরিবারের সঙ্গে একমত। প্যারোলের ব্যাপারে খালেদা জিয়াকে রাজি করাতে পরিবারের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টাই করা হচ্ছে। তবে এখনও প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে খালেদা জিয়ার মনোভাব নেতিবাচক। পরিবার ও দলের একটি অংশের পক্ষ থেকে তাকে রাজি করানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এদিকে প্যারোলের আবেদন করা হলেও খালেদা জিয়ার মুক্তি ততটা সহজ হবে বলে মনে করেন না তার আইনজীবীরা। কারণ প্যারোলের বিধি অনুযায়ী আসামির পরিবারের কেউ মারা গেলে সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার জন্য তাকে মুক্তি দেয়া যায়। তাছাড়া প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। আবেদন করা হলে সরকার তাকে মুক্তি দেবেন এমন নিশ্চয়তা পেলেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে দল আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো উদ্যোগ নেবে না। বিষয়টি পরিবারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, বিএসএমএমইউতে গুরুতর অসুস্থ কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও করতে পারে তার পরিবার। তবে চিঠিতে ঠিক কি লেখা আছে তা আমি বলতে পারব না। কারণ সেটা পরিবারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি সুস্পষ্টভাবে প্যারোলের আশ্বাস দেয়া হয় সেক্ষেত্রে আপনারা কী বিষয়টা বিবেচনা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বহুবার বলেছি, এটা (প্যারোল) সম্পূর্ণভাবে তার (খালেদা জিয়া) ব্যক্তিগত ব্যাপার, তার পরিবারের ব্যাপার। সেক্ষেত্রে আমরা এখন কিছু বলছি না। দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমরা সেই সিদ্ধান্ত নেইনি। ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা ও সাজার বিষয়টি পুরোপুরি রাজনৈতিক। তাই তার মুক্তির বিষয়টিও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সরকার তার মুক্তির উদ্যোগ নেবেন বলে আশা করি। সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার পরিবার চাচ্ছে যে কোনো মূল্যে তার উন্নত চিকিৎসা। এক্ষেত্রে প্যারোলেও তাদের আপত্তি নেই। এর অংশ হিসেবেই পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বুধবার তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর এ আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে সাময়িক মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিন। তবে আবেদনে প্যারোলের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। সূত্র জানায়, আইন অনুযায়ী পরিবার বা দলের পক্ষ থেকে কেউ প্যারোলের জন্য আবেদন করতে পারবে না। যিনি কারাবন্দি তাকেই আবেদন করতে হয়। তাই চূড়ান্তভাবে প্যারোলের জন্য খালেদা জিয়াকেই আবেদন করতে হবে। সেই প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে রাজি করাতে নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। শনিবার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে আকার ইঙ্গিতে তাকে প্যারোলের বিষয়টি অবহিত করা হয়। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তির ইস্যুটি বেশ আলোচনায় রয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বসহকারে দেখতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করেন। এর আগে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুপারিশ করতে মেডিকেল বোর্ডের কাছে আবেদন করেন। গত মাসে জামিন চেয়ে উচ্চ আদালতে ফের আবেদন করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগ তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। এ ব্যাপারে আপিল করার চিন্তাভাবনা করছেন তার আইনজীবীরা। আপিলের রায়ের পরই প্যারোলের বিষয়টি সামনে আসতে পারে। কারামুক্তির আইনগতভাবে তিনটি পথ : খালেদা জিয়ার কারামুক্তির জন্য আইনগতভাবে তিনটি পথ খোলা আছে। একটি হল আদালতের জামিন আদেশের মাধ্যমে। দ্বিতীয়টি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারার ক্ষমতাবলে সরকার মুক্তি দিতে পারে। তৃতীয় পথ হল প্যারোল (শর্ত সাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি)। প্রথম দুটি ক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। প্যারোল বিষয়ে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিশেষ ক্ষেত্রে প্যারোলে মুক্তি দিতে পারে। প্যারোলের বিধান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের ১ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নীতিমালা অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত আসামি বা হাজতি আসামি, যারা সাজাপ্রাপ্ত না হয়েও কারাভোগ করছেন, সবাই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্যারোল পেতে পারেন। মৃত্যু, জানাজায় অংশ নেয়া ইত্যাদি ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামি বা হাজতি আসামিকে বিশেষ ক্ষেত্রে প্যারোল অথবা ৪০১ ধারায় মুক্তি দিতে পারেন। প্রশাসনিক আদেশে যতদিন সরকার মনে করবে ততদিন প্যারোল দিতে পারে। এতে কোনো জটিলতা নেই। এ প্রসঙ্গে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, প্যারোলে মুক্তি হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী সিদ্ধান্তের একটি বিষয়। এটি আদালতের বিবেচ্য কোনো বিষয় নয়। প্যারোল কি, কিভাবে প্যারোলে মুক্তি : প্যারোলে মুক্তি কিভাবে সম্ভব তা নিয়ে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে ধোঁয়াশা। এ প্রসঙ্গে আইনজীবীরা বলেন, যে কোনো কারাবন্দির প্যারোলে মুক্তি পেতে হলে প্রথমেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্যারোলবিষয়ক নীতিমালাটি বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ প্যারোল কি, কিভাবে মুক্তি দেয়া হয় এটা নিয়ে মানুষের খুব একটা ধারণা নেই। ২০১৬ সালের ১ জুন প্রণীত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে : ১. ভিআইপি বা অন্যান্য শ্রেণির কয়েদি বা হাজতি বন্দিদের নিকট-আত্মীয় যেমন বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি এবং আপন ভাইবোন মারা গেলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া যাবে। ২. ভিআইপি বা অন্যান্য সব শ্রেণির কয়েদি বা হাজতি বন্দিদের নিকট-আত্মীয়ের মৃত্যুর কারণ ছাড়াও কোনো আদালতের আদেশ কিংবা সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্যারোলে মুক্তি দেয়া প্রয়োজন হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া যাবে। তবে উভয় ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও দূরত্ব বিবেচনায় প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ সময় নির্ধারণ করে দেবেন। ৩. বন্দিকে সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরাধীনে রাখতে হবে। ৪. মুক্তির সময়সীমা কোনো অবস্থাতেই ১২ ঘণ্টার অধিক হবে না তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার মুক্তির সময়সীমা হ্রাস বা বৃদ্ধি করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন। ৫. কোনো বন্দি জেলার কেন্দ্রীয় কারাগার, জেলা কারাগার, বিশেষ কারাগার, সাবজেলে আটক থাকলে ওই জেলার অভ্যন্তরে যে কোনো স্থানে মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর করতে পারবেন। অপরদিকে কোনো বন্দি নিজ জেলায় অবস্থিত কেন্দ্রীয়, জেলা, বিশেষ কারাগার, সাবজেলে আটক না থেকে অন্য জেলায় অবস্থিত কোনো কেন্দ্রীয়, জেলা, বিশেষ কারাগার, সাবজেলে আটক থাকলে গন্তব্যের দূরত্ব বিবেচনা করে মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর করতে পারবেন। তবে উভয় ক্ষেত্রেই দুর্গম এলাকা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, দূরত্ব ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়। এক্ষেত্রে মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর কিংবা নামঞ্জুরের ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন। ৬. কারাগারের ফটক থেকে প্যারোলে মুক্ত বন্দিকে পুলিশ বুঝে নেয়ার পর অনুমোদিত সময়সীমার মধ্যেই তাকে কারাগারে ফেরত নিয়ে আসবেন। ৭. আর সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবেন। সূত্র: যুগান্তর।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: