মুক্তির অপেক্ষায় আমরা ঢাকাবাসী

প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১০:১৮ এএম

রোজা আর চৈত্রের দাবদাহে যানজটে অতিষ্ঠ জনজীবন। ১০ মিনিটের পথ যেতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগছে। সকাল-বিকেল প্রধান সড়কগুলো যেমন যানজটে স্থবির; পাড়া-মহল্লা, গলিঅলিতেও একই চিত্র। ঘণ্টায় গতি ৩ দশমিক ৮১ কিলোমিটার। আমরা রাজধানী বাসীর মুক্তি মিলবে কবে? মুক্তির অপেক্ষায় আমরা ঢাকাবাসী। এমন প্রশ্ন জ্যামে বসে থাকা প্রতিটি মানুষের মনে। সদরঘাট টু গাবতলীর রাস্তা যেন বিশ্বজয় করার মত অবস্থা। আয়ের উপর নির্ভর এই মানুষগুলো দিন শেষে কতটা স্বস্তি পাচ্ছে?

আসুন একটু পিছনে ফিরে দেখা যাক- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্যানুযায়ী, ২০০৭ সালে ঢাকায় গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ২০১৫ সালে তা কমে হয় সাত কিলোমিটার। ২০১৭ সালে এ গতি হয়েছে পাঁচ কিলোমিটার। এখন তা আরও কম। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৭ সালে ঢাকায় গাড়ির গতি শূন্যের কাছাকাছি নেমে যেতে পারে।

এদিকে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনাকালের দুই বছরে ২৫ হাজার নতুন প্রাইভেটকার নেমেছে ঢাকার রাস্তায়। ২০২১ সালে রেকর্ড সংখ্যক ৯৯ হাজার ৮১০টি মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে রাজধানীতে।

করোনাকালে যখন পুরো বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে অর্থনৈতিক দিক থেকে, সেখানে আমাদের মত মধ্যম আয়ের দেশে করোনাকালের দুই বছরে ২৫ হাজার নতুন প্রাইভেটকার নেমেছে ঢাকার রাস্তায়। আমরা কি সত্যি দারিদ্রসীমার উপরে বসবাস করছি তাহলে?

যেভাবে গাড়ীর লাইন দীর্ঘ হচ্ছে তাতে বায়ূ দূষণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। গত কয়েকদিন দেশের পত্র-পত্রিকা খুললেই চোখ পড়ছিল ২১ কিলোমিটার পথ আসা-যাওয়ায় সময় লাগছে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা! মহাখালী থেকে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় যেতে সময় লাগছে দেড় ঘণ্টা। কি ভয়াবহ পরিস্থিতি। আবার অন্য দিকে দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ কর্মজীবী মানুষ পরিবারের সাথে ইফতারিও করতে পারছে না। বাসে কিংবা সিএনজিতে অথবা রাস্তার পাশে দাড়িয়ে ইফতারি করতেও দেখা যাচ্ছে।

রমজানের শুরু থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ছিল একই চিত্র। করোনায় 'লকডাউন' চলাকালে যানজট ছিল না। অফিস-আদালতের পর গত ১৬ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোদমে চালু হওয়ার পর যানজট হচ্ছে করোনাকালের আগের চেয়েও বেশি। অন্যান্য বছর যানজটের কারণে রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। করোনার ক্ষতি পোষাতে এবার তা খোলা রাখা হয়েছে। সকালে এক ঘণ্টার ব্যবধানে স্কুল-কলেজ ও অফিস খুলছে। সব ছুটিও হচ্ছে দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ বলছে, সকাল ও বিকেলে রাজধানীতে গাড়ির চাপ ভয়াবহ বাড়ছে। গুলশান-বনানীর গাড়ি প্রধান সড়কে বের করতে বেশ বেগ পেতে হয়। ওই এলাকার গাড়ি যখন বিমানবন্দর সড়কে ওঠে তখন আবার প্রধান সড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। তবে কাকলী ক্রসিং খুলে দেওয়ায় অনেকটা সুবিধা হয়েছে।

এআরআইর পরিচালকের তথ্যমতে, পরিবহনে শৃঙ্খলার জন্য ভূমি ব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। ঢাকায় এই তিন ব্যবস্থাপনা একসঙ্গে কাজ করছে না। পরিবহন শুধু অবকাঠামো নয়, বরং ব্যবস্থা। যানজট নিরসনে শুধু ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, সড়ক নির্মাণের মতো অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থাপনা ও যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবা হয়নি। তার ফল হচ্ছে এখনকার অসহনীয় যানজট।

আরেফিন সোহাগ
লেখক ও সাংবাদিক
ইমেইল: [email protected]
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮৭৭৭০২৯

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: