বিয়ে না করেই এক যুগ ঘরে লুকিয়ে সংসার করলেন সাজিতা ও আইলুর

প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২১, ০৭:০২ পিএম
ঘটনাটি ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন ভারতের কেরালার নিজ বাড়ি থেকে প্রেমিকার কাছে পালিয়ে আসেন সাজিতা নামের এক নারী। আশ্রয় নেন প্রেমিক আইলুর রহমানের ঘরে। এরপর তারা একসাথে বদ্ধ ঘরে থাকতে শুরু করেন। বিষয়টি আইলুরের মা-বাবাও টের পাননি। সে সময় থানায় মেয়ে নিখোঁজ বলে সাজিতার মা-বাবা ডায়েরি করেন। পরে আইলুরকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল পুলিশ। কিন্তু আইলুর কিছু স্বীকার করেননি। পুলিশের অনুসন্ধানেও কিছু বের হয়নি। দীর্ঘ সময় পার হওয়ায় মেয়েকে ভুলতেই বসেছিলেন সাজিতার মা-বাবা। ধরেই নিয়েছিলেন যে তাদের মেয়ে মারা গেছেন। কিন্তু ১১ বছর ধরে প্রেমিকা সাজিতা (২৮) কে সাথে নিয়ে কেরালায় পালাক্কাড় শহরের কাছে একটি গ্রামে নিজের বাড়িতে লুকিয়ে রেখে রীতিমত সংসার করছেন আইলুর রহমান (৩৪)। সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করতে গেলে পরিবারের বাঁধার মুখে পড়বেন, তাই কাউকে না জানিয়েই একসাথে সিদ্ধান্ত নেন তারা। কিন্তু একই বাড়িতে বসবাস করলেও অন্য বাসিন্দারা টের পাননি আইলুর-সাজিতার সংসার জীবনের কথা। কারণ সাজিতাকে নিজের ঘরে লুকিয়ে রেখেছিলেন আইলুর। তিন মাস আগে আইলুর তার বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। বিষয়টি নিয়ে তার মা-বাবা নিখোঁজের ডায়েরি করেন। এরপর তার ভাইয়ের সাথে সম্প্রতি দেখা হলে পুরো বিষয়টি সামনে আসে বলে জানায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মা-বাবা, ভাইবোনের সঙ্গে যে বাড়িতে থাকতেন আইলুর, সে বাড়িতেই নিজের ঘরে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা প্রেমিকা সাজিতাকে লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। ঘরটি সব সময় বন্ধ থাকতো। আইলুর ঘরে থাকলে ভেতর থেকে, আর বাইরে গেলে তালা দিয়ে দরজা বন্ধ রাখতেন। এভাবে দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় স্বেচ্ছায় সেখানে থেকেছেন সাজিতা। হাতমুখ ধুতে রাতের বেলা সবার অলক্ষ্যে এক বার ঘর থেকে তিনি বের হতেন, আবার ঢুকেও যেতেন। আইলুর তার ঘরের আশপাশে কেউ যাক- এটা পছন্দ করতেন না। আর আইলুরের মা-বাবাসহ সব সদস্যই প্রতিদিন কাজের জন্য বের হয়ে যেতেন। কিন্তু আইলুর নিজে নিয়মিত কাজ করতেন না। রংমিস্ত্রী বা বিদ্যুৎমিস্ত্রী হিসেবে কাজ পেলে মাঝে মাঝে বের হতেন তিনি। বাকি সময় নিজের ঘরেই থাকতেন। এভাবেই বদ্ধ ঘরে প্রায় এক যুগ পার হয়ে যায় সাজিতার। ওই ঘরেই তাকে খাবার এনে দিতেন আইলুর। এভাবে সবার অগোচরে তাদের সংসার জীবন কাটছিল। তবে ঘটনার মোড় ঘুরে যায় তিন মাস আগে। চলতি বছরের ৩ মার্চ আইলুর নিখোঁজ বলে তার মা-বাবা থানায় ডায়েরি করেন। তিন মাসেও তারা সন্ধান পাননি ছেলের। মঙ্গলবার তার ভাই আইলুরকে রাস্তায় দেখে ফেললে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। তখনই চাঞ্চল্যকর মোড় নেয় পুরো ঘটনা। দুই ভাইয়ের ঝগড়ার সময় হস্তক্ষেপ করে টহলরত পুলিশ। ঘটনার বর্ণনা শুনে আইলুরকে থানায় নেওয়া হয়। ডেকে পাঠানো হয় সাজিতাকেও। জানা যায়, প্রেমিকাকে ১১ বছর এক ঘরে লুকিয়ে রাখতে রাখতে হতাশ আইলুর স্বস্তিতে বাঁচতেই তিন মাস আগে কাউকে কিছু না জানিয়ে সাজিতাকে সঙ্গে নিয়ে ঘর ছাড়েন। পরে তাদের আদালতে তোলা হলে এই যুগল জানান, বর্তমানে ভিথুনাসারি এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন তারা। একে অপরকে ভালোবেসে স্বেচ্ছায় এক সঙ্গে থাকছেন বলে আদালতকে জানানোর পর বাড়িতে ফিরতে দেওয়া হয়েছে তাদের। নিনমারা থানার উপ-পরিদর্শক কে নুফাল বলেন, আইলুর-সাজিতার এ ঘটনা তাদের মা-বাবা বিশ্বাসই করতে পারছেন না। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে আমরা তাদের বাড়িতে গিয়েছি, তল্লাশি চালিয়েছি, আলাদা করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। দুজনই একই গল্প বলেছেন। ইচ্ছে করে নিখোঁজ হওয়ার আগে মা-বাবার কাছে পুরো বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পাগলের মতো আচরণ করতেন আইলুর। মা-বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন যে তার কিছু ভালো লাগে না, তিনি হতাশ। এদিকে এই যুগলের খোঁজ পাওয়ার পর দুটি নিখোঁজ মামলারই সমাপ্তি ঘোষণা করেছে পুলিশ। বর্তমানে স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছেন তারা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: