নিস্তব্দ শহরে দু’মুঠো আহারের খোঁজে লতিফ

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২০, ০৮:২৯ পিএম
নিস্তব্দ শহরে মানুষের চলাফেরা খুবই কম। যাও দু একজনকে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ তাদের ঘরে পাঠাচ্ছে। করোনা নামক আকঙ্কে বিপাকে পড়েছে দ্ররিদ্র ও দিনমজুররা। যাদের দিন এনে দিন কাটে টেনেটুনে, তিন বেলা ভাত ঝুটানো তাদের জন্য কষ্টকর। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে তাদের কাছে তিনবেলা খাবার খেতে পাওয়াটা বড় চিন্তা। সকাল থেকেই ময়মনসিংহ শহর অপেক্ষাকৃত ফাঁকা। ব্যস্ততম এলাকা গাঙ্গিনাপাড়ে নেই লোক সমাগম। রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। ঘর থেকে বের না হতে ঘোষণা দিয়ে চলছে মাইকিং। এর মধ্যে শহরে ভিক্ষা করতে বের হয়েছেন বৃদ্ধ আবদুল লতিফ। কথা হয় তার সঙ্গে। বলেন, ঘরে বসে থাকলে একবেলার খাবারও জুটবে না। বাড়িতে স্ত্রী ও এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলে রয়েছে তার। তাদের জন্য ভিক্ষা করতে বের হয়েছেন তিনি। এটি-ই তার পেশা। রোগের ভয়ের চেয়ে পেটের ক্ষুধার জ্বালা অনেক বেশি। ঘরে বসে থাকলে খাবার দেবে কে? তাই বের হয়েছি। কিন্তু, শহরে মানুষ নাই ভিক্ষাও পাইতাছি না। পেট চলব কেমনে? তবে সড়ক ও বাজারে লোক কম থাকায় ভিক্ষাও তেমন জুটছে না তার। শহর ঘুরে দেখা গেছে, দ্ররিদ্র ও দিনমজুররা পড়েছেন বিপাকে। দিন এনে দিন খাওয়া লোকদের সংসার চলছে টেনে টুনে; অজানা আতঙ্কে। দীর্ঘদিন এমন সঙ্কট চলার শঙ্কাও রয়েছে তাদের মনে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে তাদের কাছে তিনবেলা খাবার খেতে পাওয়াটা বড় চিন্তা। শহরের সানকিপারা এলাকায় কথা হয় দিনমজুর আক্কাস মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, যে অর্থ তার সঞ্চিত রয়েছে তা দিয়ে কাজ না করে ৪/৫ দিন চলতে পারবেন। তবে তারপর কী হবে তা নিয়ে দুঃশ্চিতায় রয়েছেন তিনি। এদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে যাদের জীবন চালাতে কষ্ট হচ্ছে, তাদের জন্য এগিয়ে এসেছে সামাজিক একটি সংগঠন ময়মনসিংহ ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি। যাদের এখন কোনো আয় নেই এমন পরিবারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দব্য বিনামূল্যে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে তারা। সংগঠনটির সভাপতি মমিনুর রহমান প্লাবন জানান, সাধ্যের মধ্যে অসহায়দের জন্য চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আলু, শুকনা মরিচ এবং লবণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় যতটুকু পারছি ততটুকু করছি। তিনি আরও বলেন, যাদের সামর্থ্য আছে তারা প্রত্যেকেই যদি নিন্ম আয়ের মানুষের পাশে দাড়ান তাহলে হয়তো তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে। এ ছাড়া আরও সেচ্ছাসেবী সংগঠন এ ধরনের কাজে এগিয়ে আসলে আরও বেশি পরিমাণ দুস্থ লোকের সহায়তা করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ময়মনসিংহের আঞ্চলিক সমন্বয়ক শিব্বির আহমদ লিটন বলেন, দরিদ্র মানুষকে অবশ্যই নিশ্চয়তা দিতে হবে। সামর্থ যাদের নেই প্রয়োজনের সময় তাদের তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এই নিশ্চয়তা যদি তারা না পায় তাহলে হোম কোয়ারেন্টিন কখনও সম্ভব না। তারা জীবিকার তাগিদে ঘরের বাহিরে আসবেই। যা এখনকার সময়ের জন্য বিপজ্জনক। তাই নিজেদের সুরক্ষায় এই সব মানুষের দায়িত্ব নিতেই হবে। ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি শঙ্কর সাহা বলেন, শঙ্কট যেন চরম আকার ধারণ করতে না পারে সেদিকে তার সংগঠন খেয়াল রাখছে। হত দরিদ্রদের সহায়তায় ব্যবসায়ী মহল এগিয়ে আসবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা অথবা করোনা মোকাবেলায় হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের ত্রাণ ও পূনর্বাসন তহবিল থেকে জেলায় ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, ত্রাণ সহযোগিতা ছাড়াও করোনা নিরাপত্তা সামগ্রীর প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়তে পারে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি মনে করেন অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রকৃত অসহায় মানুষদের খুঁজে বের করাই বড় চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে সতর্ক ভূমিকা রাখতে হবে জনপ্রতিনিধিদের। ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, খাবারের অভাবে যেন নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট পেতে না হয় সেদিকে তিনি খেয়াল রাখছেন। খাবারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১০ টাকার চাল কর্মসূচি চালু আছে। লোক সমাগম না করে কীভাবে প্রকৃত উপকারভোগীদের কাছে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেওয়া যায় সে বিষয়ে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: