কাগজে কলমে শিক্ষার্থী ৫১০, উপস্থিত ১৬ জন

প্রকাশিত: ১৮ আগষ্ট ২০২২, ১০:০৬ পিএম

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের বৈরাটী আলিম সিনিয়র মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় কমিটি নিয়ে দলাদলি, শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব ও বদলী, একাধিক মামলা, শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থী না আসায় বেহাল অবস্থা মাদ্রাসাটির। সুত্র জানায়, বৈরাটী গ্রামের আবদুর রউফসহ চার শিক্ষানুরাগী ১১০ শতাংশ জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন মাদ্রাসাটি। প্রথম দিকে ভাল চললেও ১৯৯৯ সালে মামলা জটিলতায় পড়ে মাদ্রাসাটি। ১৯৯৯, ২০১০, ২০১১ ও ২০১৬ সালে কমিটি গঠন,অধ্যক্ষ নিয়োগ, শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে হয়েছে ৫ থেকে ৬ টি মামলা রয়েছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, প্রতিষ্ঠানের জীর্ণদশা অবস্থার কারণে চুরি হয়ে যাচ্ছে নানা সামগ্রী। শিক্ষার্থী না থাকায় নতুন বইয়ের বান্ডিল শিক্ষক মিলনায়তনে পড়ে আছে, জমেছে ধুলা। এবতেদায়ি, দাখিল ও আলিম শাখা শিক্ষার্থী সংকটে ধুঁকছে। কাগজে কলমে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ৫১০ জন। তবে শনিবার (১৩ আগস্ট) উপস্থিত ছিল মাত্র ১৬ জন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে সাতজন এবং সপ্তম শ্রেণিতে ছিল চারজন। অন্যান্য ক্লাসে ৫ জন শিক্ষার্থী। তাদের পাঠদানের জন্য ছিল ৯ শিক্ষক।

সুত্র জানায়, ওই মাদ্রাসায় আলিম প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৩ জন। তবে, গত শনিবার উপস্থিত ছিলেন, মাত্র দু'জন সাদিয়া আক্তার বেলি ও আঙ্গুরা আক্তার। দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে পাওয়া গেল না কাউকে। আরেকটিতে একজন শিক্ষার্থী পাওয়া গেলেও ছিলেন না শিক্ষক। অন্য শ্রেণিকক্ষেও নেই কোন শিক্ষার্থী।

এবিষয়ে শিক্ষক ফাতেমাতুজ জোহুরা বলন, শিক্ষক সংকটের কারণেই প্রতিষ্ঠানের এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া, শিক্ষকদের দলাদলি, শিক্ষক বদলি, একাধিক মামলার কারণেই প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী শুন্য হয়ে পড়েছে। এদিকে, মাদ্রাসায় শিক্ষকের সংকট রয়েছে।

দশম শ্রেণীতে কাগজে কলমে ৪৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ওই দিন ক্লাসে গিয়ে নাফিজা আক্তার তাবাসসুম নামে এক শিক্ষার্থী ছিল। তার ভাষ্য ক্লাসে পাঁচজন ছিল। তবে বাকিরা চলে গেছেন। নবম শ্রেণিতে ৬৪ থাকলেও বাস্তবে কাউকে পাওয়া যায়নি। পাঠদানের সময় নিয়মিত নামও ডাকা হয় না। অষ্টম শ্রেণিতে উপস্থিত রুবাইয়া সুলতানা ঝুমা ও সুমাইয়া আক্তার জানায়, তারা তিনজন এলেও একজন চলে গেছে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মমতাজ বেগম বলেন, শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে না আসার কারণ জানা ও আসতে উদ্বুদ্ধ করার নির্দেশনা রয়েছে। তবে, শিক্ষকরা তা মানেন না।

জমিদাতা পরিবারের সদস্য এবতেদায়ি শাখার সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, অধ্যক্ষ নিয়োগের অনিয়ম নিয়ে আমি মামলা করেছি এবং অধ্যক্ষের উদাসীনতার কারণেই প্রতিষ্ঠানের এই দুরবস্থা বলেও দাবি করেন তিনি। ওই দিন প্রতিষ্ঠানে ১৬ জন শিক্ষার্থী ও ৯ জন শিক্ষক থাকার বিষয়টি স্বীকার করে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান বলেন, মামলা জটিলতা, করোনা ও নিজেদের দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থী কমেছে। শিক্ষক পেলে পরিস্থিতি উন্নতি হবে। এর চাইতে বেশি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করে উনার সাথে দেখা করার কথা বলে লাইন কেটে দেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব, নিয়োগ বানিজ্য, জমিদাতার সাথে দ্বন্দ্ব, কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ টি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি পরির্দশন করে মামলার বিষয় জানতে চাইলে তিনি চারটি মামলার কপি দেন। এছাড়া আরও মামলা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে। কমিটির বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে। কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজা জেসমনি গণমাধ্যমকে বলেন, ওই মাদ্রাসায় কমিটি না থাকার বিষয়টি জানার পর আবেদন করা হয়েছে। মাদ্রাসাটি পরিদর্শন করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। তাছাড়া, প্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: