করোনায় পত্রিকা বিক্রেতাদের মানবেতর জীবনযাপন

প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০২১, ০৯:৫৪ পিএম
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাইসাইকেলের প্যাডেল মেরে অথবা পায়ে হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করেন বিক্রেতারা। আবার অনেকেই মোটরসাইকেল ও রিক্সায়ও পত্রিকা বিক্রি করেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় আয়—রোজগারের বিপর্যয় ঘটায় দেশের অন্যান্য এলাকার মতো মানবেতর জীবন যাপন করছেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পত্রিকা বিক্রির সঙ্গে জড়িত ১৪—১৫ জন এজেন্ট ও বিক্রয় প্রতিনিধি। তাদের বেশির ভাগই সামান্য আয়—রোজগার। এখন তাও বন্ধের পথে। দোকানে দোকানে এবং বাড়িতে বাড়িতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠকের কাছে পত্রিকা নিয়ে ছুটে যান তারা। এদিকে প্রায় সবকটি জাতীয় পত্রিকা গণসচেতনতায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস পত্রিকার কাগজের মাধ্যমে ছড়ায় না। তারপরও বিক্রি তেমন বাড়েনি। এর মধ্যে আবার করোনা ভাইরাসের কারণে কঠোর লকডাউনে জাতীয় ছুটি থাকায় অফিস আদালত ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। পত্রিকার বিল তুলতেও হকারদের বর্তমান পরিস্থিতিতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। সময়মত পাওনা না পেয়ে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাঁটাচ্ছেন। মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও পায়ে হেঁটে যাও-বা বিক্রি করতেন বিক্রেতারা; সেটাও লকডাউনের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সেটাও অল্প সংখ্যক পত্রিকা বিক্রয় হয়। বোয়ালমারী পৌরসদরের চৌরাস্তায় পত্রিকা বিক্রয়ের কয়েকজন প্রতিনিধিদের সাথে কথা হয়। তার মধ্যে উপজেলার গুণবহা ইউনিয়নের বাগুয়ান গ্রামের রুস্তুম আলী নামে একজন বিক্রেতাকে বাইসাইকেলে পত্রিকা বাঁধতে দেখা যায়। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, ভোরের আলো ফোঁটার সাথে সাথে পত্রিকা সংগ্রহ করে বাই সাইকেলে নিয়ে ছুটে বেড়ান উপজেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক উপজেলা পর্যন্ত। বোয়ালমারী উপজেলার পৌর শহর হতে সাতৈর বাজার হয়ে পাশ্ববর্তী মধুখালি উপজেলার নওয়াপাড়া পর্যন্তু তিনি পত্রিকা নিয়ে বাইসাইকেলে বিক্রি করেন। তিনি বাইসাইকেল চালিয়ে কমপক্ষে ২০টি পয়েন্টে পত্রিকা বিক্রি করেন। প্রায় আসা যাওয়া দিয়ে প্রতিদিন ৪০ কিলোমিটার সাইকেল চালাতে হয় তার। তিনি আরো জানান, লকডাউন থাকার কারণে দোকানপাট বন্ধ থাকায় সেটাও ঠিকমত করতে পারছেন না। তারপরও আবার বৃষ্টির মৌসুম। ১৫ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করে কোনোমত চলছে তার পরিবার নিয়ে জীবন জীবিকা। তবে করোনাভাইরাস সংক্রামনের আগেই ভালো যাচ্ছিল তার জীবন জীবিকা। এ ব্যাপারে মাঝকান্দি—বোয়ালমারী রুটের পত্রিকা এজেন্ট মেসার্স হাবিবুর রহমান এর স্বত্ত্বাধীকারী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, শুধু রুস্তুম আলী নন; এ উপজেলার পৌরসদর বাজার, সাতৈর বাজার, মুজুরদিয়া বাজার, চিতার বাজার, ময়েনদিয়া বাজার, সহস্রাইল বাজার, রূপাপাত—কালিনগর বাজার, গোহাইলবাড়ির বাজার, খরসূতি বাজারসহ জাতীয় ও স্থানীয় মিলে পত্রিকা বিক্রি করেন প্রায় ১৫ জন বিক্রেতা। রুস্তুম ২০০৫ সালে এই ব্যবসার সাথে জড়িত হয়। সে এই ব্যবসার মাঝেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বাবা, মা, স্ত্রীসহ দুই মেয়ে রয়েছে তার সংসারে। সহায় সম্পত্তি বলতে ভিটেমাটি ছাড়া কিছু নেই। আবার দুটি সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয় তার। সব মিলে তিনিসহ সবাই কোনো রকম দিনপাত করছেন। তিনি বলেন, এই উপজেলায় করোনাভাইরাসের আগে প্রায় ১৪০০ পত্রিকা চলতো। এখন সেখানে মাত্র ৬০০ পত্রিকা আনতে হয়।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: