করোনাকালীন সময় ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে বাকীতেও !

প্রকাশিত: ০৩ জুন ২০২১, ০৬:১১ পিএম
করোনাকালে ইয়াবার চালান ধরা পড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এরই অংশ হিসাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ট্রাকযোগে ময়মনসিংহে ঢুকছে ইয়াবা। সেইসাথে ফেনসিডিল,গাঁজা ও হেরোইন। ট্রাকের চাকা, পাটাতন, গিয়ারবক্সসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশে চড়ে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে ময়মনসিংহের জেলা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে বাকীতেও। অর্থাৎ এক লাখ টাকা মূল্যমানের ইয়াবা পঞ্চাশ হাজার টাকায় দেয়া হচ্ছে পাইকারদের হাতে। ক্রেতাদের কাছে বিক্রির পর বাকী পঞ্চাশ হাজার টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে মাদক বিক্রেতাদের কাছে। এই ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ময়মনসিংহ শহর, ভালুকা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই ডজন সিন্ডিকেটের হাতে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তারা নাম প্রকাশে অনীহা জানিয়ে বলেন, বহুদিন ধরেই মাদক ব্যবসা জারি থাকার একটি কারণ একশ্রেণির পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ততা। দেশে পুরনো মাদকের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ইয়াবা। জানা যায়, মাদক অর্থাৎ ইয়াবা এমন একধরনের নেশাজাতীয় ট্যাবলেট যা মূলত মেথঅ্যাম্ফিটামিন ও ক্যাফেইনের মিশৃণ। অনেক সময় এর সাথে হেরোইন মেশানো হয়। থাইল্যান্ড, বার্মায় এর জনপ্রিয়তা থাকলেও এখন তুঙ্গে বাংলাদেশে জার্মান শাসক হিটলারের সময় তার নাৎসি বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধে দিনরাত জেগে থাকতে এটি সেবন করত । দীর্ঘদিন এটি ব্যবহার করলে স্মরণশক্তি কমে গিয়ে পাগল হওয়ার সম্ভবনা শতভাগ। এমনটাই বলছেন, বিশেষজ্ঞ মহল । ইতিপুর্বে ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির কর্মরতরা অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ এবং সংশ্লিষ্ট অভিযোগে অনেক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তার দাবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ট্রাকযোগে ময়মনসিংহে আনা ইয়াবা কারবারের অন্তত দুই ডজন হোতা ময়মনসিংহ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছড়িয়ে আছেন। তাদের রাজনৈতিক ও অন্যান্য খুঁটির জোর আছে। এইসব এলাকায় তাদেও কয়েকশ সহযোগী আছে । তবে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যাদের নামের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে তাদের মধ্যে সকলেই আছে কিনা তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। সূত্রটি জানিয়েছে, ময়মনসিংহের ভালুকায় ইয়াবার এক বড় বাজার তৈরি হয়েছে । সেখানে মিল কারখানা থাকায় ইয়াবা আসক্তের সংখ্যা বেড়েছে। যদিও তথ্য পেলেই পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের নানা দায়িত্ব পালনে ব্যস্ততায় থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনায়াসে মাদক কারবারিরা ব্যবসা চলিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে করোনার লকডাউন চলেছে। পণ্যবাহী ও জরুরি সেবায় যুক্ত পরিবহন ছাড়া অন্য সব গণপরিবহন বন্ধ ছিল। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে আনা নিত্যপণ্যের মালবাহী ট্রাকে ইয়াবার চালান ঢুকছে ময়মনসিংহে। ট্রাকযোগে ইয়াবা চালান আনার সময় মহাসড়কে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি দেখলে মাদক পাচারকারী অগ্রগামী পাহারাদারেরা মুঠোফোনে তাদের সতর্ক করেও দিচ্ছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। পণ্যবাহী ট্রাকে ময়মনসিংহে অনবরত ইয়াবার চালান আসছে। অভিযানও হচ্ছে। অভিযানগুলো হচ্ছে আগাম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে। সব চালানের তথ্য জানা যায় না বলে জানা গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, করোনার কারণে প্রতিষ্ঠানটির অভিযান বন্ধ ছিল। এই সুযোগকেও কাজে লাগিয়েছে কারবারিরা। করোনাকালে মাদক কারবারিরা বাকীতে বিক্রির অংশ হিসাবে মাদকসেবীদের সরাসরি যোগাযোগ করে বিক্রি করছে। বিজিবি জানায়, আগের চেয়ে সীমান্ত দিয়ে মাদক আসার পরিমাণ কমেছে। নিয়মিত টহল, আধুনিক ক্যামেরা স্থাপন, থার্মাল ক্যামেরা স্থাপন ও সচেতনতার কারণে মাদকের চালানের পরিমাণ কমে গেছে। শূন্যের কোঠায় এখনো আসেনি। প্রায়দিনই বিজিবি মাদকের চালান জব্দ করছে। পুলিশ বলছে, সীমান্ত দিয়ে মাদক আসা কমেছে, তবে মামলার সংখ্যা বেড়েছে। যখন যে সুযোগ পাচ্ছে সেই এ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে, নিয়মিত অভিযানে মাদকসহ কারবারি আটক এবং মামলা হচ্ছে। ময়মনসিংহের ডিবির ওসি শাহ্ কামাল আকন্দ জানান, জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ অত্যন্ত সক্রিয় রয়েছে। ইয়াবাসহ যেকোন মাদক নির্মূলের জন্য নিয়মিত অভিযান করছে পুলিশ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: