৩০ দিনে মিলবে এনআইডি সেবা, কমবে ভোগান্তি

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২২, ০৬:০১ পিএম

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা সহজ করতে এবং নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে ক্যাটাগরি বিভাজনের পর হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ তার এখতিয়ারভুক্ত সংশোধনের আবেদনগুলো (ক্যাটাগরি) 'ক' ৭ কার্যদিবস, ক্যাটাগরি 'খ' ১৫ কার্যদিবস ও ক্যাটাগরি 'গ' ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পন্ন করতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

সম্প্রতি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন) মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী স্বাক্ষরিত এই সংক্রান্ত নির্দেশনাটি সকল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যই ছিল নাগরিক সেবা আরও সহজ ও গতিশীল করা। সে লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে ক, খ, ও গ ক্যাটাগরির সংশোধনের আবেদনসমূহ সংযুক্ত দলিলাদি যাচাই-বাছাইকরণ এবং প্রয়োজনানুসারে তদন্ত করতঃ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণকেই আবেদন নিষ্পত্তি (অনুমোদন/বাতিল) করে নাগরিক সেবাকে গতিশীল করার নিমিত্ত নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল।

এ কার্যক্রম সুচারুরুপে সম্পাদন করতে সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিম্নোক্ত দায়িত্বসমূহ পালনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো: ১.নাগরিকদের দুর্ভোগ লাগাবে বিষয়টি লক্ষ্য রেখে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে। ২.দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ তার আওতাভুক্ত ক-খ-গ ক্যাটাগরি আবেদনসহ পরীক্ষান্তে নিজে নিষ্পত্তি করবেন।

৩.যথাযথ শিক্ষা সনদ জন্ম সনদ বা অন্যান্য যৌতিক প্রয়োজনীয় দলিলাদি থাকা সত্ত্বেও অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত দলিলাদি চাওয়া হতে বিরত থাকতে হবে। ৪.দীর্ঘদিন ধরে সংশোধনের আবেদন অনিষ্পন্ন রাখা হতে বিরত থাকতে হবে প্রয়োজনে শুনানি গ্রহণ ও দাখিলকৃত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ তার আওতাধীন আবেদনের নিষ্পত্তি (অনুমোদন /বাতিল) করতে হবে।

৫.মাঠ পর্যায়ের সকল ক্যাটাগরির আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সপ্তাহে দুইদিন শুনানি পগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। শুনানি প্রদানের তারিখের পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। ৬.ক্যাটাগরি বিভাজনের পর হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ তার এখতিয়ারভুক্ত সংশোধনের আবেদনগুলো (ক্যাটাগরি) 'ক' ৭ কার্যদিবস, ক্যাটাগরি 'খ' ১৫ কার্যদিবস ও ক্যাটাগরি 'গ' ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পন্ন করবেন।

৭.আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাগণ তার আওতাধীন যেসকল আবেদনসমূহ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হবেন সে সকল আবেদন সংশ্লিষ্ট দলিলাদি, তদন্ত প্রতিবেদন এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাগণ সুস্পষ্ট মতামতসহ আবেদনসমূহ নিষ্পত্তির জন্য মহাপরিচালক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ বরাবর প্রেরণ করবেন। উল্লেখ্য যে এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রজ্ঞাপনের ক্যাটাগরি হতে ক্যাটাগরিতে সুপারিশ করতে পারবেন।

৮.দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ কে ইউজার user account টি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। সংশোধন আবেদনের নিষ্পত্তি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ হতে কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ আওতায় থাকবে সকল প্রকার এনআইডি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকে, এতে প্রত্যেক ইউজার তার কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতার আওতায় থাকবে।

৯.যেসকল নাগরিকগণ অনলাইনে আবেদন করতে অসমর্থ হবেন তাদেরকে উপজেলা/ থানা নির্বাচন অফিসের অনলাইনে আবেদনের বিষয়টি প্রয়োজনীয় সহযোগীতা প্রদান করতে হবে। ১০.help desk এ অনলাইন আবেদন সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ ও সংশোধন সংশ্লিষ্ট যৌক্তিক দলিলাদির বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করতে হবে।

১১.জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ হতে কেন্দ্রীয়ভাবে আবেদনের ক্যাটাগরি বিভাজন করার ক্ষেত্রে অঞ্চলভিত্তিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। ১২.টেকনিক্যাল যেকোন সমস্যা বা সহায়তার জন্য আইটি শাখার সাথে এবং অপারেশনাল বিষয়ে অপারেশনের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

এছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তার আওতাধীন আবেদনসহ নিষ্পত্তি করে দ্রুত আঞ্চলিক নিবার্চন কর্মকর্তার নিকট রিপোর্ট প্রেরন করতে বলা হয়েছে। যা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা কোন অঞ্চল ভিত্তিক উপজেলা থানা ও জেলা উপজেলা থানা ও জেলা রিপোর্টের কপি সংযুক্ত করে উপযুক্ত সহকারী পরিচালক সংশোধন প্রতিস্থাপনের ইন্টারনাল প্রদান করবেন।

এর আগে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে দলটির সাধারণ সম্পাদক সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া এনআইডি সংশোধনের হয়রানি প্রসঙ্গ তুলছে, এতে সিইসি বলেন, ভুলের পরিমাণটা এতো বেশি গেছে, আমার মনে হয় কোটি কোটি ভুল। আ-কার, ই-কার, ঈ-কার নিয়ে ওখানে বিপদে পড়ছে, এয়ারপোর্টে বিপদে পড়ছে, ওর সাথে মিলছে না।

আমি নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে আমার বন্ধু-বান্ধব যারা আছে, ৪০-৫০টা আমি নিজেও করে দিয়েছি। হ্যাঁ, এটা সত্য বিলম্ব হচ্ছে। কেন দু’বছর, চার বছর বিলম্ব হচ্ছে- কারণটা হচ্ছে বছর দুয়েক আপনার করোনা ছিল। তখন কার্যক্রমটা কমে ছিল। ভুলের সংখ্যাও কিন্তু হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ নয়। মায়ের নাম, বাবার নাম, অনেকে হঠাৎ করেই নামে থেকে মোহাম্মদ বাদ দিতে চাচ্ছেন, মোহাম্মদ ছোট না বড় হবে, এতো সব দাবী।

তিনি বলেন, আমাদের তরফ থেকে সেই ভাবে যেহেতু আমাদের কতগুলো কাজ আমরা নির্বাচনের কাজ করি। আবার রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের কাজ কিন্তু আমাদের ওপর পড়ে গেছে। সাংবিধানিকভাবে এটা কিন্তু আমাদের নয়, আইনের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। তারপরে এনআইডি যেটা এটা বিশাল একটা কর্মযজ্ঞ। এখন আবার ওরা ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে কাজ করছে।

সিইসি আরও বলেন,আমরা চেষ্টা করবো,আমাদের যে কার্যক্রমে অনেক দুর্বলতা থাকতে পারে সেগুলো কে আরও সক্ষম ও সবল করার জন্যে। আপনাদের সহায়তা নিয়ে ইনশাআল্লাহ আমরা চেষ্টা করবো।

এই সময় এনআইডি মহাপরিচালকে একেএম হুমায়ুন কবীর বলেন, অনেক ইচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে। আবার অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে। সবার শিক্ষা সনদ থাকলে সুবিধা হতো। আমরা মানুষকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছি। আমাদের ভুল হচ্ছে। তবে কমিশনের নির্দেশ আমরা প্রতিপালন করার চেষ্টা করছি।

তিনি আরো বলেন, ২০০৭ সালের যখন এনআইডি করা হয়েছিল তখন ভেবেছিল এটা দিয়ে আর কী হবে। এখন যে এটাই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে কেউ ভাবেনি। আমরা সবাই চেষ্টা করছি। ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ মিলেনা এমন অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে এনআইডি মহাপরিচালকে একেএম হুমায়ুন কবীর বলেন,এই সংখ্যাটি নগন্য।

তাছড়া আমরা এর আগে যখন আঙ্গুলের ছাপ নিয়েছি তখন ৪ আঙ্গুলের ছাপ নিয়েছিলাম।বর্তমানে আমরা ১০ আঙ্গুলের ছাপ এবং আইরিশ নিয়েছি।কেনো আঙ্গুলের ছাপ মিলছেনা? আপনাদেরকে ছোট করে অবহিত করতে চাই গত দুই বছর কোভিডের কারণে আমরা এরকম ( হ্যান্ড স্যানিটাইজার) যখন যেখানে যাচ্ছি ব্যবহার করেছি।

এতে হয় কি আমাদের হাতের রেখাগুলো মিশে যায়। সেটার আমাদের ১০ আঙ্গুলের ছাপ যখন হয়েছে তখন আর এই সমস্যা হয়নি। যদি কারো এরকম সমস্যা হয় তাহলে আপনি নিকটস্থ নির্বাচন অফিসে যেয়ে আবারও আপনি ফিঙ্গার দিতে পারেন।আমরা আইরিশ নিয়েছি কিন্তু এখনো আমরা এটা সার্ভারে আপ দেয়নি জানা যায়, বর্তমানে কমবেশি তিন লাখের মতো এনআইডি সংশোধনের আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পন্ন করার জন্যই মাঠপর্যায়ে নতুন করে আবার নির্দেশনা দিলো কমিশন।

ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর থেকে এনআইডি সেবা ফ্রি ছিল। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে হারানো এনআইডি তোলা ও সংশোধন সেবায় ফি নেওয়া শুরু করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ গত ২ মার্চ ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন ভোটার রয়েছে।

এরমধ্যে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন পুরুষ, ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন নারী এবং ৪৫৪ জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৯-২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারতের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: