এক পায়ে ঘোরে মাছুমার জীবন চাকা!

প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০২১, ০২:০১ এএম
জন্ম থেকেই তার কষ্টের জীবন শুরু। জন্মগত ভাবেই তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। এক পা দিয়ে ভর করে পথ চলতে হয় তাকে। তবুও সংসার নামক জীবন যুদ্ধে থেমে থাকেনি মাছুমা আকতার। জন্মের ৬ বছরের মাথায় বাবাকে হারিয়েছেন। প্রতিবন্ধী মেয়ে আর ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে জীবন যুদ্ধে নেমে পড়েন মা মাজেদা বেওয়া। অভাবের সংসারে অন্যের দেওয়া অন্য দিয়েই কোন মতে চলে তাদের জীবন। এর পরেও নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে অবশেষে ২০০৪ সালে গাঁটছড়া বন্ধনে আবদ্ধ হন মাছুমা। বিধির নির্মম পরিহাস সেই সংসারও খুব বেশি দিন টিকেনি তার। এখন দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এক খুপরি ঘরে গরু ছাগলের সঙ্গে বসবাস তার। দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর নাফানগর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী মাছুমা আকতারের সংসারের চিত্র এটা। মাছুমা ওই গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের মেয়ে। মাছুমা আকতারের বয়স এখন (৩৫)। সরেজমিনে মাছুমা আকতার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়,গ্রামের মাঝখানে একটি টিন সেট ঘরের বারান্দায় এক পা দিয়ে সেলাই মেশিনের চাকা ঘুরিয়ে আপন মনে কাপড় সেলাই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন মাছুমা। ছোট মেয়ে লামীয়া বাইরে খেলা করছেন। তার ছেলে মাসুদ (১৩) প ম শ্রেণীতে এবং মেয়ে লামীয়া (৭) প্রথম শ্রেণীতে পড়া রেখা করে । একটি ঘরে একটি বাড়ি হলেও সেই ঘরের একপাশে একটি গরু আর অন্যপাশে ৪ টি ছাগল নিয়ে রাত্রি যাপন করেন তিনি। অন্যের গরু ছাগল আদি ( বর্গা) নিয়ে পালে। প্রকৃতির ডাকে সারা দেয়ার মত একটি টয়লেটও নেই। কোন রকম কয়েকটি রিং বসিয়ে এবং চারদিক প্লাস্টিক কাগজ দিয়ে এই ঝুপড়িতে সারেন প্রকৃতির কাজ। ঘরের বাইরে একটি চকি নিয়ে কয়েকটি বিস্কুট এর প্যাকেট,চানাচুর, চকলেট আর চিপসের প্যাকেট নিয়ে বসে আছেন তার ছেলে মাসুদ। বাড়ির বারান্দায় বসে তার সঙ্গে কথা হয়। মাছুমা বলেন, আমি জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী। আমি কষ্ট করে লাঠি নিয়ে হাটা চলা করি। এভাবেই আমি নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। আর বেশী লেখা পড়া করি নাই। আমার বিয়ে হয়েছিল ময়মনসিংহের জামালপুরে। আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে প্রায় তিন বছর হচ্ছে। আমি কষ্ট করে খাই। সময়তে দর্জি কাজ করি। কাপড় হলে সেলাই করি না হলে মানুষের কাছে চেয়ে খাই। তিনি আরো বলেন , বৃষ্টি হলে আমার ঘরে খুব পানি পড়ে। দুনবাতাসে হলে ঘরে থাকতে পারিনা। তখন আমি ছেলে মেয়ে নিয়ে মানুষের বাসায় গিয়ে থাকি। এভাবেই দুই সন্তান নিয়ে আমি খুব কষ্টে জীবন করছি। সরকার তো গরীব অসহায় প্রতিবন্ধী মানুষদের বাড়ি করে দিচ্ছে। তাই আমার একটা অনুরোধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যেনো আমাকে একটা বাড়ি করে দেয়। তাহলে হয়তো ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকমে জীবনটা কাটাতে পারব। জানতে চাইলে মাছুমার মা মাজেদা বেওয়া বলেন, জন্মের পর থেকেই আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী। মেয়েকে বিয়ে দিলেও জামাই মেয়ে নাতি নাতনিকে রেখে পালিয়ে গেছে। এখন অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে মাছুমা। তার থাকার ঘরটি বৃষ্টি এলে পানিতে সমস্ত ঘর ভিজে যায়।পাতিল ধরে রাত পার করতে হয় তাদের। প্রতিবেশী আক্তার আলী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে মাছুমা কষ্ট করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। লাঠিতে ভর দিয়ে চলে। কখনো কাপড় সেলাই আবার কখনো অন্যের দেওয়া খাবারেই অনেক কষ্টে দিন পার করেন তিনি। বোচাগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর নাফানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ পারভেজ (শাহান) বলেন, আমার জানামতে মাছুমা অনেক কষ্টকরে জীবন যাপন করেন। ইতোমধ্যেই মাসছুাকে সরকারি সহায়তা হিসেবে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড প্রদান করা হয়েছে। তার একটি মাত্র ঘর। সেই ঘরে গরু ছাগলের সঙ্গে ছেলে মেয়েকে নিয়ে থাকে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: