পাওনা টাকা চাওয়ায় কিশোর গ্যাং লিডারের হামলায় শিক্ষার্থীর অবস্থা আশংকাজনক

প্রকাশিত: ১৩ আগষ্ট ২০২২, ০৬:৫০ পিএম

কক্সবাজারের পেকুয়ায় পাওনা টাকা চাওয়ায় কিশোর গ্যাং লিডার তারাউল ইসলাম আইমনের সশস্ত্র হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ। শুক্রবার (১২ আগষ্ট) রাত ৯টার দিকে উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের মালেক পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।

আহত মামুনুর রশিদ (২২) বারবাকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের ছাত্র ও উজানটিয়া ইউনিয়নের মালেক পাড়া এলাকার মো. আলীর ছেলে। শনিবার দুপুরে আহত মামুন বাদি হয়ে থানায় এজাহার জমা দিয়েছেন। হামলাকারী কিশোর গ্যাং লিডার তারাউল ইসলাম আইমন (২০) উজানটিয়া ইউনিয়নের মালেক পাড়ার দিনমজুর রমিজ উদ্দিনের ছেলে।

এজাহারে আহত মামুন উল্লেখ করেন, তারাউল ইসলাম আইমন আমার প্রতিবেশী। কিশোর গ্যাং লিডার হিসেবে তার দাপট রয়েছে। ৩১ জুলাই সে আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার নেয়। কথা ছিল এ মাসের ৭ তারিখ ফেরত দিবে। নির্ধারিত দিন পার হয়ে যাওয়ার পরও টাকা না দেয়ায় প্রয়োজন বশত পাঁচ দিন পরে শুক্রবার রাতে টাকাটা খুঁজি। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই তার হাতে কাছে থাকা হাতুড়ি মাথায় আঘাত করে। মাথা ফেটে রক্ত বের হলে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। এরপর শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করতে থাকে। আমার শোর চিৎকারে পাড়ার লোকজন এগিয়ে এলে আইমান সরে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পেকুয়া হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার অবস্থা আশংকাজনক, তাকে যেকোন মুহূর্তে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করা হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তার ভাই শামিমুল ইসলাম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, তারাউল ইসলাম আইমন বিপদগামী উঠতি বয়সী কিছু ছেলেদের নিয়ে একটি গ্যাং তৈরী করে তার নেতৃত্বে উপকূলীয় এলাকায় ইয়াবা ব্যবসাসহ নানা ধরণের অপরাধ সংঘঠিত করছে প্রতিনিয়ত। উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার ছত্রছায়া থাকায় তার অত্যাচারের পরও গ্রামের মানুষগুলো কিছুই বলার সাহস পাই না। অতিষ্ঠ পরিবারগুলো ভয়ে দিনাতিপাত করছে।

গত ১ আগষ্ট উজানটিয়ায় চায়না নাগরিকদের উপর হামলা করে ট্রলার থেকে সরকারের মেগা প্রকল্পের মালামাল লুটের ঘটনায় আইমন সরাসরি জড়িত। তবে ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করে না কেউ। অপর একটি সূত্র জানায়, তারাউল ইসলাম আইমন পেশাদার কিশোর গ্যাং লিডার। তার বড় ভাই মোহাম্মদ আরকান ছাত্রদলের সক্রিয় ক্যাডার। ইতিপুর্বে চট্টগ্রামের সিএমপির হালিশহর থানা হতে ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট প্রেরিত বিসিআর (বেড ক্যারেক্টার রুল) Bad character Roll) মূলে পেকুয়া থানা হতে রিপোর্ট তলব করা হয়। এবং চলতি বছর ১৫ মার্চ তারিখে স্বারক নং-৯৪৪ মূলে তদন্ত পূর্বক তারাউল ইসলাম আইমন একজন খারাপ ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির তরুণ মর্মে লিখিত রিপোর্ট প্রদান করে পেকুয়া থানা।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সংঘর্ষে অভিযোগ স্বীকার করে তারাউল ইসলাম আইমন বলেন, টাকা পাচ্ছে সেটা ঠিক- তবে সংঘর্ষ টাকার জন্য নয়; রাজনীতি নিয়ে বাকবিতন্ডায় হয়েছে। তাকে (মামুনকে) হাসপাতালে নেয়ার পর তার স্বজন ও এলাকাবাসী মিলে আমার ঘরে হামলা করেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম মামাকে ফোন করে সহযোগিতা পেয়েছি বলে আমার রক্ষা হয়েছে।

এছাড়াও চট্টগ্রামের হালিশহরসহ আরো কয়েকটি থানা থেকে তার ব্যাপারে তদন্ত চেয়েছে স্বীকার করে আইমন বলেন, কেউ আমি খারাপ বলে সাক্ষ্য দেয়নি। কিন্তু পুলিশ কি রিপোর্ট দিয়েছে আমি জানি না। আমার নেতা কাশেম আংকেলের কথা চলি, এলাকার ছেলেদের নিয়ে থাকি বলে কিশোর গ্যাং লিডার বলে। এটা তেমন কিছু নয়। পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফরহাদ আলী জানান, ঘটনাটা শুনেছি- সকাল পর্যন্ত লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। দুপুর থেকে জেলা প্রশাসকের সাথে থাকায় এজাহার এসেছে কিনা সঠিক বলতে পারছি না। থানায় গিয়ে লিখিত কিছু পেলে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওসি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: