ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেহাল সড়কে ভুগছে পৌরবাসী

প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২২, ০৯:৩৪ পিএম

ভাঙাচোরা সড়ক, বেহাল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ফুটপাত বেদখল, যানজট এসব মিলিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাগরিকদের অবস্থা তথৈবচ। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণেও দুর্ভোগ চরমে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পৌর এলাকায় গড়ে উঠছে অবৈধ বহুতল ভবন। এসব ভবন নির্মাণে নীতিমালা না মানায় (নিরাপত্তা ব্যবস্থা না করা) ঝরছে প্রাণ, আহত হচ্ছে অনেকে। প্রতিনিয়তই ভরাট হচ্ছে পুকুর। এক প্রকার মরে গেছে শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া একমাত্র খাল (টাউন খাল)।

আবার যানবাহনের শব্দদূষণে অতিষ্ঠ জনজীবন। সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা রকমের অনিয়ন্ত্রিত বাণিজ্যিক মাইকিং। অল্প বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় বেশির ভাগ সড়ক। নেই ময়লা শোধনাগার। নাগরিকদের নাকের ডগায় বেহাল সড়কে ভুগতে হচ্ছে আবর্জনায়। ব্যানার-ফেস্টুনে পৌর এলাকার সৌন্দর্যে ব্যাঘাত ঘটে। এ হাল প্রথম শ্রেণির ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার। ১৫৪ বছর বয়সী এ পৌরসভার নাগরিক সেবা যেন একেবারে ভেঙে পড়েছে। নামে প্রথম শ্রেণির হলেও পৌরসভার নাগরিক সেবা যেন একেবারে তলানিতে।

এ নিয়ে নাগরিকদেরও ক্ষোভের শেষ নেই। পৌরসভার লক্ষ্য হিসেবে লেখা আছে, সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে ২০২৫ সালের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভাকে সব অবকাঠামোর দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ, দারিদ্র্যমুক্ত, নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব, বর্জ্যদূষণমুক্ত এবং আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দক্ষ একটি পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার কথা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ওয়েবসাইটে এই তথ্য উল্লেখ করা আছে।

গত ৪ জুলাই রেড ক্রিসেন্টের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও ঠিকাদার এ বি এম তৈমুরের ড্রেন পরিষ্কারের দৃশ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে পৌর নাগরিক সেবার সার্বিক অবস্থার বিষয়টি আরো সামনে চলে আসে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা না আসায় বাধ্য হয়ে বাড়ির সামনের (ফুলবাড়িয়া-মুন্সেফপাড়া-বাগানবাড়ি তিন রাস্তার মোড়) ড্রেন পরিষ্কার করছেন বলে তৈমুর ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন। শুধু ওই ড্রেন নয়, পৌর এলাকার বেশির ভাগ ড্রেনের একই অবস্থা।

এ বর্ষায় পৌরসভার নানা স্থান ঘুরে দেখা গেছে, একটু বৃষ্টি হলে পৌর এলাকার প্রধান প্রধান সড়কসহ অলিগলি পানিতে তলিয়ে যায়। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা ও নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করা হয় না বলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির কথা জানায় পৌরসভার ভুক্তভোগী নাগরিকরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কাউতলী থেকে কুমারশীল মোড় পর্যন্ত প্রধান সড়কটি ছাড়া পৌর এলাকার ভেতরের সড়কগুলো বেহাল। যদিও এ সড়কটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীন। বড় বড় গর্ত হয়ে আছে পৈরতলা- গোকর্ণঘাট সড়কে, যেটি ভয়াবহ সড়ক হিসেবে বিবেচিত। এ ছাড়া ফুলবাড়িয়া, মুন্সেফপাড়া,মধ্যপাড়া, হালদারপাড়া, দাতিয়ারা সড়কের অবস্থাও ভাঙাচোরা দেখা যায়। ফুটপাত দখল ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সবচেয়ে বড় সমস্যা। বিশেষ করে টিএ রোডের ব্রিজের গোড়া, কোর্ট রোড, কুমারশীল মোড়, মসজিদ রোডে কয়েক শত হকার বসে প্রতিদিন। এতে যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি পথচারীদের চলাফেরা করতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়।

অভিযোগ আছে, ফুটপাত থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলা হয়। মাঝে মধ্যে পৌরসভা নামকাওয়াস্তে অভিযান চালালেও দু-চার দিনের মধ্যে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। তবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যোগদানের পর এই অভিযান কিছুটা জোরদার হয়েছে। অল্প বৃষ্টিতে সড়ক পানিতে তলিয়ে যায় বলে দুর্ভোগ আরো বাড়ে। কেননা, ভাঙা সড়কে তখন দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। ফুলবাড়িয়া, মুন্সেফপাড়া, কুমারশীলের মোড়, হালদারপাড়া, মেড্ডা সিইও অফিস এলাকাসহ বিভিন্ন সড়ক সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়। সড়ক নিয়ে কথা হয় রিকশাচালক মো. সিরাজ মিয়ার সঙ্গে।

ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘মেইন রুডটা (কাউতলী টু কুমারশীল মোড়) হুদা বালা। কিন্তু এই রুডে হারা দিন যানজট লাইগায় থাহে। আর শহরের বিতরের রাস্তা তো ইমুন খারাপ যে কইবার মতো না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রতন কান্তিদত্ত বলেন, ‘পৌর নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘নাগরিকদের সেবা দিতে আমি আমার মতো করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। এখন চেষ্টা করতেছি নিজস্ব তহবিল থেকে পৌরসভার ভেতরের রাস্তাগুলো চলাচলের উপযোগী করার। ড্রেনগুলোও নিয়মিত মেরামত ও পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু সচেতনতার অভাবে ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় বলে রাস্তার উপরে পানি চলে আসে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: