সংসদে মহিলা সংরক্ষণ আসন চায় না খেলাফত আন্দোলন

প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২২, ১২:৩০ পিএম

মেহেদী হাসান হাসিব, নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদে মহিলা সংরক্ষিত আসন তুলে দেওয়াসহ ইভিএমে ভোট চায় না বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। এছাড়া একগুচ্ছ প্রস্তাবনা দিয়েছে দলটি। রবিবার (২৪ জুলাই) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়েছে এসব প্রস্তাব দেয় দলটি।

দলটি যেসব লিখিত প্রস্তাবনা দিয়েছে-

১. নির্বাচন কমিশনকে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।

২. নির্বাচন কমিশনকে সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত থাকতে হবে।

৩. মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনে যারা নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন তাদেরকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে হবে। প্রয়োজনে বদলি করা, বরখাস্তনকরা ইত্যাদি এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকতে হবে।

৪. নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের সময় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা প্রদান
করে মোতায়েন করতে হবে।

৫. নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল বৃদ্ধি করে প্রত্যেকটি নির্বাচনী আসনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের থেকে দক্ষ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. প্রধান নির্বাচন কমিশনারের যে আইনি ক্ষমতা রয়েছে, নতজানু না হয়ে তা কার্যকর ক্ষেত্রে পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে হবে।

৭. আসন সীমানা নির্ধারণে জনসংখ্যা অনুপাতে ভৌগলিক দূরত্ব ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।

৮. যেহেতু সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ আছে অতএব সিলেকশনের মাধ্যমে মহিলাদের জন্য সংসদে পৃথক আসন সংরক্ষণ করার যৌক্তিকতা নেই। আসন সংরক্ষণের এই ব্যবস্থাটি বৈষম্যমূলক বিধায় তা বিলুপ্ত করা
হোক।

৯. জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না।

১০. নির্বিঘ্নে ও সহজে যাতে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে।

১১. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর জামানত ১০,০০০/= (দশ হাজার) টাকার মধ্যে রাখতে হবে। ভোটার তালিকা সম্বলিত সিডি প্রার্থীকে বিনামূল্যে প্রদান করতে হবে।

১২. বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীর গেজেট প্রকাশ না করে ফের নির্বাচনের বিধান করতে হবে।

১৩. ঋণখেলাপিদের মতো ইসলামবিদ্বেষী, ধর্মদ্রোহী নাস্তিক, চিহ্নিত দূর্নীতিবাজ, খুনী, সন্ত্রাসী, কালোটাকার মালিক, অবৈধ
সম্পদকে বৈধকারী ও ঋণখেলাপীদের সাথে জড়িত পরিবারবর্গকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।

১৪. দল থেকে বহিস্কার হলে যেমনিভাবে সংসদীয় পদ বাতিল হয়ে যায়, তেমনিভাবে নির্বাচিত সদস্যদের নির্বাচনী অঙ্গীকার ভঙ্গ, দলীয় মেনিফেস্টোর লঙ্ঘণ, স্বৈরাচারনীতি, খুনী-সন্ত্রাসী ও ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদী কর্মকাণ্ড প্রকাশ পেলে কমিশন কর্তৃক তার সদস্যপদ বাতিল করার বিধানও করতে হবে।

১৫. অবাধ ও মুক্ত রাজনীতি চর্চার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্তাবলী শিথিল করতে হবে।

১৬.. রাজনৈতিক দলের সকল কমিটিতে ৩৩% মহিলা সদস্য রাখার বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত ধারাটি বাতিল করতে হবে।

১৭. কোরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো শর্ত আরোপ করা যাবে না।

১৮. দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এবং যোগ্য ও আদর্শবান লোকদের নির্বাচিত করতে নির্বাচনী ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। কারণ কষ্ট করে বৈধপন্থায় উপার্জিত টাকা জনগণের সেবার উদ্দেশ্যে নির্বাচনে ব্যয় করা অনেক কঠিন বিষয়।

১৯. নির্বাচনী ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একই আসনে সব প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীর নাম ও প্রতীক সংবলিত
একই পোষ্টার ছাপানো এবং তা প্রার্থীদের কাছে সরবরাহ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

২০. ব্যয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম প্রমাণিত হলে প্রার্থীতা বাতিল এমনকি নির্বাচিত হলেও তার সদস্যপদ বাতিলের আইন করতে হবে।

২১. না ভোটের বিধান পূণরায় চালু করতে হবে। নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষা করা।

২২. নির্বাচনকে অর্থ ও পেশীশক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ তথা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়াও নির্বাচনে ভোট ক্রয়-বিক্রয় এবং কালোটাকা ও পেশীশক্তির ব্যবহার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, ভোটের আগের দিন কেন্দ্রে সেনাবাহিনীসহ পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা, ভোটকেন্দ্র ও এর আশেপাশে দলীয় ক্যাডারদের মহড়া/যৌথ মহড়া বন্ধ করার আইন প্রণয়ন, দেশী-বিদেশী নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কোনরুপ বাধা সৃষ্টি না করা, প্রবাসীদের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগের সুব্যবস্থা রাখা, নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন প্রভৃতি সুপারিশও করা হয়।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমিরে শরিয়ত (চেয়ারম্যান) মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজীর নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: