বিক্রি নয়, ছেলেকে দত্তক দিতে চেয়েছিলেন সোনালি চাকমা
গত বৃহস্পতিবার হাটের দিন খাগড়াছড়িতে সোনালি চাকমা নামে এক মা তার ৬ বছরের সন্তানকে বিক্রির জন্য বাজারে তুলেছেন এমন সংবাদ চাউর হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর তা নিয়ে খবর প্রকাশ হয় বেশকিছু সংবাদমাধ্যমে। যেখানে প্রচার হয়, অভাবের তাড়নায় একজন মা তার সন্তানকে কিভাবে বিক্রি করতে বাজারে তুলেছেন। এতে ফুটে উঠে মায়ের অসহায়ত্বের কথা। তবে এখানে একটি ভুল তথ্যের আড়ালে ডেকে যায় সত্য তথ্য। তা হলো বিক্রি নয়, মূলত দত্তক দিতেই মা ছেলেকে বাজারে এনেছিলেন। আর তা জানতে শনিবার বিকেলে সরজমিনে সোনালি চাকমার বাড়িতে যায় বিডি২৪লাইভের প্রতিবেদক।
সোনালি চাকমা এই প্রতিবেদককে জানান, 'তার শ্বশুর বাড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার দুদুকছড়া এলাকার চংলা আদাম এলাকায়। স্বামীর পূর্বের ঘরের সন্তানরা তাকে অত্যাচার করায় সে ৩ মাস আগে বাপের বাড়িতে চলে এসেছে। দ্বিতীয় সংসারে তার সুমন চাকমা ও পরান চাকমা নামে দুজন ছেলে সন্তান রয়েছে। তাদের একজন পেশায় গাড়ির চালক আরেকজন কৃষি কাজ করেন। কিন্তু কেউ মাকে ভরনপোষণের খরচ দেন না।' সোনালি চাকমারা ৭ ভাইবোন। ৩ ভাই ও ৪ বোনের সবার বড় সে। তার সব ভাই ও বোনেরা একসাথে একই গ্রামে বসবাস করেন। সবার ঘরই পাশাপাশি। বাবার বাড়িও এতো ছোট নয়। তবে এখানে তার থাকার জায়গা হয়েছে গোয়ালঘরে। মূলত গোয়ালঘরের মাঝে বেড়া দিয়ে একপাশে থাকেন সোনালি ও তার ছেলে আর অন্যপাশে থাকে গরু।
কথা হয় সোনালি চাকমা, তার সন্তান রামকৃষ্ণ চাকমা, সোনালি চাকমার মা এবং প্রতিবেশীদের সাথে। তাঁরা জানান, চাকমা সমাজে শিশু বিক্রির মতো জঘন্য ঘটনার কোনো নজির নেই। ঘটনাটি ভুলভাবে গণমাধ্যমে এসেছে।
সোনালি চাকমা জানান, 'রামকৃষ্ণ আমার চতুর্থ সংসারের ছেলে। আমি অসুস্থ তাই আমার কোন সংসারই বেশিদিন টিকেনি। এখন স্বামীর বাড়ি থেকে আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। খুবই কষ্টে আমার দিন কাটছে। আমি মানসিকভাবেও অনেক সমস্যায় আছি। প্রতিদিন আমাকে ঔষধ খেতে হয়। কিন্তু আমার কাছে কোন টাকা নেই। আমার সন্তানকেও আমি ঠিকমতো ভাত খাওয়াতে পারিনা। অনেকেই তো তার সন্তানকে দত্তক দেয়। তাই ছেলের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমিও ছেলেকে দত্তক দিতে চেয়েছিলাম।'
তিনি বলেন, 'আমি বৃহস্পতিবার আমার ছেলেকে নিয়ে প্রথমে খাগড়াছড়ি মাছ বাজারে গিয়ে ভিক্ষা করে ২৫০ টাকা দিয়ে আমার ঔষধ কিনি। আমার ঘরে পানি পড়ে তা মেরামত করতে হবে। কাপড় কিনবো, ঔষধ কিনবো, কিছু খাবো এজন্য টাকা দরকার। এজন্য যে আমার ছেলেকে দত্তক নিবে সে যেন আমাকে ১২ হাজার টাকা দেয়। আমি সেই শর্ত দিয়েছিলাম। একজন ৫ হাজার টাকা দিতে চাইলে আমি সেটা নেইনি।'
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউপির চেয়ারম্যান সুনীল চাকমা বলেন, 'আমার স্ত্রী রোজিনা চাকমা গত বৃহস্পতিবার সোনালি চাকমা ও তার সন্তান রামকৃষ্ণ চাকমাকে খাগড়াছড়ি মাছ বাজার থেকে উদ্ধার করে মধুপুর বাজারে নিয়ে আসেন এবং একটি রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেন। পথিমধ্যে সোনালি চাকমা একবার মৃগী রোগে আক্রান্ত হন। এরপর আমি ভাইবোনছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুজন চাকমার মাধ্যমে সোনালি চাকমা ও তার সন্তানকে আত্মীয় স্বজনের কাছে হস্তান্তর করি।'
ভাইবোনছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুজন চাকমা বলেন, 'আমাদের এখানে এরকম অসহায় মানুষ রয়েছে সেটা আমি জানতাম না। কেউ কখনো সেটা আমাকে বলেনি। উনিও আমাদের কাছে কখনো কোন সহযোগিতা চাননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উনার অসহায়ত্বের বিষয়টি আমি জানতে পেরে তার বাসায় গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি।'
সোনালি চাকমার এই অসহায়ত্বের সংবাদ পেয়ে শুক্রবার তার বাড়িতে যান পার্বত্য চট্টগ্রাম সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা। এসময় তিনি সোনালি চাকমার খোঁজখবর নিয়ে তাকে ৬ মাসের খাদ্যের ব্যবস্থা করে দেন এবং তাকে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও তার ছেলেকে পড়াশোনার জন্য সুব্যবস্থা করার আশ্বস্ত করেন।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: