সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে অছাত্র, বিবাহিত, চাকরিজীবী ও মামলার আসামি

প্রকাশিত: ১৩ আগষ্ট ২০২২, ০৪:০১ পিএম

অছাত্র, উচ্ছৃঙ্খল ও বিবাহিতদের দিয়ে হয়েছে ছাত্রলীগের থানা কমিটি। আর এই কমিটি পেয়েই ঢাক ঢোল পিটিয়ে উল্লাসে মেতে উঠতে দেখা গেছে, অছাত্র, বিবাহিত একাধিক নতুন পদধারী ছাত্রলীগ নেতাদের। সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগের কমিটি বিশ্লেষণ করেই উঠে এসেছে এসব তথ্য।

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগের সম্মেলন ছাড়াই প্রেসরিলিসের মাধ্যমে গত ৩০ সেপ্টেম্ভর ২০২০ সালে ১ বছরের জন্য সভাপতি তাওহিদুর রহমান বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক রিপন সরকারকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনিত করা হয়। প্রায় ২ বছর পর গত ৩১ জুলাই জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহমেদ স্বাক্ষরিত সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগের ১২৩ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তা নিয়েও শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা, চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে পদবি ত ও সচেতন মহলের মধ্যে।

পদবি তদের দাবি, বিবাহিত, অছাত্র, ছাত্রদল-ছাত্র শিবির, নৌকা প্রতিকের বিরুদ্ধে কাজ করা ব্যক্তি ও মামলার আসামিদের জায়গা দেয়া হয়েছে নতুন এ কমিটিতে এবং অনেক ত্যাগী কর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতীতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগবিরোধী অবস্থান ছিল এমন অনেকে পদ পেয়েছেন। ১২৩ সদস্যের এই কমিটিতে স্থান হয়নি বিগত কমিটির প্রথম সারির অন্তত প্রায় ২০ জন নেতার। এমনকি ছাত্রলীগের সভাপতি- সম্পাদক প্রার্থী ছিল। এমন বেশ কয়েকজন রয়েছেন যারা সরাসরি ছাত্রলীগের জেলা কমিটিতে পদ পেয়েছেন। আবার থানা কমিটিতেও রয়েছে অনেকেই। এর মধ্যে তিন জন ছাত্রলীগ নেতা কাঙ্খিত পদ ও সিনিয়র জুনিয়র না মানায় পদ ত্যাগ করেছেন সিমান্ত সরকার অর্থ বিষয়ক সম্পাদক, তারিকুল ইসলাম তামিম উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, নাজমুল হাসান নয়ন সদস্য পদ থেকে পদ ত্যাগ করেছেন।

পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের ১২৩ সদস্যের কমিটির অন্তত প্রায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সহ-সম্পাদক এক সময়ে ছাত্রদল নেতা ছিল। ছাত্রলীগ করার নির্ধারিত বয়স ২৯ পার হওয়ার পরও পদ পেয়েছেন এমন অন্তত পাঁচজন রয়েছেন। অন্তত ৬ জন বিবাহিত রয়েছেন কমিটিতে। চাকুরিজীবি ও ব্যবসায়ী আছেন ৭ জন এছাড়াও অছাত্র রয়েছে অন্তত ১০ জন।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিবার বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী ছিল এমন অন্তত ৫ জন রয়েছেন কমিটিতে। এদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সম্পাদক পদ পেয়েছেন অন্তত ৫ জন।

সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগে পদ পাওয়া একসময়ে ছাত্রদল নেতা রাজু আহম্মেদ বিবাহিত হয়েও ছাত্রলীগে নতুন কমিাটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ হাতিয়ে নিয়েছে। আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া হোসেন গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার বিরুদ্ধে নির্বাচন করে ও নৌকা প্রার্থীর নির্বাচনি অফিসে ককটেল হামলা করে তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা রয়েছে। সাবেক ছাত্রদল নেতা নাজমুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম ও আশিকুজ্জামান আশিক ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সহ-সম্পাদক পদ পেয়েছেন তাদের পরিবার বিএনপি রাজনীতির সাথে জরিত।

সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে ছাত্রত্ব না থাকলেও পদ পেয়েছেন যারা, হিমেল পোদ্দার সহ-সভাপতি, মোফাজ্জল হোসেন সুমন সহ- সভাপতি, রাশিদুল ইসলাম সহ-সভাপতি, আল আমিন সহ-সভাপতি হোটেল ব্যবসায়ী, সুজন আহম্মেদ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মাদক ও ছিনতাই মামলার আসামি আল মামুন সমাজ পদ পেয়েছেন সেবাবিষয়ক সম্পাদক, আমিরুল ইসলাম উপ-পাঠাগার সম্পাদক, ইউনুস আলী নিরব ছাত্রত্ব না থাকলেও পেয়েছেন থানা ছাত্রলীগের উপ-সাংস্তৃতিক বিষয়ক সম্পাদক পদ।

সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পাওয়া বিবাহিত ও চাকুরীজিবী ব্যবসায়ী নেতারা হলো, রাসেল হাসান রাসু সদস্য, আলমগীর হোসেন সদস্য, সাব্বির তালুকদার সহ-সম্পাদক, আবু সুফিয়ান আকাশ উপ-সমাজ সেবা বিষয়ক সম্পাদক, আবু সায়েম সদস্য সে একটি মাদ্রাসার অফিস সহায়ক ও বিবাহিত, নাজমুল হুদা সহ-সভাপতি চাকুরীজিবী, আজগর আলী পলাশ বিবাহিত ও চাকুরীজিবী। সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের পদ পাওয়া এমন প্রায় ১০-১২ জন থানা ছাত্রলীগে একাধিক পদ-পদবি নিয়ে পদ দখল করে রয়েছে।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫-এর গ ধারা অনুযায়ী বিবাহিত ব্যক্তি ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাবেন না। গঠনতন্ত্রের ৫-এর গ ধারাকে লঙ্ঘন করে সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি তাওহিদুর রহমান বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক রিপন সরকার বিতর্কিতদের থানা কমিটিতে স্থান দেয়ায় অনেক ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরাই এটার নিন্দা জানাচ্ছে।

স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারাও বিষয়টিকে নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ রয়েছে অছাত্র, বিবাহিত, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীদের কমিটিতে আসার কোনো সুযোগ নেই। এদিকে গঠনতন্ত্র বিরোধী এসকল কাজেই লিপ্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি তাওহিদুর রহমান বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক রিপন সরকার। অনেকেই বলছে গোপন লেনদেনের মাধ্যমেই এমন সাংগঠনিক বিরোধী কাজ করছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জানান, এই কমিটিতে অনেকেই সরকার বিরোধি রয়েছে যারা এক সময় ছাত্রদল করতো, আবার অনেকেই বিবাহিত রয়েছে যা সংগঠন পরিপন্থী। এই কমিটিতে যারা প্রার্থী ছিল সভাপতি-সম্পাদক তাদেরও কমিটিতে রাখা হয়নি। এনিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ভাড়াটিয়ে দের দিয়ে এভাবে সংগঠন চলতে পারে না।

সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিপন সরকার সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্র মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন। পরে একাধিক বার মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেন নি।

সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি তাওহিদুর রহমান বাচ্চু এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি নন।

সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ্ বিন আহম্মেদ জানান, কমিটিতে থাকা কারোর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তা প্রামনিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা বলেন, আমরা সবাইকে চিনি না। গঠনন্ত্র বিরোধী কেউ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: