আরিফ জাওয়াদ

ঢাবি প্রতিনিধি

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বই বিনিময় উৎসবের মাধ্যমে পলান সরকারকে স্মরণ

                       
প্রকাশিত: ১১:৫৫ অপরাহ্ণ, ১ আগস্ট ২০২২

বই বিনিময়ের মাধ্যমে রাজধানীর জাতীয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্মরণ করা হয়েছে বইয়ের ফেরিওয়ালা খ্যাত পলান সরকারকে। এসময় উৎসবে আগতরা একে অন্যকে সঙ্গে নিয়ে আসা বই বিনিময় করেন।

সোমবার (১ আগস্ট) “মেঘের ধাক্কা”-র আয়োজনে ওই বই বিনিময় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বই বিনিময়ে উৎসবের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মেঘের ধাক্কার পরিচালক জহির রায়হান বলেন- বর্তমান সময়ে আমাদের যে সামাজিক অবক্ষয়, নীতি নৈতিকতার পঁচন, এই সমস্ত কিছুর হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করতে পারে বই। পলান সরকার সেই কাজটি আজীবন করে গেছেন। পলান সরকার এমন একজন ব্যক্তি, যিনি তাঁর জীবনের সমস্ত সহায় সম্বল বিকিয়ে দিয়ে নিজের জীবনটা শিক্ষার জন্য উৎসর্গ করেছেন।

এমন আয়োজনে পলান সরকারের পুত্র হায়দার আলী সরকার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আব্বা সবার মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে মানুষের মাঝে বই বিলি করতেন। শিক্ষার্থীদের বই পড়ার বিষয়ে অনেক উৎসাহ দিতেন। আব্বার ডায়াবেটিস ধরা পড়লে তখন থেকে তিনি হেঁটে হেঁটে বই বিলি বিনিময় করতে লাগলেন।

তিনি আরো বলেন, বই পড়ব চাকরির জন্য না, বই পড়ার অনুরোধ জানায় বাস্তবকে জানার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নের অনুরোধ জানায়। আমাদের সমাজটা অনেক পঁচন ধরেছে। যারা এ সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাঁদের দিকে দৃষ্টি দিলে হয়তো দেশটা অনেক এগিয়ে যাবে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, পড়াশোনা পলান সরকার বেশিদূর করতে পারে নি। তবে তিনি পড়াশোনার মর্মটি বুঝতে পেরেছিলেন। একটি সমাজকে যদি আলোকিত করতে হয়, মানুষকে যদি সত্য সুন্দরের পথে তৈরি করতে হয়, তাহলে পাঠ্যাভাসের কোন বিকল্প নাই। বই হল জ্ঞানের আঁধার। যুগের পর যুগ ধরে জ্ঞানী, মনীষী, বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদদের ভাবনা গ্রন্থে লিপি বদ্ধ আছে। যত বেশি পড়তে পারব তত বেশি আলোকিত হতে পারব। সেই আলোর ছিটে-ফোঁটাও যদি সমাজে পড়ে, সমাজ একটু হলেও পরিবর্তন হবে।

৯০ বছর বয়সেও তিনি প্রতিদিন দশ-বারো কিলোমিটার পায়ে হেঁটে মানুষের হাতে বিনামূল্যে বই পৌঁছে দিয়েছেন। আজ এই সময়ে যখন শিক্ষকের গলায় জুতার মালা দেওয়া হচ্ছে, ছাত্রের হাতে শিক্ষক খুন হচ্ছে, ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষের ঘর বাড়ি পোড়ানো হচ্ছে তখন বুঝতে হবে আমাদের সমাজের পঁচন কোন মাত্রায় গিয়ে পৌঁছেছে। তাই এই সময়ে, এই দেশে একজন পলান সরকার খুবই জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে, বলে জানান আগতরা।

উৎসবে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন নারী, পুরুষ, কিশোর, কিশোরী বই হাতে নিয়ে শহিদ মিনারে উপস্থিত হয়। অনেকেই তাদের শিশু সন্তানকে সঙ্গে করে আনেন। আলোচনা শেষে শহিদ মিনার চত্ত্বরে সবাই জড়ো হয়ে একে অন্যের সাথে তাদের নিজ নিজ বইটি বিনিময় করেন।

কে এই পলান সরকার: গ্রামে গ্রামে ঘুরে ছোট-বড় সবার দোরগোড়ায় বই হাতে পৌঁছে যেতেন পলান সরকার। নিজের টাকায় বই কিনে পাঠকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বই পড়ার একটি আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য পলান সরকার ২০১১ সালে একুশে পদক পান।

১৯২১ সালে জন্ম পলান সরকারের আসল নাম হারেজ উদ্দিন। তবে পলান সরকার নামেই তাঁকে চেনে দশগ্রামের মানুষ। জন্মের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় তাঁর বাবা মারা যান। টাকা-পয়সার টানাটানির কারণে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয় তাঁকে। তবে নিজের চেষ্টাতেই চালিয়ে যান পড়ালেখা। স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন পলান সরকার। প্রতিবছর স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যারা ১ থেকে ১০-এর মধ্যে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ার পর একটি করে বই উপহার দিতেন বই পাগল এ মানুষটি।

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার নূরপুর মালঞ্চী গ্রামে জন্ম নেয়া পলান সরকার ২০১৯ সালের ১ মার্চ না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।

শাকিল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


পাঠকের মন্তব্য:

সর্বশেষ

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

ভিন্ন স্বাধের খবর পড়ুন

বর্তমানে জাতীয় সংসদ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, অপরাধ, সচিবালয়, আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, খেলাধুলা, বিনোদনসহ প্রায় সব গুরুত্ত্বপূর্ণ বিটেই রয়েছে একঝাঁক তরুণ সাংবাদিক। এছাড়া সারাদেশে বিডি২৪লাইভ ডটকম’র রয়েছে প্রতিনিধি।

লাইফ স্টাইল

নিবন্ধন নং- ৩২

© স্বত্ব বিডি২৪লাইভ মিডিয়া (প্রাঃ) লিঃ
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭

ফোন: ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০, ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
ইমেইল: [email protected]