যমুনা নদী রক্ষা বাঁধের মাটি লোপাট!

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:৫৫ পিএম
যমুনার শাখা ঝিনাই নদী। এ পারে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বীরতারা, ঐ পারে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার হাটবাড়ী। শাখা ঝিনাই নদীর মধ্যে নদীভাঙন বন্যা থেকে রক্ষায় ঐ পারে পাউবো, আর এ পারে জেলা পরিষদ বাঁধ নির্মাণ করে। ঐ পারে অক্ষত থাকলেও এ পারের বাঁধের মাটি প্রকাশ্য দিবালোকে কেটে লুটে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। পশ্চিম বীরতারা গ্রামের জিয়াউল হক ১০ ফেব্রুয়ারি ধনবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, কিছু বালু ব্যবসায়ী এ পারের বাঁধ কেটে মাটি লুটে নিচ্ছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন কিছু জমির মাটি কেটে নেওয়ার পর খাস জমিতে ওদের চোখ পড়ে। খাস জমির সঙ্গে নদীর ৮-১০ ফুট উঁচু বাঁধ নিশ্চিহ্ন করে। এভাবে প্রায় ৪০০ গজে বাঁধ নিশ্চিহ্ন হওয়ায় আগামী বর্ষায় বন্যার পানি অবাধে ঢুকে বীরতারা ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হবে। বহু জমির ফসল বিনষ্ট হবে। ঐ গ্রামের মাতব্বর মজিবর রহমান জানান, প্রথমে দুই চাষির কয়েক বিঘা ফসলি জমির টপ সয়েল কিনে নেয় চক্রটি। সেই বাহানায় নদীপাড়ের খাস জমি খনন শুরু করে। রাজনৈতিক কানেকশন থাকায় নির্বিবাদে নদীর উঁচু বাঁধ নিশ্চিহ্ন করে। প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসী দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়। গ্রামের দিনমজুর সাহারা খাতুন জানান, ‘বাবাগো ওদের বহু হাতে পায়ে ধরছি, কইছি, এইভাবে বাঁধ কাইটা নিলি আর তীরের হগল জমিতে মাথা সমান গর্ত কইরে মাটি নিলি আমাগোর ভিটি নদীতে নাইমবো। আমরা কোন হানে থাকবোনি তহন। কিন্তুক হেরা কোনো কথাই হোনে নাই। চেয়ারম্যান মেম্বারগো কইছি। তারা হুনছে। তয় কোনো ব্যবস্থা নেয় নাই।’ গ্রামের অপর মাতব্বর বাবুর আলী জানান, উঁচু পাড় ও বাঁধের দরুন তাদের ভিটেবাড়ি নদীভাঙন থেকে রক্ষা পেত। এখন বাঁধ তো নেই-ই উপরন্তু নদীর তলদেশের সঙ্গে সমান্তরাল রেখে ১২ বিঘা জমি ৮-১০ ফুট গভীর করে খনন করায় পাড়ার সব বাড়িঘর, আবাদি জমি, গাছের বাগান নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গ্রামের আব্দুল খালেক জানান, মাটি পাচারকারী চক্রটি ২০০ গজ উজানে নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করায় পাড় ভেঙে নদী বাঁক খেয়ে ধনুকের রূপ ধারণ করেছে। বর্ষাকালে এখানে স্রোতের ঘূর্ণাবত তৈরি হয়। এত দিন বাঁধ থাকায় বীরতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পুরো পাড়া ভাঙন ও বন্যার তাণ্ডব থেকে রেহাই পেত। এখন সেই রক্ষাবুহ্য নিশ্চিহ্ন হওয়ায় স্কুলসহ পুরো গ্রাম অরক্ষিত হয়ে পড়ল। গ্রামের লিটন মিয়া জানান, বাঁধটি গ্রামীণ সড়ক হিসাবেও ব্যবহূত হতো। চাপারকোনা হাইস্কুলে যাওয়া-আসা করত ছাত্রছাত্রীরা। বাঁধের ৩০০ গজ নিশ্চিহ্ন করায় যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামের আব্দুল আজিজ জানান, মাটি লুটের কাণ্ড চলে টানা দুই সপ্তাহ। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে মৌখিক ও লিখিতভাবে জানালেও তারা সময়ক্ষেপণ করেন। সেই সুযোগে সিন্ডিকেট মাটি কেটে পাচার করে। স্থানীয় ইউপি মেম্বার আনোয়ার হোসেন জানান, বাঁধ কেটে মাটি লুটের কথা শুনেছেন। তবে এটি উপজেলা প্রশাসনের দেখার কথা। বুধবার বীরতারা গ্রামে বাঁধের স্থানে যাওয়ার সময় দেখা যায় ইউনিয়ন পরিষদের অনতিদূরেই বাঁধ। মাটির ট্রাক যাওয়ার রাস্তাও পরিষদ ভবনের গা ঘেঁষা। তবে তথ্য সংগ্রহের সময় ইউপি চেয়ারম্যান শফি আহমেদ জানান, বাঁধ কেটে মাটি পাচারের খবরটি তিনি এই প্রথম শুনলেন! কেউ জানালে তিনি ব্যবস্থা নিতেন। এদিকে ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ আরেফীন জানান, গ্রামবাসীর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এখন তো আর মোবাইল কোর্ট করার সুযোগ নেই। তাই বীরতারা ইউপি চেয়ারম্যান এবং থানা পুলিশকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে। আমি নিজেও আগামী সপ্তাহে সরেজমিন তদন্তে যাব।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: