হাকালুকি হাওরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহেও চলছে মাছ শিকার

নিরাপদ মাছে ভরবো দেশ, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন হচ্ছে। তবে মৎস্য সপ্তাহেও প্রজনন মৌসুমে এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে মশারী কাপড় দিয়ে তৈরি বেড় জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে মাছের পোনা নিধন চলছে। কিন্তু মৎস্য অফিসের দায়সাড়া কার্যক্রমে ও হাওরাঞ্চলের জেলেদের বিকল্প জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা না থাকায় মৎস্যজীবীরা হাওরগুলো থেকে অবাধে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে পোনা মাছ ধরে বিক্রি করছেন। কিন্তু মোবাইল কোর্টে জরিমানার কথা মৎস্য অধিদপ্তর বললেও বাস্তবে তা লক্ষণীয় নয়। এতে দিনে দিনে কমে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
হাকালুকি হাওরে রয়েছে ছোট-বড় ২৩৮ টি বিল। হাকালুকি হাওর বেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলায় অধিকাংশ বিল রয়েছে। এখানে বর্ষা মৌসুমে বিশাল জলরাশির সৃষ্টি হয়। এ সময় এখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। এ সুযোগে স্থানীয় অসাধু মৎস্য শিকারীরা মৎস্য অফিসারকে ম্যানেজ করে নিষিদ্ধ বেড় জাল দিয়ে অবাধে ডিম ওয়ালা মাছ সহ পোনা মাছ নিধন করছে।
জানা যায়, সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত বিশাল বিশাল বেড় জাল দিয়ে হাওরে মাছ নিধন করা হচ্ছে। এ সকল পোনা মাছ গাড়ি যোগে রাত পোহানোর আগেই ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশ্যে দিনের বেলায় হাওরে শিকারিদের বেড় জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে। তবে প্রকাশ্যে দিন থেকে গভীর রাত অব্দি পোনা মাছ নিধন হলেও মৎস্য কর্মকর্তা যেন দেখেও না দেখার ভান করছে।
হাওরপাড়ের স্থানীয় বাসীন্দাদের অভিযোগ, মৎস্যজীবীরা স্থানীয় মৎস্য অফিসকে ম্যানেজ করে মাছ ধরে বিক্রি করছেন। ঢাকাসহ সারা দেশের প্রত্যেক বাজারে মাছের পোনা বিক্রী হচ্ছে নিয়মিত কিন্তু এ যেন দেখার কেউ নেই। নিষিদ্ধ বেড় জাল নিয়ে সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত আবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত পালা করে চলে পোনা মাছ শিকার। একেকটি বেড় জালের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০০ হাত। এরকম অর্ধশত জাল দিয়ে বিশাল নৌকা যোগে মাছ নিধন করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি বেড় জালে ২৫-৩০ জন জেলেকে পোনা মাছ শিকারে নামতে দেখা যায়। প্রতিটি জাল দিয়ে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ মণ মাছ শিকার করা হচ্ছে। এ হিসেবে প্রতিদিন এ হাওর থেকে কয়েক টন মাছ শিকার করা হয়। যার বাজার মূল্য কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপনের এই সময়ে হাওরে অবাধে পোনা মাছ শিকার করায় এ নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে মাত্র কয়েকশো গজ দূরে কন্টিনালা ব্রিজ ও চৌমুহনী থেকে মাছ বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হলে ও তা মৎস্য অফিসারের নজরে পড়ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মৎস্য অফিসার আবু ইউসুফ এর আগে জুড়ী উপজেলায় সহকারী মৎস্য অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন। হাওরে মৎস্য নিধনে তাঁর সম্পৃক্ততা থাকায় তাঁকে এখান থেকে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি আবারও মৎস্য অফিসার হয়ে পোস্টিং নিয়ে আবারও এ উপজেলায় আসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে জানান, কয়েকজন লোকের মাধ্যমে মৎস্য অফিসার আবু ইউসুফকে প্রতিদিন চাঁদাসহ মাছ দিতে হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মামলার ভয় দেখানো হয়। তাই আমরা বাধ্য হয়েই চাঁদা দিয়ে হাওরে জাল দিয়ে মাছ ধরছি। অতি সম্প্রতি উপজেলা আইন-শৃঙ্খলার মিটিং-এ তার বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন অভিযোগ করেন। মাছ শিকারি চক্রের সাথে যোগসাজশ ও বিভিন্ন বিলের ইজারাদার সাথে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে সেচ মেশিনে বিল শুকানোর অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হলেও তিনি এখনো আছেন বহাল তবিয়তে।
একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার হিসাবে, হাওরের ৫৫ প্রজাতির মাছ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে মহাশোল, রিটা, নানিদ, বাঘাইড়সহ পাঁচ প্রজাতির মাছ অতি সংকটাপন্ন এবং আরও ১৫ প্রজাতির মাছ রয়েছে সংকটনাপন্ন অবস্থায়। বেড় জাল দিয়ে অবাধে পোনা মাছ নিধনের ফলে একদিকে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র গুলো ধ্বংস হচ্ছে অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে বিশাল অংকের রাজস্ব। হাওরে নিষিদ্ধ কোনা জাল, বেড় জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার যত দ্রুত সম্ভব ব্যবহার বন্ধের দাবি জানান সর্বস্থরের জনসাধারণ।
এখন পর্যন্ত হাকালুকি হাওরে কোন ধরনের অভিযান করা হয়নি নিশ্চিত করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবু ইউসুফ বলেন, মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে ২৫ জুলাই অভিযান পরিচালনা করার কথা থাকলেও বৃষ্টির জন্য আমরা যেতে পারছি না। তাঁকে ম্যানেজ করে মাছ শিকারের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুহম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার কথা। মৎস্য শিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান না করার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: