সাভারে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বিউটি পার্লার ও সেলুন

ঢাকার সাভার উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তোলা হচ্ছে বিউটি পার্লার ও সেলুন, পারা মহল্লা থেকে শুরু করে বিভিন্ন শপিংমল, সুপার মার্কেটসহ এলাকার অলি-গলিতে গড়ে তোলা হচ্ছে বিউটি পার্লার এন্ড ট্রেনিং সেন্টার, বেশীরভাগ পার্লারগুলোতে ব্যাবহার করা হচ্ছে নিন্মমানের প্রসাধনী। নিন্মমানের প্রসাধনী ব্যাবহার করার ফলে অনেক গ্রাহকদের ত্বকে নানা ধরনের চর্ম রোগ, ব্রন, ক্যানসারসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাভারের অন্ধ কল্যান সংস্থা, চৌরঙ্গী সুপার মার্কেট, দিলখুশা সুপার মার্কেট, ইউসুফ টাওয়ার, ওয়াপদা রোড, বনপুকুর, ছায়াবীথি, সবুজবাগ, ব্যাংক কলোনী, ইমান্দিপুর, রাজাশনসহ আশে পাশের এলাকাতে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে তোলা হয়েছে বিউটি পার্লার এন্ড ট্রেনিং সেন্টার।
মানুষ প্রতিদিনই তার প্রয়োজনে বিউটি পার্লার ও সেলুনের দিকে ছুটছেন। এই সুযোগে কিছু অসাধু বিউটি পার্লার ও সেলুন মালিকরা বেশি মুনাফা লাভের আশায় নিম্নমানের ও ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহার করছেন, যাতে কোনও বিএসটিআই এর অনুমোদন নাই। ট্রেনিং সেন্টারের নামে চলছে প্রতারণা। নিন্মমানের প্রসাধনীর কোনও কোম্পানি নাই, এগুলি তৈরি করা হয় কেরানীগঞ্জ ও চকবাজারের গোপন কারখানা গুলিতে।
সাভার উপজেলায় বিভিন্ন বিউটি পার্লার ও সেলুন গুলিতে অনুসন্ধানের ফলে জানা যায় বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠানেই কমদামে ভেজাল ও নিম্ন মানের প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও কোন কোন প্রষ্ঠিানের নাই সরকারের কোন অনুমোদন, কারো কারো ট্রেড লাইসেন্স থাকলেও রিনিউ করা থাকে না।
বিউটি পার্লার ও সেলুনের কাস্টমারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় যে, তাঁরা নিন্মমানের প্রসাধনীর বিষয়ে কিছুই জানে না, কাস্টমারকে জানানো হয় বিভিন্ন দেশের নামকরা ব্রেন্ডের নামকরা কম্পানীর প্রসাধণীই ব্যবহার করা হয়। এই নিম্ন ও ভেজাল প্রসাধনী দীর্ঘ দিন ব্যবহারের ফলে ত্বকে নানা ধরনের চর্ম রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।
এই বিষয়ে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর ডাক্তারের কাছে নিন্মমানের প্রসাধনীর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে উনি বলেন, নামহীন নিন্মমানের প্রসাধনী ব্যবহারে ত্বকের কোনও উপকারে আসে না, বরং নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি হয়, যেমন চর্মরোগ ও ত্বকে ক্যান্সার ও সৃষ্টি হতে পারে।
প্রসাধনী ব্যবহারের সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর একটি হলো ক্যান্সারের সম্ভাবনা। লিপস্টিকে থাকে অ্যালুমিনিয়াম, যা ঘটাতে পারে রক্তশূন্যতা আর শর্করার প্রতি অসহনশীলতা। অনেক প্রসাধনী দীর্ঘদিন খোলা আবহাওয়াতে ভালো রাখার জন্য যে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, তা ত্বকের ক্যান্সারের সম্ভাবনাকে অনেক বেশি বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া প্রসাধনী ও মেক আপ সামগ্রীতে থাকা জিংক অক্সাইড, বেরিয়াম সালফেটের মতো উপাদানও হতে পারে ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এসকল উপাদান বয়ে আনতে পারে কিডনি আর যকৃতের বিভিন্ন জটিলতাও। এমনকি অঙ্গ বিকলকরণের মতো ভয়াবহ ফলাফল আনতে পারে এগুলোর একটানা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার।
তিনি আরও বলেন, মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে প্রসাধনী আর মেক আপ পণ্যের দৈনন্দিন ব্যবহার। ইউরিয়া ডায়াজোডিনিলের মতো অনেক রাসায়নিক উপাদান বেশিরভাগ প্রসাধনী তৈরির প্রধান উপাদান। এছাড়া ব্যবহার করা হয় এসব প্রসাধনী দীর্ঘদিন ভালো রাখার জন্য আরো অনেক অণুজীবরোধক রাসায়নিক উপাদান। এসকল প্রসাধনী যখন সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসে, তখন আরো অনেক ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দিতে পারে মাথাব্যথা। আবার এসব প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত চোখের প্রভাবেও দেখা দিতে পারে মাথাব্যথা। বিশেষ করে মাইগ্রেন আর আগে থেকেই মাথাব্যথায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য প্রসাধনী ব্যবহারে সচেতন হওয়া কিন্তু বেশ জরুরি।যারা নিন্মমানের প্রসাধনী ব্যবহার করে কাস্টমারদের সাথে প্রতারণা করছে তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান।
সাধারণ ভুক্তভোগীরা মনে করেন এই সমস্ত বিউটি পার্লার ও সেলুন গুলিতে উপজেলা প্রশাসনের তদারকি করা দরকার, যাতে করে বিউটি পার্লার ও সেলুন গুলিতে নিম্নমানের ও ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহার করে প্রাহকের সাথে প্রতারনা করতে না পারে।
সাভারের পার্লারগুলো রুপসজ্জায় যেসব প্রসাধনী ব্যবহার করছে তার বেশিরভাগই নকল। দেশের তৈরি এসব পন্য বিদেশি বলে প্রতারনা করছে। মানুষের ত্বক ও স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তাদের ব্যবহার করা বেশির ভাগ পন্য মেয়াদ ফেল। অনেক পন্যের গায়ে উৎপাদনের তারিখও নেই। তারা মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য নিচ্ছে কিন্তু ভোক্তাদের যথাযথ সেবা দিচ্ছে না এমন অভিযোগ অনেক গ্রহকের। সাভারের কোন কোন বিউটি পার্লারে ট্রেনিং সেন্টারের নামে করা হচ্ছে প্রতারনা, নিজের নেই পার্লারের ট্রেনিং এর শিক্ষাগত সনদ তারাই অনাগতদের ট্রেনিং দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
বর্তমানে আধুনিক তরুণীদের রূপ চর্চা করার বিশ্বস্ত জায়গা হচ্ছে বিভিন্ন বিউটি পার্লার। বিয়ে বা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তরুণীরা সাধারণত বিউটি পার্লারে লিপস্টিক, লিপ লায়লার, আইলেনার, মার্সকারা, আইসেট, কাজল, ফাউন্ডডিশন, সাইনিং মেকআপ, এবং ত্বকের ধরন বুঝে বিভিন্ন ধরনে মেকআপ ইত্যাদি প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকে। প্রসাধনী ছাড়াও বিয়ের সাঝঁ, হলুদের সাঝঁ, হেয়ার কাট, সিল্ক অ্যান্ড সাইনিং রিবন্ডিং, রোলার কার্লিং অথবা স্মুথনিং, তরুণীদের জন্য হারবাল ব্রাইটেনিং, চুলের কাটের জন্য ভলিউম কাট ও লেয়ার কাট, এ ছাড়া ব্রাইডাল মেইকআপের সঙ্গে পার্টি মেইকআপ, বডি শাইনিং ম্যাসাজ, হেয়ার স্পা, ফেইজ নরমাল ম্যাসাজ এবং হেয়ার রিবন্ডিং, হেয়ার কাট, পেডিকিউর, মেনিকিউর, পার্টি মেইকআপ এসকল কাজের কোন মূল্য তালিকা না থাকায় একেক পার্লারে একেক রকম মূল্য নেয়া হচ্ছে।
একথা বলাই যায় দেশের অন্য অনেক ব্যবসার মতো এখানেও অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য আছে। যার কারণে আমরা প্রায়ই দেখি ভ্রাম্যমাণ আদালত নামিদামি ব্র্যান্ডের বিউটি পার্লারকে লাখ লাখ টাকা জরিমানা করছে। বিশেষ করে ঈদ মৌসুমে এধরনের প্রতারণা বেশি দেখা যায়।
এখনই সময় লাগাম টেনে ধরার, নজরদারি জোরদার করার। নতুবা সৌন্দর্য বর্ধনের প্রচেষ্টা রূপ নিবে সৌন্দর্য হরণে। এসিড সন্ত্রাসের চেয়ে কোনো অংশে কম ভয়াবহ নয় যদি মেয়াদ উত্তীর্ণ ও নিম্নমানের প্রসাধনী ব্যবহার করা হয়। সৌন্দর্যচর্চা এখন আর সৌখিন কোনো বিষয় নয়। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রীতিমত পড়ালেখা করানো হয় এ বিষয়ে। রূপচর্চায় ভেজাল প্রসাধনী বাংলাদেশে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের সব নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্যের নকল এতোটা সুক্ষ্মভাবে করা হচ্ছে যে ক্রেতা-বিক্রেতা সবার জন্যই বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায় নকলের ভিড়ে আসল পণ্য খুঁজে বের করা।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: