কক্সবাজারে ২ লাখ বানভাসির চরম দুর্ভোগ, ত্রাণের জন্য হাহাকার

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২১, ০৪:২৩ এএম
কক্সবাজার জেলার ২ লক্ষাধিক বানভাসির দুর্ভোগ এখন চরমে। বন্যায় এত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী নেই। পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রও খোলা হয়নি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসিরা। রাস্তায় ও বাড়ির আশেপাশে আশ্রয় নিয়েছে বন্যাদুর্গত এসব মানুষ। বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগ। সব মিলে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে ২ লাখ বানভাসি। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম থেকে জানা যায়, বন্যার কারণে চারটি পৌরসভাসহ ৫১টি ইউনিয়নের ৫১৮টি গ্রামের ৭৬ হাজার ৫০০টি পরিবার পানিবন্দি। প্রতি পরিবারে যদি তিনজন বানভাসি হয়। সে হিসাবেও বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা ২ লক্ষাধিকের উপরে। বন্যায় পানিবন্দি হয়ে এসব মানুষ গত ২ দিন ধরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এদের মাঝে দেখা দিয়েছে খাবারের হাহাকার। বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট পাশাপাশি রয়েছে পানিবাহিত নানা রোগ। সেই সঙ্গে বন্যায় ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০ হাজার হেক্টর। দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের বন্যা দুর্গত এলাকায় সরেজমিনে মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার কারণে তারা প্রায় কয়েকদিন ধরে কর্মহীন। ফলে তিন বেলা ঠিকমতো খাওয়ার উপায় নেই বেশির ভাগ বানভাসি মানুষের। অনেকেই গবাদিপশুর সঙ্গে ছাপরা ঘর তুলে থাকছেন। অনেকের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। অনেক বানভাসির হাত-পায়ে পানি বাহিত রোগও দেখা দিয়েছে। কথা হয় ঝিলংজা ইউনিয়নের মুক্তারকুল গ্রামের আরেফা বেগমের সাথে। তিনি জানান, স্বামী মারা গেছেন তিন বছর আগে। এক মেয়ে আর একমাত্র সম্বল একটি ছাগল নিয়ে তার অভাবের সংসার কোনো মতে চলছিল। বন্যায় ঘরে পানি ওঠায় অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। তবে মেয়ে আর ছাগলের খাবার নিয়ে চরম সঙ্কটে পড়েছেন তিনি। পিএমখালী ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নেওয়া বৃদ্ধা ছকিনা বেগম বলেন, করোনার কারণে বাড়িতে বসে ছিলাম অনেকদিন। এখন আবার বন্যা। এই পানি কমে এই আবার বাড়ে। এভাবেই চলছে দু'তিন দিন থেকে। কি আর করবো কোনো কাজ কামও নেই। টিপু চেয়ারম্যান ১০ কেজি চাল দিয়েছে। তারপর এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজখবর নেই নাই। কোনো রকম বেঁচে আছি খেয়ে না খেয়ে। আশ্রয় নেওয়া আরোও কয়েকজন বলেন , বানের পানিতে সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে, তবে আমাদের শেষ সম্বল গরু ছাগলই আছে। আমরা নই না খেয়ে থাকতে পারি, কিন্তু অবলা প্রাণীদের দিকে চাইলে খুব কষ্ট হয় তাদের খাবার একদম-ই দিতে পারিনা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকার সাবেক এবং বর্তমান জনপ্রতিনিধির সাথে কথা বলে জানা গেছে, বন্যায় ১ হাজার ২৪৫ কিলোমিটার রাস্তা, ৪০ কিলোমিটার বাঁধ ও ৪০টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত কয়েক হাজার। দুই লক্ষাধিক গবাদিপশু পানিবন্দি রয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা কাজ করছি।  ইতোমধ্যে ৯ উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষের সহায়তায় ১৩৫ মেট্রিক টন চাল, শুকনো খাবার এবং শিশু ও গোখাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা বণ্টন শুরু হয়েছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানিসহ যেকোনও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।  এছাড়াও বন্যায় এবং পাহাড় ধসে নিহতদের পরিবারকে নগদ টাকা দেয়া হয়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বানভাসিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন এনজিওদের উদ্যোগে কয়েক হাজার পরিবারকে খিচুড়ি ১০ কেজি করে চাল, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনি, চিড়া, গুড়, মুড়ি, বিস্কুটসহ একটি করে ত্রাণের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: