বাস বন্ধের চাপ পড়ছে ট্রেনে

প্রকাশিত: ০৬ আগষ্ট ২০২২, ০৮:৪৯ পিএম

জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে যাত্রিরা ভোগান্তির শিকার হয়ে বিকল্প পথ ট্রেনে চড়ে নিজ গন্তব্যে পৌছাচ্ছেন। এতে করে উপচে পড়া ভির দেখা গেছে ট্রেনে। শনিবার (৬ আগস্ট) বিকেলে বগুড়া শহরের রেল স্টেশনে যাত্রীদের সাথে কথা বলে এ পরিস্থিতি জানা যায়। রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায় প্রায় দুই শতাধিক যাত্রী দোলনচাঁপা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। মোর্শেদা বেগম নামে অপেক্ষারত এক যাত্রীর সঙ্গে আলাপ হয়। তিনি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বাসিন্দা। যাবেন নাটোরে বাবার বাড়ি। সরাসরি বাস না পাওয়ায় বগুড়ার চারমাথায় আসেন। কিন্তু এখানেও বাস পাননি তিনি।

মোর্শেদা জানান, নাটোরের বাস না পেয়ে ভাবলাম সান্তাহারে যাবো। সেখান থেকে ট্রেনে নাটোরে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সান্তাহারের বাসও পাইনি। পরে বগুড়া রেল স্টেশনে এসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি। এ সময় তিনি বলেন, জানি সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে দাম বাড়ার কারণে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের এই ভোগান্তির কোনো মানেই হয় না। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এভাবে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যেতে হচ্ছে। তাও কখন নাটোরে পৌঁছাবো ঠিক নেই। নওগাঁ থেকে ট্রেনে এসেছেন এনজিও কর্মকর্তা শাহ আলম। তিনি বলেন, আমার নিয়মিত আসতে বগুড়া আসতে হয়। রাতে তেলের দাম বৃদ্ধি খবর পেয়ে ভেবেছিলাম বাসভাড়া বাড়বে। কিন্তু সকালে এসে দেখি বাস চলাচলই বন্ধ রেখেছে চালকেরা। পরে বাধ্য হয়ে ট্রেনে এসেছি। ট্রেনের ভাড়া কম। কিন্তু আমার চাকরির সময়ের সঙ্গে এর সময়সূচি মেলে না।

নওগাঁ থেকে একই কারণে ট্রেনে এসেছেন মিলন রহমান নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি জানান, বাস না পাওয়ায় ট্রেনে বগুড়া আসলাম। কিন্তু ট্রেনে প্রচুর ভিড়। ঠিক মতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি। এর আগে ট্রেনে কখনও এমন ভিড় দেখিনি।

বগুড়া রেল স্টেশনে এমন অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা হয়, যারা বাস না পেয়ে ট্রেনে যাতায়াতের জন্য এসেছেন। তাদের ক্ষোভ, সরকারের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত মানুষের সুবিধার্থে। ভোগান্তি বাড়ার জন্য নয়। যাত্রীর চাপের বিষয়টি নজরে এসেছে বগুড়া রেল স্টেশন কর্তৃপক্ষের। তবে তারা জানিয়েছে বগুড়ায় সহকারী স্টেশন মাস্টার পদে নিয়োগ পরীক্ষা চলছে আজ। এ কারণেও আজকের লোকসমাগম বেশি বলে জানিয়েছেন তারা।

বগুড়া রেল স্টেশন জানায়, জেলার ওপর দিয়ে সরকারিভাবে আন্তঃনগর, দোলনচাপা, করতোয়া, লালমনি এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস যাতায়াত করে। আর বেসরকারিভাবে আসা-যাওয়া পদ্মরাগ ও বগুড়া মেইল। এ ছাড়াও আরও দুটি লোকাল ট্রেনও যাতায়াত করে এই রুটে। এই কয়েকটি ট্রেন সার্ভিসের প্রতিদিন গড়ে অন্তত এক হাজার ৩০০ যাত্রী যাতায়াত করেন।

এসব তথ্য জানিয়েছেন সহকারী স্টেশন মাস্টার আলামিন। তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার বগুড়া রেল স্টেশনের মোট যাত্রী হয়েছিল এক হাজার ৪২৬ জন। আগের দিন বৃহস্পতিবার ছিল এক হাজার ৩৪২ জন। আজ এখনও যাত্রীর পরিসংখ্যান নেয়া হয়নি। রাতে জানা যাবে।

আলামিন বলেন, আজকে স্টেশনের জনাসমাগমের চাপ বেশি। বাস না পেয়ে এখানে যাত্রী বাড়তে পারে। কিন্তু আজকের কারণ একটু আলাদা। সহকারী স্টেশন মাস্টারের পরীক্ষা হচ্ছে বগুড়ায়। যার কারণে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসেছে। ফলে তেল বৃদ্ধির কারণে যাত্রীর চাপ আলাদা করে বোঝা যাচ্ছে না। তবে আগামীকাল থেকে প্রকৃত চাপ বোঝা যাবে। এদিকে শুক্রবার রাতে জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় সরকার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ১১৪ টাকায়। অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা।

এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হবে। এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটারের দাম ১৩০ টাকা। তেলের দাম বৃদ্ধির পরপর শনিবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার মতো বগুড়ায় বেশিরভাগ চালক বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। বাস চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাস, মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।

তিনি জানান, বগুড়া থেকে অধিকাংশ বাস বাইরে যাচ্ছে না। সকাল থেকেও ঢাকা-চট্টগ্রামের রুটের বাস বগুড়ায় আসেনি। আমরা কোনো ধর্মঘটের নির্দেশনা দেইনি। আবার চালকদের রাস্তায় বাস নামানোর জন্যও বলিনি। আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা নিজে থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিব না। কেন্দ্রের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি। তবে তেলের দাম এত বেশি হওয়া ঠিক হয়নি। সরকার দাম কিছুটা কমিয়ে ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করে দিবে এমনটা আশা করছি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: