শীতে সবজির বাজার দখল করতে ব্যস্ত চাষীরা

প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৪৬ পিএম
আসন্ন শীতে সবজির বাজার দখল করতে বীজতলায় বিশেষ পরিচর্যার মাধ্যেমে বীজ রোপন করে উপযুক্ত চারা তৈরী করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার চাষিরা। শেরপুর উপজেলার শীতকালীন সবজির চারা নিজেরা রোপন করে বাজার করে এবং এর বিশেষ চাহিদা রয়েছে চাষীদের মাঝে। উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের বেগুন, মরিচ, টমেটো, ফুলকপি, বাধাকপি চারা ময়মনসিং, তেঁতুলিয়া, ঠাকুরগাও কুড়িগ্রাম, নাটোর, জলঢাকা, নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার চাষীরা চারা সংগ্রহ করে চাষ করে। শীতকালেই শুধু নয়, সারা বছর সবজির চারার চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করেন এ উপজেলার চাষিরা। সরেজমিনে সকালে গাড়ীদহ মডেল ইউনিয়নের রানীনগর গ্রামের (বীজ রোপন) চাষী শরিফ উদ্দিন মিন্টুর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, জৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে জমি প্রস্তুতি শুরু করি। আষাঢ় মাসের শুরুতে বৃষ্টি ও রোদ থেকে বাঁচাতে চারা বীজের বেডের ওপর পলিথিনের ছাউনি দিতে হয়েছে। নিজস্ব প্রযুক্তি, পরিচর্যা, সার ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগে এ চারা তৈরী করি। এ চারা ৫ মাস পর্যন্ত বিক্রয় হয়। এই ৫ মাসে তিন থেকে চার বার চারা তৈরী করা যায়। আগাম সবজি চাষের চারা তৈরী হয়েছে। শীতে সবজির বাজার দখল করতে আমরা ব্যস্ত সয়ম পার করছি। এখনো মৌসুম শুরু হয়নি। তাই বর্তমানে চারার চাহিদা কম, দামও কম। নিফা নার্সারীর চাষী (বীজ রোপন) রোহান জানান, এক কেজি বীজে প্রায় ১লক্ষ চারা তৈরী হয় এর মাঝে ১০ হাজার নষ্ট হয়। প্রতি হাজার টমেটো চারা গত বছর মৌসুমে বিক্রয় হয়েছে ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা। এবার এখনো মৌসুম শুরু হয়নি তবে বর্তমানে বিক্রয় হচ্ছে ৮শ থেকে ১হাজার টাকা। মৌসুমের সময় চারার দাম বৃদ্ধি পাবে। মরিচ, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপির চারার দাম গত বছরের মতই আছে। ময়মনসিং থেকে চারা নিতে আসা আনছার আলী জানান, এখানে বিজলী মরিচ ও লিডার কপি এবং টমেটোর চারা খুব ভালো। তাই আমরা এখান থেকে প্রতি বছর চারা সংগ্রহ করে প্যাকেট করে নিয়ে যায়। এখনো মৌসুম শুরু হয়নি। আগাম সবজি বাজারে তুলতে চারা সংগ্রহ করছি। বর্তমানে সবজির রোগ বালাই বেশি তাই মানুষ কম জমি চাষ করছে এবার। শাজাহাপুর থেকে চারা নিতে আসা শাহিনুর রহমান জানান, লিডার কপি, বিজলি মরিচ ও টমেটোর চারা সংগ্রহ করছি। রোপনের ৬০ দিনের মধ্যে শীতের বাজারে আসবে চাষিদের উৎপাদিত ফুলকপি ও বাঁধা কপি। এরই মধ্যে লাউ, ঝিঙ্গা, মুলা বাজারে উঠতে শুরু করেছে। শিম, টমেটো, বেগুন কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে উঠবে বলেও জানান। রানীহাটের চাষি শী শুমহন্ত বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বিভিন্ন জাতের সবজির চাষাবাদ করছি। গত বছর এক একর জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করে খরচ বাদে ৮০ হাজার টাকা লাভ করেছি। চলমান বাজার ও আবহাওয়া ভালো থাকলে একই জমি থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে আশা রাখছি। শেরপুর উপজেলার বেশ কিছু ভূমিহীন চাষি রয়েছেন। যারা জমি বর্গা বা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। এসব সবজি ক্ষেতে দৈনিক মহিলা ২০০ টাকা ছেলে ৩৫০টাকা মজুরিতে শ্রম বিক্রি করে চলে অনেক কৃষি শ্রমিকের সংসার। উপজলো কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোসা. জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, এ বছর ৭ হেক্টর জমিতে বীজ চারা তৈরী হয়েছে। আগাম আমন ধান কাঁটা পর এই বীজ চারার চাহিদা বাড়বে। শেরপুর উপজেলায় রবি মৌসুমে এক হাজার ১৬৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জন হয়েছে ৭৮০ হেক্টর। তবে চাষাবাদ চলমান রয়েছে। বেশি ফলনের জন্য আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলে আশা রাখি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: